প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাজ্য সফরে একদিকে যেমন বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তেমনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং প্রবাসী বাঙালিরা যেন দেশের উন্নয়নে অবদান রাখে সে জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি লন্ডনে বসে যে সমস্ত অপরাধীরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানারকম অপতৎপরতা চালাচ্ছে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বিশেষ করে লন্ডনে পলাতক অবস্থায় বিএনপি এবং জামাত এর কিছু কিছু নেতা যারা বিভিন্ন রকম সাইবার সন্ত্রাস করছে এবং সরকারের বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে তাদের কে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রথম আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে পাঁচ জন শীর্ষ দণ্ডিত ব্যক্তি ও চিহ্নিত অপরাধী কে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিক আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যুক্তরাজ্য সরকার যেনো এই আবেদনে সারা দেয় সে জন্য বরিস জনসন সরকারের সাথে বাংলাদেশ সরকার নিয়মিত যোগাযোগ করবে। বাংলাদেশ আশা করছে খুব শীগ্রই লন্ডন থেকে শীর্ষ ৫ দণ্ডিত কে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা সফল হবে। যাদের কে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছে,
১. তারেক জিয়া: তারেক জিয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত, আরেকটি দুর্নীতির মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত। তারেক জিয়া লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন, আর তার বাংলাদেশী পাসপোর্টও নবায়ন করা হয়নি। তারেক জিয়াই বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতার প্রধান হোতা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে সাইবার সন্ত্রাস চলছে তার নেতৃত্ব দিচ্ছে তারেক জিয়া। এছাড়াও লন্ডনে বাঙালি জনগণকে উস্কে দেওয়া, বিভ্রান্ত করতে তারেক জিয়াই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারেক জিয়াকে এর আগে আনার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই রেড অ্যালার্ট নামিয়ে ফেলে ইন্টারপোল।
এখন বাংলাদেশ সরকার তারেক জিয়াকে দেশে ফেরত পাওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাজ্যের কাছে আবেদন জানিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সাথে বৈঠকেও এই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছেন।
২. হারিছ চৌধুরী: হারিছ চৌধুরী ১১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত। পলাতক অবস্থায় প্রথমে তিনি ভারতে ছিলেন। তার পর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এখন তিনি লন্ডনে বসবাস করছেন। হারিছ চৌধুরী কীভাবে লন্ডনে থাকে তা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার বিস্ময় প্রকাশ করেছে। কারণ একাধিক দুর্নীতির মামলার তার মোট ১১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট প্রাপ্ত এই দণ্ডিত ব্যক্তিকেও ফেরত নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করছে।
৩. শহীদ উদ্দিন: শহীদুদ্দিন সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্তকৃত। এই শহীদ উদ্দিন লন্ডনে বসে সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে তার অনুপস্থিতিতে দুটি মামলায় তাকে দণ্ডিত ঘোষণা করেছে আদালত। এই সমস্ত মামলার কাগজপত্রসহ শহীদ উদ্দিনকে ফেরত দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যর কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
৪. দেলোয়ার: দেলোয়ারও একাধিক মামলায় দণ্ডিত এবং বাংলাদেশ বিরোধী অপতৎপরতা লন্ডনে চালাচ্ছে। বিভিন্ন মামলার দণ্ড এড়াতেই তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তর ব্রিটিশ সরকারকে ইতিমধ্যে জানিয়েছেন। আর এ জন্য তাকেও ফেরত আনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
৫. ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক: ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক লন্ডনে এবং আমেরিকায় থাকছেন, তবে তার মূল ঠিকানা লন্ডনে। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অপরাধে মামলা রয়েছে এবং এই মামলা এড়াতেই আব্দুর রাজ্জাক লন্ডনে অবস্থান করছেন এবং সেখানে তিনি নতুন একটি রাজনৈতিক দলও খুলেছেন, জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেছেন। কিন্তু সরকার বিরোধী অপপ্রচারের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হলেন এই স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী।
এই রকম পাঁচ জনের তালিকা পাওয়া গেছে। তবে সরকারের সূত্রগুলো বলছে আরো কিছু দণ্ডিত ব্যক্তি লন্ডনে রয়েছে। তাদেরকেও চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং দেশে ফেরত নেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন জানানো হবে।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার