khaleda_mirja_tareq

যে কারণে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বিএনপি

টানা ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। বিভিন্ন সময় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে কিন্তু এই সমস্ত হুমকি এবং ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা সবই যেন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। বিএনপির যে জনসমর্থন নেই এমনটি নয়।

আওয়ামী লীগ বিরোধী একটি বিপুল জনসমর্থন বিএনপির পক্ষে সবসময় ছিল, আছে। এমনকি এখন যে নেতৃত্বের ব্যর্থতা এবং দিকভ্রান্ত একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির উপস্থিতির পরও এর একটি বিপুল সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে। কিন্তু তারপরও বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না কেন, এটি এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি বড় প্রশ্ন।

বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষীরা শুধু নয়, বিএনপির তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছে যে, বিএনপি বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে যেভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠা উচিত ছিল, যেভাবে সরকারকে চাপ দেয়ার প্রয়োজন ছিল সেটির কোন কিছুই করতে পারছে না। আর এটির কারণ হিসেবে তারা মনে করছে যে, সঠিক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ক্ষমতা ছেড়ে দেয় বিএনপি। তারপরও ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত একরকম পরোক্ষভাবে ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের পর বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যায় এবং তারপর থেকে এই দলটি একের পর এক ভুলের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে এবং কিছুতেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। বিএনপির সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, মূলত পাঁচটি কারণে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

প্রথমত, ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত: একটি রাজনৈতিক দল ঘুরে দাঁড়াতে হলে সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর বিএনপি বারবার ভুল করছে এবং ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কর্মকাণ্ড যখন আওয়ামী লীগ শুরু করে তখন বিএনপি এ ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিল বরং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষেই অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন।

এটি বিএনপির রাজনৈতিক ভুল ছিল। যে কারণে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের জন্য বিএনপিকে যখন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তখন বিএনপি সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে। অথচ সেই নির্বাচনের আগে যে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছিল সবগুলোতেই বিএনপি জয়লাভ করেছিল।

কেন বিএনপি ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করল সেটি একটি বড় প্রশ্ন। বিএনপি যখন ২০১৮ সালের নির্বাচনে কোনো রকম দাবি-দাওয়া ছাড়াই অংশগ্রহণ করলো সেটিও তাদের একটি ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এরকম ভুলের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপি। আর সেজন্য বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বলে অনেকে মনে করেন।

দ্বিতীয়ত, নেতৃত্বের সংকট: বিএনপিতে ক্রমশ্য নেতৃত্বের সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। বেগম খালেদা জিয়া এখন কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নাই। আর অন্যদিকে বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা লন্ডনে পলাতক। তিনি জুমের মাধ্যমে বা অনলাইনে দল চালাচ্ছেন। একটি রাজনৈতিক দল কখনো এভাবে চলতে পারে না বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন। যার ফলে সাহসী নেতৃত্বের অভাবে বিএনপির একটি বড় ধরনের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আর এ কারণে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বলে মনে করছেন।

তৃতীয়ত, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব: একটি রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকে। তারা কি করবে না করবে সে সম্পর্কে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদি একটি রূপকল্প থাকে। কিন্তু বিএনপির এরকম কিছু নেই। বিএনপি একটি ইস্যুভিত্তিক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। তাদের কাজ হলো শুধু বক্তৃতা-বিবৃতি দেওয়া, অন্য কিছু নয়।

চতুর্থত, নেতৃবৃন্দের বিশ্বাসঘাতকতা: তৃণমূলের নেতারা মনে করেন যে, বিএনপিতে এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা রয়েছে যে কারণে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। বিএনপির নেতারা মনে করেন যে, এই দলের কিছু কিছু নেতা গোপনে সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ রাখছে এবং তারা সরকারকে নানারকম সুবিধা দিচ্ছে। আর এটি বিএনপির ঘুরে না দাঁড়ানোর পেছনে অন্যতম কারণ।

পঞ্চমত, বিএনপির জনবিচ্ছিন্নতা: ক্রমশ বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। জনগণের ইস্যু নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই, তারা শুধু আছে তাদের নিজস্ব দলীয় এজেন্ডা নিয়ে।

আর এ সমস্ত কারণেই, ১৫ বছরের ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এখনো ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে এবং এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে বিএনপি একটি শোচনীয় পরিণতির অপেক্ষা করছে বলেও অনেকে মনে করেন।

সূত্র: বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin