দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি উল্লসিত-আনন্দিত, তারা যেন আশার আলো দেখছে। আজ ৭ই নভেম্বর বিএনপির বিশেষ দিবস। এই দিবস উপলক্ষে বিএনপির তেমন কোন কর্মসূচি ছিল না। জিয়ার কবর জিয়ারত আর টুকটাক কিছু বক্তৃতা-বিবৃতি ছাড়া বিএনপি তেমন কোনো কর্মসূচি পালন করেনি।
যে দলটির একটি দিবসভিত্তিক কর্মসূচি পালনেরও অবস্থা নেই সেই রাজনৈতিক দলটি হঠাৎ কেন উল্লসিত এবং আশাবাদী তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে বিএনপি নেতারা খোলাখুলি ভাবে বলছে যে, বিএনপিকে কিছু করতে হবেনা, সরকারই বিএনপিকে আশা দেখাচ্ছে, সরকারের কারণেই বিএনপি নতুন করে জীবন ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
বিএনপির একজন নেতা বলছেন যে, সরকারের ব্যর্থতাই বিএনপির সাফল্য। বিএনপিকে কিছুই করতে হবে, বিএনপিকে শুধু চুপচাপ বসে থাকতে হবে। সরকার এবং শাসক দল যে কর্মকাণ্ডগুলো করছে সেই কর্মকাণ্ডই বিএনপিকে পুনর্জন্ম দিবে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কারণে বিএনপির মধ্যে আশা এবং উল্লাস দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা: সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা বিএনপিকে যথেষ্ট উল্লসিত এবং আনন্দিত করেছে। কারণ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা ঐতিহাসিকভাবেই আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক। নেতারা মনে করছেন যে, এবার দুর্গা পূজায় যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেই ঘটনাগুলো আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংকে নাড়া নিয়েছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এই ঘটনাগুলোর ব্যাপারে আওয়ামী লীগকেই দায়ী করতে চাইছে এবং সরকার সংখ্যালঘুদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠছে। এ কারণে সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের একটি বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে বলে বিএনপি মনে করছে। আর সেজন্য তারা আশাবাদী।
২. ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি: যেকোনো সময় ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল কিংবা কেরোসিনের দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু এবার এই বৃদ্ধিটাকে নিয়ে যেন একটা হুলুস্থুল তৈরি করা হচ্ছে এবং এই হুলুস্থুলকে বিএনপি তাদের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে যে অচল অবস্থা, ধর্মঘট চলছে এটি যদি আরো কিছুদিন চলে তাহলে বিএনপির জন্য তা যথেষ্ট আনন্দের কারণ হবে। কারণ, এর ফলে জনসমর্থন সরকারের বিপক্ষে চলে যাবে।
৩. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: বিএনপির উল্লাসের একটি বড় কারণ হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। গত কিছুদিন ধরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনগণের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের দলের পক্ষ থেকে যে খুব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এমনটিও নয়। আর এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যদি অব্যাহত থাকে সেটিও বিএনপির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।
৪. আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল: কিছুদিন ধরেই স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে খুনোখুনি, মারামারি হচ্ছে। এটি বিএনপির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিএনপির অনেক নেতারা। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামী লীগই হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের এই সহিংসতার ফসল বিএনপির ঘরে যাবে বলেও বিএনপি মনে করছে।
৫. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাগামহীন প্রচারণাটা এখন বিএনপির একচেটিয়া অধিকারের পর্যায়ে চলে গেছে। প্রতিবাদহীনভাবে বিএনপি বিদেশ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই প্রচার করছে এবং এটি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি একটি ইতিবাচক ফলাফল হবে বলে বিএনপির নেতারা মনে করছেন।
আর এই সমস্ত কারণেই বিএনপি মনে করছে যে, তাদের কোন আন্দোলন করতে হবে না, সংগ্রাম করতে হবে না, সাংগঠনিক দিকেও মনোযোগ দিতে হবে না। আওয়ামী লীগের ব্যর্থতাই তাদের সাফল্য। সেই আশায় বিএনপি অনেকটাই উল্লসিত হয়ে আছে বলেই মনে করছেন বিএনপির নেতারা।