সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের রাজনীতিতে বাংলাদেশ একটা বহুল আলোচিত বিষয়ে পরিনত হয়েছে । প্রায় প্রতিদিনই ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কথা বলছেন। তৃণমূলের নেত্রী মহুয়া মৈত্র যেমন বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলছেন।
যেভাবে রাহুল গান্ধী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে মোদিকে খোঁটা দিচ্ছেন, ঠিক তেমনিভাবে বিজেপির অনেক নেতা বাংলাদেশ বিরোধী উগ্রো কথা-বার্তা বলছেন। এই সমস্ত কথা-বার্তা দিয়ে তারা এক ধরণের বাংলাদেশ বিরোধিতাকে উষ্কে দিচ্ছেন ।
সাম্প্রতিক সময়ে বিহারের নির্বাচন নিয়ে বিজেপির একজন নেতার উষ্কানিমূলোক বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই ভারতের বিহারে বিজেপির গুত্বপূর্ণ এক নেতা আজ বলেছেন যে, বাংলাদেশে থেকে যেন একজনও ভারতে আসতে না পারে সে জন্য তারা সদা সতর্ক থাকবেন। এ ধরণের বক্তব্যের উদ্দেশ্য কী এবং কেন এ ধরণে বক্তব্য এখন রাখা হচ্ছে এ নিয়ে কুটনৈতিক মহলে নানা আলাপ-আলোচনা চলছে।
একাধিক কূটনৈতিক মনে করছেন যে সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপি নেতাদের বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য ও অবস্থানের পেছনে সুস্পষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। এ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:-
১. বিহারের নির্বাচন: বিজেপির জন্য বিহারের নির্বাচন এক অগ্নি পরীক্ষা । এ নির্বাচনকে বিজেপি দেখছে বিজেপির প্রতি সমর্থনের ম্যান্ডেট হিসেবে। এমনিতেই অর্থনৈতিক সংকট এবং করোনা মোকাবেলার ব্যার্থতা নিয়ে সমালোচনার মুখে বিজেপির সরকার। এরমধ্যে এই নির্বাচনে যদি বিজেপি পরাজিত হয় তাহলে তাদের অস্তিত্বের এক কঠিন পরীক্ষায় তারা ফেল করবেন বলেও মনে করছেন তাদের নেতৃবৃন্দ।
বিজেপি বিহার নির্বাচনে প্রধান ইস্যু করেছেন বহিরাগত এবং তারা বলছেন যে, বিহারে প্রচুর বাংলাদেশি অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। এই নির্বাচনে যদি তারা জয়ী হতে পারেন, তাহলে এই সমস্ত বাংলাদেশিদেরকে খেদিয়ে দেওয়া হবে। বিহেরে এই অবৈধ ইস্যুকেই বিজেপি রাজনীতিতে নির্বাচনি বিজয়ের প্রধান ইস্যু বানানোর চেষ্টা করেছে।
এই চেষ্টা কতটা সফল হবে তা বুঝাযাবে নির্বাচনের মাধ্যমে । তবে বিহার নির্বাচন শুধু নয়, আরও বেশ কিছু কারণে বিজেপি নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উষ্কানিমূলক বক্তব্য রাখছেন বলে মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকর।
২. বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: বিজেপির উষ্কানির সবচেয়ে কারণ হলো সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক। চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প চলছে । এটি নিয়ে বিজেপি সরকার কিছুটা উদ্বিগ্নও বটে।
বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে চীনের অর্থায়নে উন্নয়ন তৎপরতার দিকে তাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। এটি নিয়ে তারা তাদের উৎকণ্ঠা, অস্বস্তি এবং আপত্তি খোলামেলাভাবেই প্রকাশ করছেন।
৩. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন: বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে রীতিমত মাতন চলছে। কিভাবে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ছে বিজেপি সরকার।
তারা মনে করছে যে ভারত অর্থনীতিতে ভালো করছে না এটার চেয়েও অসহনীয় হলো যে বাংলাদেশের চেয়ে তারা পিছিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি কিছুতেই ভারতের কট্টরপন্থী নাগরিকরা মেনে নিতে পারছেন না। আর কট্টরপন্থীরাই হলো বিজেপির ভোট ব্যাংক।
সে কারণেই কট্টরপন্থীদের ভোট ব্যাংক ধরে রাখার জন্য এ ধরণের উষ্কানি মূলক বক্তব্য তারা রাখছেন। তবে বিজেপির অনেক সংবেদনশীল নেতা মনে করছেন যে, এ ধরনের বক্তব্য রাখা দুই দেশের যে ইতিবাচক সম্পর্কের আবহ তৈরি হয়েছিল সেই আবহের ওপর আঘাত হানবে। এই ধরণের বক্তব্য সরকারের বক্তব্য নয় বলেই কোনো কোনো নেতা মন্তব্য করছেন।
বাংলা ইনসাইডার