bb41894541_share

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংসদে সরব বিএনপির এমপিরা

দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির দুই সংসদ সদস্য। এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি ন্যায়বিচার দাবি করেছেন তারা। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিও দাবি জানিয়েছেন এই দুই সংসদ সদস্য।

সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ও রুমিন ফারহানা এই দাবি জানান।

প্রথমে হারুনুর রশীদ তার নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ দিয়ে জানান, এসব হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি গত বছর ২৪ এপ্রিল জাতীয় সংসদে এমপি হিসেবে শপথ নেই। তার মাত্র দুদিন পর ৩০ এপ্রিল আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রকাশ্যে আরেকটি বিচারবহির্ভূত দিনের বেলায় অমানবিকভাবে হত্যাকাণ্ড হয়।

একটি পেশাদারি প্রতিষ্ঠান বিকেল ৩টার সময় একজন সাধারণ নাগরিককে ধরে নিয়ে এসে তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং পুলিশি এজাহার দাখিল করে। এ ঘটনা ঘটে থানা থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে। সেই এজাহারে বলা হয়, পুলিশের ওপর বেপরোয়া আক্রমণ চালানো হয়েছে। কিন্তু অস্ত্র দেখানো হয়েছে হাতে তৈরি অস্ত্র।

স্পিকারকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এ ঘটনায় দুজন ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তাদের একজন আমাদের এলাকার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন তার বড় ভাই। অথচ ঘটনার দিন তারা সংসদে এসে সংসদ গ্যালারি থেকে আমাদের অধিবেশন দেখেছেন। সংসদে ঢুকতে হলে সবার অনুমতি নিতে হয়। এই সংসদের কাছে এ ধরনের ডকুমেন্টস আছে।

তাদের নামে আমি পাস ইস্যু করেছিলাম। ৩০ তারিখ তারা দর্শক গ্যালারি থেকে এই সংসদে উপস্থিত ছিল। তাদের সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিল উল্লেখ করে মামলার আসামি করা হয়েছে। এ ধরনের পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, উপর্যুপরি উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হচ্ছে এবং নাটক বানাচ্ছে।’

এমপি হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আমি যা বলছি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি। এগুলো ১০০ ভাগ সত্য। কিঞ্চিৎ পরিমাণ মিথ্যা নেই। আমাদের এলাকার এক ছাত্রকে ঢাকার শেওড়াপাড়া থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে এলাকায় ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। ঢাকা থেকে তুলে নেয়ার চারদিন পর তাকে ক্রসফায়ারে দেয়া হয়। এ ধরনের উপর্যুপরি ঘটনা ঘটেই চলছে। মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকাণ্ডের আজকে বিচার হচ্ছে। আদালত তাদের পরিবারের মামলা গ্রহণ করেছে তদন্তকাজ চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে আরও প্রায় তিন হাজারের অধিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, তারা কি বিচার পাবে না? তাদের পাশে রাষ্ট্র দাঁড়াবে না? তাদের কি রাষ্ট্র এই অধিকার দেবে না?’

এমপি হারুনের বক্তব্য শেষে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আইন অনুযায়ী ব্যতীত কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার কারও নেই। সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে আইন অনুযায়ী সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এই সরকার ২০১৩ একটি আইন করেছিল হেফাজতে নির্যাতন মৃত্যু নিবারণ আইন। আনফরচুনেটলি এই আইনটি করা হলেও, চমৎকার সব ধারা থাকা সত্ত্বেও এই আইনে কিন্তু খুব বেশি মামলা হয়নি এবং গুটিকতক মামলা হয়েছে। সেই মামলাগুলো এখন কী অবস্থায় আছে, কতটুকু অগ্রগতি আছে, সে ব্যাপারে কিন্তু আমরা বেশিকিছু জানি না। শুধু কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখেছিলাম, একটি মামলা রায়ের কাছাকাছি গেছে এবং ডেট ফিক্সট হয়েছে। অথচ এই সাত বছরে অসংখ্য মানুষ পুলিশ হেফাজতে মারা গেছে। কিন্তু তাদের মামলাগুলোর কি হলো? কেন পরিবারগুলো মামলা করার সাহস পায় না? হলে কয়টি মামলা হয়? সেই সব মামলার কী অবস্থা তার কিছুই আমরা জানি না।’

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin