বিএনপিতে সরকারের এজেন্ট কারা?

আপাত দৃষ্টিতে তারা সরকারের ঘোরতর সমালোচক। সরকারের বিরুদ্ধে কথার ফুলঝুরি সাজান প্রতিদিন। সরকারকে উঠতে বসতে গালাগালিও করেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সরকারের সঙ্গে তাঁদের গোপন যোগাযোগ। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁরা কট্টর সমালোচক।

তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, কিন্তু তাঁরা গ্রেপ্তার হন না। এরকম কয়েকজন নেতার ভূমিকা নিয়ে বিএনপির মধ্যেই এখন চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তাঁদের বিএনপিতেই বলা হচ্ছে সরকারের এজেন্ট।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদের একটি অডিও টেপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বিএনপি নেতা যে ছাত্রদল নেতাকে টেলিফোনে ঢাকায় এসে রাস্তায় নামার পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু নির্দেশদাতা আমীর খসরুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। মামলা হবার পর কদিন আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।

এরপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সব তথ্য থাকার পরও তাঁরা খসরুর ব্যাপারে নমনীয়। আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী বলেছেন, ‘বিএনপিতে যে দুই একজনের সঙ্গে কথা বলা যায়, তাঁদের মধ্যে খসরু একজন।’ বিএনপির অনেক মনে করেন, ‘আমীর খসরুর সঙ্গে সরকারের গোপন আঁতাত আছে।’

সরকার আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে যেভাবে চাইবে খসরু সেভাবেই কাজ করবে বলেই আশঙ্কা বিএনপির একাংশের। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, চট্টগ্রামের রাজনীতিতে বিএনপির বিভক্তির জন্য খসরুকে আওয়ামী লীগের প্রয়োজন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। প্রতিদিনই গণমাধ্যমের সামনে সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। কিন্তু বিএনপির এই নেতার সঙ্গেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যোগাযোগের খবর পাওয়া গেছে। গত ২৪ আগস্ট শুক্রবার সকালে রিজভী বনানীতে হাতে গোনা কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে ঝটিকা মিছিলে বের হন।

এই মিছিলের আগে তিনি কয়েকজন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের সবুজ সংকেত নিয়েই রিজভী মিছিলে বের হন। গত ফেব্রুয়ারি থেকে রিজভীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। তিনি অফিসেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এটি দেখিয়ে কর্মী ও নেতাদের কাছে আলাদা আকর্ষণ আদায়ের চেষ্টা করছেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, তাঁর সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ রয়েছে। একাধিক উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

তাঁদের অনুমতি নিয়েই তিনি এ অবধি ৬ টি ঝটিকা মিছিল করেছেন। বিএনপির একজন নেতার ভাষ্য হলো, ‘বিএনপি কার্যালয়ে তো সারা দিনরাত পুলিশ প্রহরায় থাকে। সেখান থেকে রিজভী বের হন, মিছিল করেন আবার দলের কার্যালয়ে ফিরে আসেন। সরকারের সঙ্গে আঁতাত ছাড়া এটা কীভাবে সম্ভব?’ বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতার ধারণা, ‘রিজভীকে সরকার ব্যবহার করে।

রিজভীকে দিয়ে সরকার প্রমাণ করতে চায় যে বিরোধী দলের প্রতিবাদ করার পর্যাপ্ত সুযোগ বিদ্যমান আছে।’ বিএনপির অন্য একজন নেতা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত যদি সরকার বিএনপিকে বা বিএনপির একটি বড় অংশকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায়, তাহলে রিজভী হবে সরকারের ট্রাম্প কার্ড। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন নয় কিংবা খালেদার মুক্তি ছাড়া নির্বাচন নয়, এমন কথা বলে রিজভীকে সহজেই বিএনপির একটি অংশকে আলাদা করতে পারবেন।’

বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। ৭ মামলায় একদিনে জামিন পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। অন্য বিএনপি নেতারা বিদেশে যেতে চাইলে ইমিগ্রেশনের বাধায় পড়েন। কিন্তু মিন্টুর ঢাকা-ব্যাংকক ট্যুর চলে বিরামহীন। ব্যাংকক তাঁর ট্রানজিট। এখান থেকে কখনো যান লন্ডন, কখনো দিল্লি। সরকার সবই জানে। কিন্তু তাঁকে ছাড় দেয়। বিএনপিতে মিন্টুর ভূমিকা নিয়ে এখন আলোচনা হয় প্রকাশ্যেই, কোনো রাখঢাক ছাড়া। তাতে কি, আবদুল আউয়াল মিন্টু এখনো ক্ষমতাধর বিএনপিতে। সরকার তাঁকে বিএনপির ইনফরমার হিসেবে ব্যবহার করে বলেও গুঞ্জন আছে।

একাধিক সূত্র বলছে, সরকার যে বিএনপিকে নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়, তাঁর প্রধান কারণ এসব নেতারা। শুধু এই তিনজন নন, এরকম বেশকিছু নেতা আছেন বিএনপিতে যারা সরকারের ইশারায় চলেন। এরাই আগামী নির্বাচনে বিএনপির জন্য হুমকি, এমন কথা আলোচিত হচ্ছে বিএনপিতেই।

বাংলা ইনসাইডার/

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin