আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপিকে নিয়ে সরকার খুব বেকায়দায় আছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিলে বলে, সরকার বাধ্য হয়ে অনুমতি দিয়েছে। আবার অনুমতি না দিলে বলে, দেশে গণতন্ত্র নেই। এখন আপনারাই বলেন, বিএনপিকে নিয়ে আমরা কী করি?’
আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে কি না, মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারের ব্যাপার। তারা বিএনপির সমাবেশকে নিরাপদ মনে করলে অনুমতি দেবে। নিরাপদ মনে না করলে অনুমতি দেবে না। এই সমাবেশের অনুমতি দেওয়া না-দেওয়া নিয়ে আমরা বেকায়দায় আছি।’
এ সময় বিএনপির আন্দোলনের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারকে বাধ্য করতে গত নয় বছরে নয় মিনিটের জন্যও বিএনপি কিছু করে দেখাতে পারেনি। তাদের শাসনামলে আওয়ামী লীগের এমনও দিন গেছে যে দলের কার্যালয়ের সামনে পর্যন্ত দাঁড়ানো যায়নি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ এখন ইলেকশনের মুডে আছে, আন্দোলনের মুডে নয়।’ তিনি বলেন, ভোট পেতে হলে উন্নয়ন দেখাতে হয়, কাজ দেখাতে হয়। বিএনপির এমন কোনো কাজ নেই, যা নিয়ে মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাবে।
এ সময় সাংবাদিকেরা রাস্তাঘাটের বেহাল দশার বিষয়ে সেতুমন্ত্রীর কাছে জানতে চান। তিনি বলেন, ‘রাস্তাঘাটের অবস্থা বেহাল নয়। তিন-চার মাসের মধ্যেই সংস্কারকাজ শেষ হবে। কাজ শেষ হওয়ার পর মানুষ সুখে-শান্তিতে ও আরামে চলাফেরা করতে পারবে।’
খালেদাকে হাজির না করায় কারা কর্তৃপক্ষকে শোকজ কুমিল্লা আদালতের
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আগামী ৮ এপ্রিল কুমিল্লার আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির না করায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। বুধবার সকাল ও বিকেলে দুই দফা শুনানি শেষে কুমিল্লার আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কাজী আরাফাত উদ্দিন এসব নির্দেশ দেন।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে আটজনকে হত্যার মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানি ছিল আজ বুধবার। কিন্তু আজ তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়নি।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টায় ও তিনটায় দুই দফায় কুমিল্লার আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কাজী আরাফাত উদ্দিনের আদালতে মামলার জামিনের বিষয় নিয়ে শুনানি হয়। এতে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো নথিপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে আদালতে কেন হাজির করা হয়নি, সে জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে এর জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়। এ ছাড়া আগামী ৮ এপ্রিল জামিনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।’
এর আগে ১৪ মার্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন ও আদালতে হাজিরা পরোয়ানা (প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট) জারির নির্দেশ বাতিল চেয়ে আবেদন নিয়ে আদালত কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে তাঁর (খালেদা) উপস্থিতিতেই আজ (২৮ মার্চ) শুনানির দিন ধার্য রেখেছিলেন। কুমিল্লার আমলি আদালত-৫-এর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মুস্তাইন বিল্লাহ ওই আদেশ দেন।
কুমিল্লার কোর্ট পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি বলেন, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে আগুনে পুড়িয়ে আটজন যাত্রী নিহত হন। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ১২ মার্চ গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর কুমিল্লার আদালতে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আবেদন করেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন বিকেলে আদালতের বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেন। একই সঙ্গে ২৮ মার্চ তাঁকে কুমিল্লার আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। প্রোডাকশন ওয়ারেন্টের কপি বিকেল সাড়ে তিনটায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় আটজন হত্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৪৭ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ২৪ এপ্রিলের মধ্যে তামিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। ওই আদালতের বিচারক কুমিল্লা অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জয়নব বেগম ওই আদেশ দেন।
চৌদ্দগ্রাম থানায় করা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৭৭ জন আসামির মধ্যে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। জামিনে আছেন ২৯ জন এবং জেলহাজতে রয়েছেন একজন।