bnp-flag

নতুন ফর্মুলা নয় বিএনপির দাবি নির্দলীয় সরকার

নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের নতুন আর কোনো ফর্মুলা না দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতেই সোচ্চার হচ্ছে বিএনপি। দলটি বছরখানেক ধরে সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেয়ার যে পরিকল্পনা করে আসছিল, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের প্রেক্ষাপটে সেই রূপরেখা তুলে ধরার আর কোনো প্রয়োজনীয়তা তারা দেখছে না। দলটির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, নতুন কোনো ফর্মুলা দিয়ে তা আদায়ে কোনো প্রান্তিক অবস্থানে তারা চলে যেতে চান না। তারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা-সমঝোতার ওপরই মূলত গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেটি নিশ্চিত না হলে দলীয় সরকারের অধীনে অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষপাতী নয় দলটি।

ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পর্যবেক্ষণে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। ইসির নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ থাকায় বর্তমান ব্যবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মতামত দেয়া হয়েছে ওই রায়ে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় নয়া দিগন্তকে বলেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারই আমাদের দাবি। এ ক্ষেত্রে নতুন করে আর কোনো ফর্মুলার দরকার নেই। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত রোববারের সমাবেশ থেকে সেটিই স্পষ্ট করেছেন। তিনি এ-ও বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।

নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এর আগে ২০১৩ সালে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী-নির্বাচনকালীন কোনো সরকারের ব্যবস্থা নেই।

আত্মবিশ্বাসী বিএনপি : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফরে ব্যাপক জনসমাগমের পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেয়ায় দলটির নেতাকর্মীরা এখন বেশ চাঙ্গা। জনতার স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দেখে কঠোর কর্মসূচিতে না গিয়ে জনগণকে সাথে নিয়েই নির্বাচনকেন্দ্রিক দাবি আদায় করতে চায় দলটি। এ কারণে শিগগিরই ঢাকার বাইরে খালেদা জিয়ার আরো কয়েকটি সমাবেশের কর্মসূচি গ্রহণের চিন্তাভাবনা রয়েছে।

২০১৪ ও ১৫ সালে দুই দফা আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের তেমন কোনো সুযোগ পায়নি। প্রতিটি সভা-সমাবেশ ছিল বিধিনিষেধে মোড়া। এমনকি ঘরোয়া কর্মসূচিতেও বাধা এসেছে। সর্বশেষ গত মাসে খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফরে ব্যাপক জনসমাগম হওয়ায় দলের নেতাকর্মীরা ব্যাপক উৎসাহ পেয়েছেন। এরপর রোববার রাজধানীর সমাবেশে লাখো জনতার ঢল নামায় কর্মীরা আরো চাঙ্গা হয়েছেন। দীর্ঘ দিন ধরে হামলা-মামলায় জর্জরিত বিএনপি জেগে উঠেছে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে তিনটি গণজমায়েত বিএনপি নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দর সড়কে বিপুল অংশগ্রহণের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে এ দেশের মানুষ যে অভ্যর্থনা জানিয়েছে, তা খুব সাধারণ ঘটনা নয়।

এটা ছিল সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের বার্তা। রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজার যাওয়ার পথে ঢাকা থেকে উখিয়া পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে মানুষ বিএনপি চেয়ারপারসনকে যেভাবে স্বাগত জানিয়েছে, তা ছিল অনেকটাই অভূতপূর্ব। সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের সে চাঙ্গা হওয়া আত্মবিশ্বাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ।

ড. মোশাররফ বলেন, সরকার মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে এবং নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েও মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি। সমাবেশের আগে পুলিশ যেভাবে ঘরে ঘরে অভিযান চালিয়েছে, সারা দেশ থেকে ঢাকামুখী বাস বন্ধ রেখেছে, পথে পথে যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছে তার তোয়াক্কা না করেও নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিয়ে প্রমাণ করেছে চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তারা উৎসাহ হারায়নি। এতে প্রমাণ হয়েছে, দমন-পীড়ন করে বিএনপিকে দমানো যাবে না। জনগণের যে স্রোত শুরু হয়েছে তা থামানো যাবে না।

ড. মোশাররফ বলেন, মানুষের সমর্থনই হচ্ছে রাজনৈতিক দলের অক্সিজেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে সে অক্সিজেনে নতুন মাত্রা দিয়েছে। অন্য দিকে এ সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের প্রতি গণমানুষের অনাস্থা প্রকাশ পেয়েছে। প্রমাণ হয়েছে জনগণ আগামীতে বিএনপিকে সরকারে দেখতে চায়।

স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মৌলিক ও নাগরিক অধিকার হারানোর পাশাপাশি সরকারের নানা কর্মকাণ্ডে দেশের মানুষ চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত। তাই নানা রকম বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে বারবার গণমানুষের নেত্রী খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে সমবেত হওয়ার মাধ্যমে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তাদের সে হতাশা ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। খালেদা জিয়া ও তার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করছে। দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ে বিএনপি ঘোষিত যেকোনো কর্মসূচিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

জানা গেছে, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন আমলে নিয়ে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণায় নামতে পারেন খালেদা জিয়া। রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সড়কপথে সফর করে সারা দেশের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করাই এর মূল লক্ষ্য।

উৎসঃ   dailynayadiganta

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin