ড. কামাল সিদ্দিকী ২০০৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মূখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এখন মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। বেগম জিয়ার সঙ্গে সাবেক এই আমলার এখনো ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি দেশের রাজনীতি, বিএনপির করণীয় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ড. কামাল সিদ্দিকী বেগম জিয়ার কাছে এক দীর্ঘ চিঠি লিখেছেন। এই চিঠিতে যেকোনো মূল্যে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য বেগম জিয়াকে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।
চিঠিতে সাবেক মূখ্য সচিব বলেছেন, ‘নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। কামাল সিদ্দিকী লিখেছেন, ‘এমনকি আপনি নির্বাচনের অযোগ্য হলেও আপনার নির্দেশে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত। তখন ওই নির্বাচন হবে আপনার রায়ের বিরুদ্ধে ম্যান্ডেট।’ বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এই চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এই চিঠি নিয়ে বিএনপিতে তোলপাড় চলছে।
চিঠিতে নির্দলীয় বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের বাস্তবতা নেই উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে অংশ নিন। নির্বাচনে বিএনিপর বিজয় অনিবার্য। আর যদি ক্ষমতাসীন দল বড় রকম কারচুপি করে তখন আপনি সহজেই বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবেন।’
ড. সিদ্দিকী লিখেছেন, ‘বর্তমানে আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় নির্বাচনই সবচেয়ে বড় আন্দোলন।’
এ প্রসঙ্গে সাবেক আমলা ৭০ এর নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘জনগণ আপনার পক্ষে। আওয়ামী লীগই চায় আপনি নির্বাচনে না যান। দয়া করে আওয়ামী লীগের ইচ্ছা পূরণ করবেন না। জনগণ আপনার একটি ‘হ্যাঁ’ শোনার অপেক্ষায় আছে।’
ড. সিদ্দিকী বলেছেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সিংহভাগ এখনো বিএনিপর নির্বাচনে অংশগ্রহণের অপেক্ষায় আছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকদের বড় অংশ আপনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। আপনি সিদ্ধান্ত দিলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।’
তবে চিঠিতে ড. কামাল সিদ্দিকী দেশ ও দলের স্বার্থে আপাতত ‘তারেক জিয়াকে বিএনপির সকল পদ ও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।’
তিনি লিখেছেন ‘তারেককে নিয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের অনেক নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। সবচেয়ে ভালো হলো তাঁকে রাজনীতি থেকে আপাতত দূরে রাখা। সময় সুযোগ মতো তাঁকে রাজনীতিতে ফেরত আনা যাবে। তারেক দলে থাকলে অনেক বিদেশি রাষ্ট্র আপনার ক্ষমতায় আসার বিরোধীতা করবে। তাই বিতর্ক এড়াতে তারেককে কিছুদিন দূরে রাখুন।’
চিঠিতে ড. কামাল সিদ্দিকী বলেছেন, ‘আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এবার নির্বাচনে অংশ না নিলে আওয়ামী লীগ সত্যিকারের বাকশাল কায়েম করবে আর বিএনপি পরিণত হবে মুসলিম লীগে।’
বেগম জিয়া এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কী করবেন তা স্পষ্ট নয়। ড. কামাল সিদ্দিকীকে বেগম জিয়া যথেষ্ট গুরুত্ব দেন, কিন্তু তাঁর সঙ্গে তারেক জিয়ার সম্পর্ক বরাবরই শীতল। তাই এই চিঠির পরামর্শ কতটা নেবেন বেগম জিয়া তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিএনপির মধ্যেই।
সম্পাদক.কম