khaleda_zia

খালেদা জিয়ার জামিনের অপ্রকাশ্য যত শর্ত

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তত দু`দিন বলেছেন যে, খালেদা জিয়া এখনও গৃহবন্দি আছেন। তাকে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না এবং তিনি শর্তের বেড়াজালে বন্দী হয়ে আছেন। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এবং বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং অমুলক।

বিশেষ করে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এড. আনিসুল হক সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হয়েছে তার ঘরে চিকিৎসার জন্য এবং প্রধানমন্ত্রী অনুকম্পায়। এই জামিনের ক্ষেত্রে তাকে অন্য কোনো শর্ত আরোপ করা হয়নি এবং তিনি গৃহবন্দি নন।

কিন্তু আনিসুল হকের এ বক্তব্যের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো একদফা খালেদা জিয়া সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন যে, খালেদা জিয়া শর্তের বেড়াজালে বন্দী হয়ে আছেন। বিএনপির নেতারা বলছেন যে, খালেদা জিয়া কিভাবে মুক্তি পেয়েছেন, সে সম্পর্কে তারা অন্ধকারে।

কারন দলীয় কোন ফোরামে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়নি এবং দলীয় নেতৃবৃন্দ খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দেনদরবার করেননি। বরং এই মুক্তির বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা দেকভাল করেছেন এবং তাদের হাতে ধরেই খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।

আর এই মুক্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পেছনে কি ধরনের শর্ত আছে, বা বেগম খালেদা জিয়া কি ধরনের মুচলেকা দিয়েছেন সে সম্পর্কে বিএনপির নেতৃবৃন্দের স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই । বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ, এ বিষয় নিয়ে বেগম জিয়ার পরিবারের কারো সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তারা কেউই এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি নন ।

বরং তারা মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়া জেল থেকে বাড়িতে আছেন, মানসিক প্রশান্তিতে আছেন এটি তাদের কাছে বড় প্রাপ্তি । বেগম জিয়ার পরিবারের কেউ কেউ আশা করছেন যে, এভাবে কিছুদিন চললে পরিস্থিতির উন্নতি হলে বেগম খালেদা জিয়াকে হয়তো চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হতে পারে।

তবে বিএনপির একাধিক নেতা মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের পিছনে অপ্রকাশ্য কিছু শর্ত আছে। এই শর্তগুলো মেনেই তাকে জামিন দেয়া হয়েছে । বিএনপি`র একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এরকম ভাবছেন এই কারণে যে বেগম খালেদা জিয়া কোন বিষয় নিয়ে কথা বলছে না।

বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতা এবং আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। সে সময় তিনি দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছিলেন, তখন বেগম খালেদা জিয়ার সব কিছু শুনেছেন কিন্তু কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এছাড়াও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়াকে অন্তত দুবার বিভিন্ন বিষয়ে বিবৃতি দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন । কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া ওই বিৃবতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়াকে সুনির্দিষ্ট কিছু অপ্রকাশের শর্তে মুক্তি দেয়া হয়েছে। আর এই শর্তগুলো কি হতে পারে এ সম্পর্কে বিএনপির নেতারা একটা ধারণা পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে যে সমস্ত শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে:-

১। তিনি কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
২। তিনি কোনরকম বক্তৃতা-বিবৃতি বা মন্তব্য করতে পারবেন না এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তিনি আনুষ্ঠানিক বৈঠক করতে পারবেন না ।
৩। দলীয় ফেরামগুলোতে তিনি সভাপতিত্ব করবেন না এবং দলীয় ফোরাম যেমন স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি ইত্যাদি বৈঠক গুলোতেও তিনি অংশগ্রহণ করবেন না।
৪। বেগম খালেদা জিয়া কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে কোনো রকম নির্দেশনা দিতে পারবেন না।
৫। চলমান বিষয়ে বক্তৃতা,বিবৃতি এবং সরকারের সমালোচনা করতে পারবেন না। 

বিএনপির একজন নেতা বলছেন যে, স্বাভাবিকভাবেই বেগম খালেদা জিয়া একজন দণ্ডিত ব্যক্তি, তার জামিনের ক্ষেত্রে যে শর্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক । তবে এই শর্তগুলোই আসলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে তারা নিশ্চিত নন।

তবে তারা মনে করেন যে, এই শর্তগুলো বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তার প্রমাণ হল বেগম খালেদা জিয়াকে বিএনপির পক্ষ থেকে একটা সভায় সভাপতিত্ব করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা নাকচ করে দিয়েছেন।

বেগম খালেদা জিয়াকে ধর্ষণবিরোধী একটা বিবৃতি দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল, সেটি নাকচ করে দিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনকে চলমান রাজনৈতিক কোন পরিস্থিতি নিয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বা স্কাইপে যুক্ত হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল, সেটিও তিনি নাকচ করে দিয়েছেন।

ফলে বিএনপি নেতারা মনে করেন যে, একটা শর্তের বেড়াজালের কারণে তিনি হয়তো কথা বলছেন না এবং এই শর্তগুলো বেগম জিয়ার পরিবার এবং বেগম জিয়া প্রকাশ করছেন না।

বিএনপিরএকজন সিনিয়র নেতা বলেছেন,যে আপস করেই বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন এবং এই আপসের শর্তগুলো যেমন তার জন্য যেমন অবমাননা কর, অমর্যাদাকর  সেজন্য তিনি প্রকাশ করছেন না।

আবার সরকারো তাকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে এই শর্তের ব্যাপারে নীরব রয়েছে। তবে সরকারের একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের ব্যাপারে গোপন কোন সমঝোতা নেই, যে গোপনশর্ত দুটি তার জামিনের আদেশ পত্রে দেয়া হয়েছে সে শর্তদুটির প্রেক্ষিতেই তাকে জামিন দেয়া হয়েছে।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin