‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট্র মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিলে, বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করবে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
রবিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচার রিপোর্টার্স ইউনিটির স্বাধীনতা হলে (তৃতীয় তলা) ‘স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইয়াছিন আলীর মুক্তির দাবিতে’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক গাজী রেজওয়ান উল হোসেন রিয়াজের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সফু, সংগঠনের সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার প্রমুখ।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে অসত্য রায় দেওয়া হলে মুক্তির আন্দোলন নয়, সরাসরি সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক আরো বলেন, ‘দেশের জনগণ সুষ্ঠুভাবে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে আওয়ামী লীগ ত্রিশটার বেশি আসন পাবে না’
গত শনিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দেওয়া বক্তব্যর সমালোচনা করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি নেতারা নয়, খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে বক্তব্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীরাই আদালত অবমাননা করেছেন।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারকাজ শেষ হয়েছে। আদালত আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন ঘোষণা করেছেন। গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের জজ ড. আখতারুজ্জামান এই দিন দেন। এ মামলায় খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন—মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
রায়ের দিন ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন, যার ফলে ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনৈতিক অঙ্গন।
খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না বলে গত শুক্রবার সতর্ক করে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলায় ‘নেতিবাচক’ কোনো রায় হলে তার পরিণতি ‘ভয়াবহ’ হবে।
আ. লীগের পতন হবে এটা গোয়েন্দা সংস্থার কথা: খন্দকার মোশাররফ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগের যে পতন হবে এটা শুধু আমাদের কথা নয়, এটা গোয়েন্দা সংস্থা, সাধারণ মানুষ, এমনকি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কথা। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ক্ষমতায় না যেতে পারলে পিঠের চামড়া থাকবে না। আওয়ামী লীগ কাউয়ার দল, একটা হাইব্রিড দল। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে এসব কথা কিভাবে বলেন? কারণ তিনি জানেন জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগের কোনো পাত্তা থাকবে না। এমনকি বহু এমপি-মন্ত্রী আছে যাদের জামানত হারাতে হবে। তারা ২৫-৩০ বেশি আসন পাবে না।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জিয়া পরিষদ আয়োজিত ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র: শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবীর মুরাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, প্রফেসর ড. আবদুল কুদ্দুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এসএম হাসান তালুকদার ও বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।
ড. মোশাররফ বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। আর যদি আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পথে হাঁটেন তাহলে যারা ভোটের অধিকার হারিয়েছে সেই জনগণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাদের বাধা দেবে। আন্দোলনের মাধ্যমের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। এবং শহীদ জিয়ার বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেই খালেদা জিয়া এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয় লাভ করবেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন ‘নির্বাচনকালীন সরকার’। অথচ সংবিধানে ‘নির্বাচনকালীন সরকারের’ কথা নেই। প্রধানমন্ত্রী যদি আন্তরিক হয়ে থাকেন তাহলে তার সেই কথা ধরে বলি নির্বাচনকালীন সরকার হলে, সংবিধানে সংশোধনী আনতে হবে। আজকে সংসদে আওয়ামী লীগের দুই তৃতীয়াংশ সদস্য আছেন। সংসদে তারা চাইলে সংশোধনী আনতে পারেন। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘নির্বাচনকালীন সরকার’। কিন্তু সেখানে অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’।
তিনি আরও বলেন, যদি এই সংবিধানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা সংশোধনীর মাধ্যমে এনে নির্বাচন হয়, তাহলে সংবিধান মোতাবকই নির্বাচন হবে। আর যদি তারা এটা না করে তাহলেও বাংলাদেশে উদাহরণ আছে সংবিধানের বাইরে অন্তর্বতীকালীন সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন হয়েছিল।