শেখ হাসিনার কৃপায় বেগম খালেদা জিয়া পুনর্জন্ম পেলেন। তাঁর দণ্ড স্থগিত করা হয়েছে এবং দণ্ড স্থগিতের পর তিনি আজ নিজের বাসভবন ফিরোজায় প্রথম দিন কাটালেন। বেগম খালেদা জিয়া আজ একান্ত নিজস্ব দিন কাটিয়েছেন এবং আগামী কয়েকটি দিন সম্ভবত এভাবেই কাটাবেন।
কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন হলো বেগম খালেদা জিয়ার সামনে কি? বেগম খালেদা জিয়ার ভবিষ্যৎ কি? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার সামনে তিনটি পথ রয়েছে, এই তিন পথের কোনটিতে তিনি যাবেন সেটা নির্ভর করবে আগামী কয়েকদিনে তাঁর সিদ্ধান্তের উপর।
১. বেগম খালেদা জিয়ার সামনে যে প্রথম পথ রয়েছে, সেটা হলো রাজনীতিকে বিদায় জানিয়ে অবসর গ্রহণ করা। বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন দুই শর্তে। প্রথমত, তিনি তাঁর বাড়িতে থাকবেন। দ্বিতীয়ত, তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ইতিমধ্যে জানিয়েছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী, কাজেই তিনি স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্ম প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, যদি করেন তাহলে সেটা হবে তাঁর জামিনের শর্ত লঙ্ঘন।
অবশ্য বিএনপি পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন অন্য কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, দণ্ড স্থগিত মানে তিনি এই ৬ মাস স্বভাবিক মানুষের মতো সবকিছুই করতে পারবেন। তবে বেগম জিয়ার পরিবাররা বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়া সত্যি সত্যি অসুস্থ এবং রাজনীতি করার মতো মানসিকতা বা বয়স বা শারীরিক অবস্থা- কোনটাই তাঁর নেই।
আর একারণে বেগম খালেদা জিয়া আগামী দিনে রাজনীতি করবেন না। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াও জানেন যে, রাজনীতি ছাড়া তিনি পরিচয়হীন। শেষ পর্যন্ত রাজনীতি না করে একজন প্রবীণ অসুস্থ মানুষের মতো চিকিৎসা নিয়েই শুধু কাটাবেন এমনটা ভাবার কোন কারণ আছে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মাঝে।
২. বেগম খালেদা জিয়ার সামনে যে দ্বিতীয় পথ খোলা রয়েছে সেটি হচ্ছে আবার রাজনীতিতে ফিরে আসা এবং প্রতিহিংসার রাজনীতি করা। বেগম খালেদা জিয়া ২৫ মাস কারাগারে ছিলেন এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটা বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ সরকার তথা শেখ হাসিনার জন্যেই তিনি কারাগারে। যদিও শেখ হাসিনার কৃপাতেই বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকূফ হয়েছে।
তবে বিএনপির রাজনৈতিক ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে, বিএনপি সবসময় প্রতিহিংসার রাজনীতি করে। আর তাই অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হতে বেশি সময় লাগবে না এবং তিনি আবার বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে আবার বিএনপির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করবেন এবং গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে তিনি হয়তো দলকে পুনর্গঠন করতে পারেন, সঙ্গবন্ধ করতে পারেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে পারেন। আর এটা বেগম খালেদা জিয়া অতীতে বারবার প্রমাণ করেছেন যে, তাঁর রাজনীতি হচ্ছে প্রতিহিংসার রাজনীতি। তাই তিনি তাঁর রাজনৈতিক কৌশলকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়ে সরকারকে পরাজিত করার চেষ্টা করতে পারেন।
৩. বেগম খালেদা জিয়ার সামনে তৃতীয় পথ হচ্ছে আপোসের রাজনীতি করা। বেগম খালেদা জিয়া জানেন যে, শেখ হাসিনাই তাঁকে মুক্তি দিয়েছেন এবং যদি তিনি জামিনের শর্ত লঙ্ঘন করেন কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অবস্থান নেবার চেষ্টা করেন তাহলে তাঁর জামিনের আদেশ বাতিল হবার জন্য সময় লাগবে সামান্যই। নির্বাহী আদেশে ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারায় যে জামিন দেয়া হয়েছে, তা বাতিল করতে সরকারের প্রয়োজন শুধু একটা নির্বাহী আদেশ।
তাই তাঁর অবস্থান অনেকটা এরশাদের মতো হতে পারে। জেলে না যাবার ভয়ে তিনি সরকারের সাথে আপোস করতে পারেন এবং এই আপসের ফল হিসেবে তিনি আবার একজন নতুন এরশাদ হতে পারেন। জেল থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারের সাথে যে ধরনের সমাঝোতা দরকার সেই সমাঝোতা করে তিনি একজন গৃহপালিত নেতা বা রাজনৈতিক ক্লাউন হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন।
তবে বেগম খালেদা জিয়া কোন পথে যাবেন তা নির্ভর করবে তিনি বা তাঁর পরামর্শকরা কোন দিকে নিয়ে যায় তাঁর ওপরে। এখন পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া তাঁর মনোভাব স্পষ্ট করেননি, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হোম কোয়ারেন্টাইনের ২ সপ্তাহ পর আসলে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের পথরেখা স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার