গত ২৫ মার্চ থেকে বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত জীবনযাপন করছেন। ৬ মাসের জামিনে তিনি এখন বাড়িতে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। তার চিকিৎসকরা তাকে নিয়মিত দেখাশোনা করছেন, তার পরিবারের লোকজন সার্বক্ষণিকভাবে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার ছোটবোন সেলিনা ইসলাম বলেছেন যে খালেদার শারীরিক অবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি স্থিতিশীল, তার ব্লাড সুগার এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। তবে তার শরীরে বিভিন্ন ব্যথা, বিশেষ করে দুই হাতের ব্যথা এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে আগের তিনি এখন অনেকটা ভালো আছেন।
মজার ব্যাপার হলো, এই ২৫দিনে অনেকবার বেগম জিয়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু অন্য কোনো নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করতে তিনি তেমন কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
বেগম জিয়াকে অন্তত তিনবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এবং টেলিফোনে আলাপ করার ব্যাপারে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া রাগতভাবে সেই অনুরোধ প্রত্যাখান করেছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার, বিশেষ করে তার ভাই শামীম ইস্কান্দার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার দূরত্ব নিশ্চিত করতে চাইছেন। কোনোভাবেই যেন বেগম জিয়া কোনো রাজনৈতিক বিবৃতি বা বক্তব্য, রাজনৈতিক বৈঠক না করেন তা নিশ্চিত করতে চাইছেন। আর এক্ষেত্রে একটি ভালো উপলক্ষ পাওয়া গেছে, তা হলো সাম্প্রতিক করোনা সংক্রমণ।
আর এ কারণেই বিএনপির মধ্যে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কি কোনো বিশেষ শর্ত ছিল? রাজনীতি করতে পারবেন কিনা এ ব্যাপারে কি কোনো মুচলেকা দিয়েছিলেন বেগম জিয়া?
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য বলেছিলেন যে এরকম কোনো মুচলেকা বেগম জিয়া দেননি। সরকার যে বেগম জিয়াকে ৬ মাসের জামিন দিয়েছেন, তার মধ্যে দুটি শর্ত রয়েছে। প্রথমটি হলো তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। দ্বিতীয় শর্ত হলো তিনি নিজ উদ্যোগে দেশের মধ্যে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।
অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন যে বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করা হয়েছে। এই দণ্ড স্থগিত করা মানে তিনি এখনো দণ্ডিত ব্যক্তি। একজন দণ্ডিত ব্যক্তির যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সেগুলো তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অর্থাৎ কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তিনি অংশ নিতে পারবেন না রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে তিনি জড়াতে পারবেন না।
তবে কেউই বলেননি যে বেগম জিয়ার নাটকীয় মুক্তির পিছনের কোনো গোপন শর্ত ছিল কিনা। একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্ন অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেখা গেছে, খালেদার এই মুক্তির মধ্যে প্রকাশ্য যে দুই শর্ত ছিল, সেই দুই শর্তের মধ্যেই তার মুক্তি সীমাবদ্ধ নেই।
এই দুই শর্তের বাইরেও আরও কিছু শর্তের বেড়াজালে খালেদার মুক্তি হয়েছে। এই শর্তগুলোর মধ্যে একটি বড় শর্ত হচ্ছে বেগম জিয়া কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়াতে পারবেন না। এছাড়া কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ, কর্মসূচি কিংবা বৈঠকে তিনি অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। প্রকাশ্যে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তিনি কোনো বক্তব্য, বক্তৃতা দিতে পারবেন না বলেও তার মুক্তির শর্ত রয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়াও বেগম খালেদা জিয়া যতদিন মুক্তিতে থাকবেন, ততদিন বিএনপি সরকারবিরোধী কোনো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারবে না। এমনকি নিজেদের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ থেকেও বিরত থাকবে। এই শর্তের সত্যতা পাওয়া যায় বেগম জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার বিএনপির নেতৃবৃন্দকে কঠোর ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যে এখন যেন তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ না করে।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করছে যে এই শর্তের মধ্যে আরেকটি বড় শর্ত হচ্ছে বিএনপির কোনো নেতৃবৃন্দ সরকারের বিরুদ্ধে রুটিন সমালোচনার বাইরে কোনো নেতিবাচক বক্তব্য, বিবৃতি দিতে পারবে না। আমরা যদি ২৫ মার্চ বেগম জিয়ার মুক্তির পর থেকে বেগম জিয়া এবং তার দলের কার্যক্রমগুলো বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখবো যে এই শর্তগুলোর বেড়াজালেই বেগম জিয়া এবং বিএনপি বন্দি হয়ে রয়েছেন।
বেগম জিয়া এখন পর্যন্ত কোনো বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেননি, তাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক করেননি, কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য বা বিবৃতি দেননি। এমনকি বিএনপি এখন পর্যন্ত বেগম জিয়ার মুক্তির পর সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর অবস্থানেও যায়নি।
বিএনপি এখন সাদামাটা বিরোধীদল হিসেবে সীমিত আকারে তাদের কার্যক্রম জারি রেখেছে। আর এ কারণেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে মুচলেকা দিয়েই হয়ত বেগম জিয়া মুক্তি পেয়েছেন। এই মুচলেকা বহাল না রাখলে হয়ত বেগম জিয়ার দণ্ড আবার কার্যকর হতে পারে।
বাংলা ইনসাইডার