বেগম জিয়ার আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন চলছেই। মামলা দীর্ঘায়িত করার জন্য তিনি যেন চুইংগাম নীতি গ্রহণ করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি ষষ্ঠ দিনের মতো আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে বক্তব্য রাখেন। ষষ্ঠ দিনে বেগম জিয়ার বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তিনি কালক্ষেপণের নীতি গ্রহণ করেছেন। যে কোন উপায়ে এই মামলার রায়কে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসীল পর্যন্ত নিয়ে যেতে চান।
লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পরদিনই (৯অক্টোবর) বেগম জিয়া তাদের বিরুদ্ধে করা জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলার আত্মপক্ষ সমর্থন শুরু করেন। সেদিন তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থন সাধারণ জনগণকে আগ্রহী করেছিলো। মানুষ শুনতে চেয়েছিলো, তিনি তাঁর অভিযোগ সম্পর্কে কি বলেন। বিশেষ করে তিনি যখন বঙ্গবন্ধু সহ জাতীয় নেতৃবৃন্দের অতীত মামলাকে উদাহরণ হিসাবে উপস্থাপন করেন, তখন তাঁর বক্তব্যের ব্যাপারে আগ্রহ বাড়ে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর আগরতলা মামলায় আত্মপক্ষ শুনানি করে বক্তব্য দিয়েছিলেন মাত্র দুই ঘণ্টা ৪৭ মিনিট। কর্ণেল তাহের তাঁর বিরুদ্ধে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করেন মাত্র দেড় ঘণ্টা।
আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য রেখে বেগম জিয়া এক নতুন রেকর্ড করেছেন। ৬ দিনে তিনি প্রায় ১১ ঘণ্টা বক্তব্য রেখেছেন। বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, একজন আসামির আত্মপক্ষ সমর্থন তাঁর মৌলিক অধিকার। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য আত্মপক্ষ সমর্থনের পর্যাপ্ত ও পরিপূর্ণ সুযোগ দেয়ার কথা কার্যবিধিতে বলা হয়েছে। তবে একজন অভিযুক্ত কতক্ষণ বা কতদিন আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারবেন, সে সম্পর্কে আইনে কিছু বলা নেই। আর এই সুযোগটাই নিচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
অবশ্য বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার সব সুযোগই বেগম জিয়া নিয়েছেন। মোট ৫৭ বার তিনি বিচার কার্যক্রমের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে গেছেন। আদালতের উপর অনাস্থা জানিয়েছেন মোট ৫ বার। এর মধ্যে ৪ বারই তাঁর কথা শুনে উচ্চ আদালত আদালত পরিবর্তনের আদেশ দেন। অবশ্য শেষ দফায় আপিল বিভাগ তাঁর আদালত পরিবর্তনের আবেদন নাকচ করে দেন। আপিল বিভাগ বেগম জিয়ার আরেকটি আবেদনও নাকচ করেছে। যে আবেদনে তিনি সাক্ষীদের আবার জেরা করার সুযোগ চেয়েছিলেন।
এখন নিন্ম আদালতেই তাকে সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যক্রম পর্যলোচনা করলে দেখা যায়, সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হবার পর আট থেকে দশ আদালত দিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যায়। সাক্ষ্য গ্রহণের পর মামলা নিষ্পত্তির ধাপগুলো হলো আসামির আত্মপক্ষ সমর্থন, দুপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক। সেই হিসেব ধরলে এতোদিনে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান থাকার কথা। আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছেন, ‘বেগম জিয়া আদালতে ভিআইপি মর্যাদা নিচ্ছেন। আইন সবার জন্য সমান এই নীতি তাঁর জন্য মানা হচ্ছে না।’ সরকার পক্ষের এক কৌঁসুলি প্রশ্ন করেন, ‘একজন সাধারণ মানুষকে কি আদালতে এভাবে ছয়দিন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতো?’
চুইংগাম যখন যতোক্ষণ ইচ্ছা চিবিয়ে মুখে রাখা যায়। তেমনি বেগম জিয়া এই মামলা দীর্ঘায়িত করছেন। এরপর তাঁর আইনজীবীরাও মামলাকে ইলাস্টিকের মতো টানবেন। যুক্তি তর্কে পালাক্রমে বক্তব্য রাখবেন। এভাবে মামলাটিকে কতোদিন টানতে পারবেন বেগম জিয়া সেটাই দেখার বিষয়। এই মামলায় দণ্ডিত হলেই তিনি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন। তাই চুইংগাম কৌশলে বেগম জিয়া কতোদিন নির্বাচনের যোগ্য থাকতে পারেন, সেটাই দেখার বিষয়।’
বাংলা ইনসাইডার
‘এই ৩ শর্ত মানা না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়’
তিনটি শর্ত পূরণ করলেই আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ। শর্ত তিনটি হলো- সংসদ ভেঙে দেয়া, বিরোধী দলের নেতাদের মামলাগুলো প্রত্যাহার বা স্থগিত এবং বিরোধী দলের প্রধানদের সাথে আলোচনা করে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে শুক্রবার বিকেলে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৩তম জন্মদিন উপলক্ষে সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দল।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ করতে প্রথম শর্ত বা পদক্ষেপ হবে জাতীয় সংসদকে ভেঙে দেয়।তা না হলে নির্বাচন যথার্থ হবে না। বর্তমান সংসদকে অক্ষুণ্ন রেখে নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলা বাতুলতা-অর্থহীন ও নিরর্থক। যেসব দেশে সংসদীয় ব্যবস্থা আছে সেসব দেশেই এরকম হয়। সংসদীয় ব্যবস্থা জাপানে, কানাডা ও ভারতে আছে। সব জায়গাতেই নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় শর্ত- বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার মামলায় জড়িত আছে বিরোধী দলের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। এই আড়াই লাখ মানুষকে ভোটের জন্য কথা বলতে হবে, তাই তাদের বিরুদ্ধে সব মামলা তুলে নিতে হবে। কারণ এর বেশিরভাগই মিথ্যা মামলা। আর যারা প্রার্থী হবেন তাদের তো ভোট চাইতে যেতে হবে। মামলাগুলো তুলে না নিলে নির্বাচন পর্যন্ত স্থগিত রাখতে হবে। এছাড়া কোনো পথ নেই। অনেক মামলা আছে যেগুলো তুলে ফেলা যায় না, সেগুলো স্থগিত রাখা উচিত।
তৃতীয় শর্ত- প্রধানমন্ত্রীর নেত্রীত্বে সকল দলের প্রধানদের সাথে আলোচনা করা এবং ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসা। এই তিনটি শর্ত বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন এই বুদ্ধিজীবী। তিনি আরও বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই তৈরি করতে হবে। এটা বিরোধী দলের দায়িত্ব নয়। এটা ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্ব। এটা করতে যদি ক্ষমতাসীন দল ব্যর্থ হয়, তাহলে এই ব্যর্থতা জাতির ব্যর্থতা এবং জাতীয় পর্যায়ের লজ্জা।
দেশে বর্তমানে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই জানিয়ে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ‘একটা নতুন রাষ্ট্র এখনো ৫০ বছর পূর্ণ হয়নি, এই রাষ্ট্রে গণতন্ত্র ঠিকমতো কার্যকর হবে না- এটা ভাবলেই আমাদের লজ্জা হয়। এটা হবে না? ৩০ লাখ শহীদের রক্ত গেল কোথায়? তাহলে আমরা করলাম কি? এক্ষেত্রে (গণতন্ত্র ঠিকমতো কার্যকর করতে) প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব অনেক বেশি।’
একই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে সরকার বেসামাল ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই আতঙ্কিত সরকারকে বিদায় করতে হবে। এ সময় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, বেগম জিয়া যখন আন্দোলনের ডাক দেবেন তখন সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি হাজী মো. লিটনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলতাব হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জিনাপের সভাপতি মিয়া মোহাম্মাদ আনোয়ার, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।
উৎসঃ poriborton