সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী রাশিয়ার অবকাশ শহরে সোচি’তে চলছে রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরানের ত্রিদেশীয় বৈঠক। বুধবার দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যের অবতারণা হয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের সঙ্গে হাত মেলানোর সময় মজার ছলে এরদোয়ানের চেয়ার ফেলে দেন পুতিন। এরদোয়ান নিজেও বিষয়টি টের পান। এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে।
ভিডিওতে দেখা যায়, হাত মেলানোর পর এরদোয়ান ওই স্থান ত্যাগ করেন। এরদোয়ান স্থান ত্যাগের সেখানে উপস্থিত অন্য কর্মকর্তারা চেয়ারটি আবার যথাস্থানে রেখে দেন।
বুধবারের ওই বৈঠকে সিরিয়ার রাজনৈতিক সংকট সমাধানে দেশটির সরকার ও বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতে জাতীয় কংগ্রেস গঠনের প্রস্তাবে একমত হয়েছে রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরান। বৈঠক শেষে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে সঙ্গে নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তিনি বলেন, সিরিয়ার সরকার ও বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতে করতে ‘সিরিয়ান পিপলস কংগ্রেস’ গঠনের ব্যাপারে রাশিয়ার প্রস্তাবে একমত হয়েছে তুরস্ক ও ইরান। এই কংগ্রেস সিরিয়ার প্রধান জাতীয় সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করবে। সবার আগে তারা জাতিসংঘের তদারকিতে নির্বাচন করার জন্য নতুন সংবিধান প্রণয়নসহ দেশটির ভবিষ্যৎ কাঠামো দাঁড় করাবে।’
কংগ্রেস গঠনের তারিখ ও এতে কারা থাকবে তা এখনও বিস্তারিত বলা হয়নি। তবে আগামী ২৮ নভেম্বর সোচিতে অনুষ্ঠিতব্য জেনেভা সংলাপে কংগ্রেসটি অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। পুতিন জানান, তিনি বিশ্বাস করেন সিরিয়া সংকট সমাধানে একটি নতুন মাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। এ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের জন্য সব পক্ষকেই ছাড় দিতে হবে বলেও মনে করিয়ে দেন তিনি।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই তিন নেতা বন্দিদের মুক্তি দিয়ে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে সবপক্ষের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান। এছাড়া দেশটিতে মানবিক ত্রাণ সরবরাহ করা, সিরীয় খনিগুলো দখলমুক্ত করা ও ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো পুনঃনির্মাণে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানান তারা।
তুরস্ক সিরিয়ার বিরোধীদের সহায়তা করে আসলেও প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরান তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়। সিরিয়ার সরকার ও বিরোধীদের আলোচনায় বসতে ও দেশটিতে চারটি ‘নিরাপদ স্থান’ প্রতিষ্ঠায় চাপ সৃষ্টি করতে এর আগেও এই তিন দেশ সংলাপে অংশ নেয়।
সোচি থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক রোরি চালান্ডস জানান, এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে এরদোয়ান জাতীয় কংগ্রেস গঠনে রাশিয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেবেন না। মূলত কংগ্রেসে কুর্দিদের ডাকা নিয়েই এরদোয়ান উদ্বিগ্ন। কারণ তার সরকার কুর্দি বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে।
মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশে কমেছে চীনের জনপ্রিয়তা
বাংলাদেশে চীনের জনপ্রিয়তায় অব্যাহতভাবে ভাটা পড়েছে। ভারতের প্রাধান্য-পরবর্তী বাংলাদেশে চীন কিছু সময়ের জন্য উষ্ণতা উপভোগ করতে শুরু করলেও তা পরিপূর্ণতা প্রাপ্তির আগেই থমকে গেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করায় দেশটির আগের জনপ্রিয় অবস্থান নড়ে গেছে।
চীন এসবকে তেমন একটা পরোয়া করে বলে মনে না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, এখানে অজনপ্রিয়তার ভারসাম্যের একটি ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে। এ থেকে ভারত সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত চুপচাপ বসে আছে। তার ভূমিকা নিয়ে আগে যে অসন্তুষ্টির সৃষ্টি হয়েছিল, এখন তা অনেকটা কম স্বার্থপরমূলক মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের জনমতে এখন চীনকে অনেকটা ভারতের মতোই মনে হচ্ছে।
মনে হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে চীন ও ভারত উভয়েই অনিশ্চয়তায় ভুগছে। উভয় দেশই আধিপত্য বিস্তারের যুদ্ধে লিপ্ত। ভারতের সবচেয়ে অসুবিধা হলো তার ঐতিহাসিক রেকর্ড। এই অঞ্চলের ছোট প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি তার আচরণ ইতিবাচক নয়। জনগণ পর্যায়ে কার্যক্রম, বাণিজ্য ও সংস্কৃতি অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও ভারতের প্রতি ক্ষোভ দীর্ঘ দিন ধরেই রয়েছে।
এই নতুন সমীকরণ থেকে সবচেয়ে বেশি ফায়দা হাসিল করেছে চীন। এই অঞ্চলের ছোট ছোট অর্থনীতির প্রবল প্রয়োজন মেটাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার নিয়ে এখানে প্রবেশ করেছে চীন। ভারতের ক্ষীণদর্শী অবস্থানের ফলে চীনকে স্বাগত জানানোর পরিবেশ আগে থেকেই তৈরি ছিল। তাদেরকে বরণ করে নেওয়া হয়, বিশেষ করে বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায়।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষায় ‘১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সবচেয়ে কঠিন সময়ে’ বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে চীন দৃঢ়ভাবে মিয়ানমারের পাশে দাঁড়ানোতে বাংলাদেশে চীনা জনসমর্থন দ্রুত কমে গেছে। বাংলাদেশের কঠিন সময়টাতেই চীন অনুপস্থিত। তার মিত্র মিয়ানমার। ফলে রোহিঙ্গা ঘটনার আগে চীনের প্রতি যে সমর্থন ছিল তা হ্রাস পেয়েছে।
ভারতের অবস্থানটি অনেক দিনের হিসাব-নিকাষে গড়ে ওঠলেও চীন এই পথে এসেছে সম্প্রতি। সে মিয়ানমারের সর্বোত্তম রক্ষাকারী এবং মিয়ানমার হলো রোহিঙ্গা ঘটনায় ভিলেন। ভারতকেও মিয়ানমারের সমর্থক মনে হয়েছে। তবে ভারতকে কিছু কম ‘বিশ্বাসঘাতক’ বিবেচনা করার কারণ হলো মিয়ানমারে দেশটির প্রভাব খুব বেশি নয়। এই বিষয়টি মিয়ানমারের সর্বোত্তম মিত্র চীনের অনুকূলে কাজ করছে না।
উৎসঃ সাউথ এশিয়ান মনিটর