টানা তিনদিন কর্মসূচি পালনের পর একদিন বিরতি দিয়ে আবারো তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি।
বৃস্পতিবার (১৫ ফেব্রয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার ঢাকা মহানগর সহ-সারা দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর অভিযান, ১৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান এবং ২০ ফেব্রয়ারি সারাদেশে ফের বিক্ষোভ সমাবেশ। এছাড়াও ২১ ফেব্রয়ারি মহান মাতৃভাষা উপলক্ষে রাতে ভাষা শহীদদের স্মতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হবে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক, আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।
ঢাকায় বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল, লাঠিচার্জ-আটক
ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজার প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। এ সময় মিছিলের সামনে পেছনে ব্যাপক সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা-বাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে। পুলিশ মিছিল থেকে কয়েকজনকে আটক করেছে।
শুক্রবার বাদ জুমা কেন্দ্রীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের সামনে থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি দৈনিক বাংলা-ফকিরাপুল-বিএনপি অফিস হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত আসে।
এসময় ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদ, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু প্রমুখ বিক্ষোভ মিছিলে ছিলেন।
এর মধ্যে মিছিলটি বিএনপি অফিসের সামনে পৌঁছালে দলীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলা থেকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হাত নেড়ে স্বাগত জানান। মিছিল থেকে নেতাকর্মীরা ‘আমার নেত্রী আমার মা বন্দি হতে দেবো না’, ‘জেলের তালা ভাঙব, খালেদা জিয়াকে আনব’, ‘খালেদা জিয়া জেলে কেন, সরকার জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
বায়তুল মোকাররমের মিছিলে বাধা না দিলেও নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে সমাবেশ শুরু করার পর পরই পুলিশ আচমকা একপাশে লাঠিপেটা শুরু করে বলে বিএনপির নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। এতে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, নেতাকর্মীরা দৌড়ে যে যার মতো আশপাশের গলিতে ঢুকে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শান্তিপূর্ণ মিছিলটি নাইটিঙ্গেল মোড়ে পৌঁছালে কিছু নেতাকর্মী আবাসিক এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করে। তখন পুলিশ ধাওয়া দিয়ে সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করেছে। এসময় নেতাদের অনেকেই সমাবেশস্থল ত্যাগ করেন, কেউ কেউ দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে গিয়ে অবস্থান নেন। ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, ধাওয়া দিয়ে পুলিশ এ সময় অনেককে ধরে নিয়ে গাড়িতে তুলে ফেলে।
এ ব্যাপারে মতিঝিল জোনের এডিসি শিবলি নোমান সাংবাদিকদের জানান, বিএনপি নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করছিল। কিন্তু কিছু নেতাকর্মী আবাসিক এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদেরকে ধাওয়া দেয়া হয়। তবে কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা তা খোঁজ নিয়ে পরে জানাতে পারব।
এছাড়াও বাদ জুমা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ চলছে। এতে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ধরপাকড় ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায়ের প্রতিবাদে ওইদিন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আজ বাদ জুমা দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার পুরানো ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিক বিশেষ আদালতের বিচারক বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। এছাড়া তার ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৫জনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।
rtnn