আওয়ামী লীগ-বিএনপির অঘোষিত সমঝোতা?

একটা সময় বাংলাদেশে রাজনীতি মানেই ছিলো আওয়ামী লীগ-বিএনপির লড়াই। বিশেষ করে ৯০ এর দশকে স্বৈরাচার পতনের পর দুই দলের লড়াই যেন রাজনীতির প্রধান চিত্র। একবার আওয়ামী লীগ, একবার বিএনপি-এই ধারায় ক্ষমতার পালাবদল হতে থাকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত।

এসময় বিএনপি চিরস্থায়ী ভাবে ক্ষমতা দখলের অভিপ্রায়ের কারণে ওয়ান ইলেভেন আসে। দু বছর ড: ফখরুদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে অনির্বাচিত সরকার থাকার পর নির্বাচন হয়। ২০০৮ এর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী-বিএনপির লড়াই ছিলো তুঙ্গে। রাজনৈতিক বিরোধ সহিংসতায় রূপ নিতো প্রায়ই।

২০১৫ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে রাজনীতিতে বিএনপির প্রভাব কমতে থাকে। দূর্নীতি এবং সন্ত্রাসের মামলায় ব্যতিব্যস্ত থাকে বিএনপি। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি দূর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হন বেগম জিয়া। এসময় অনেক সহিংস রাজনীতির আশস্কা করেছিলেন কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে নাটকীয় ভাবে অংশ নেয় বিএনপি। এই নির্বাচনের পরও রাজপথের আন্দোলনে উত্তাপ ছড়ায়নি। এই নির্বাচনের পর থেকেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির অঘোষিত সমঝোতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ঘটনা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় রাজনীতিতে এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমঝোতা কাল চলছে। সমঝোতার যে লক্ষন গুলো দেখা যাচ্ছে, সেগুলো হলো-

১. বেগম জিয়ার জামিন :- কারাভোগের পর গত ২৫ মার্চ, প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির বিশেষ বিবেচনায় জামিন পান বেগম খালেদা জিয়া। দ্বিতীয় বারের মতো তার জামিন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটি দুই দলের অঘোষিত সমঝোতার প্রমাণ বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

২. সংসদে যাওয়া এবং উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ: ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিএনপি বলছিল, এই সংসদে তারা যাবে না। এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনেও অংশ নেবে না বিএনপি। কিন্তু বিএনপি সেখান থেকে সরে আসে। সংসদে গেছে বিএনপির ৫ সাংসদ। উপ নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে দলটি। সমঝোতার অংশ হিসেবেই এই অবস্থান পরিবর্তন মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

৩. থেমে গেছে সব মামলা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা ৩৯টি। বিএনপির অন্যান্য নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে বিএনপির ভাষ্য অনুযায়ী ৬ হাজারের বেশী মামলা। ড: খন্দকার মোশারফ হোসেনসহ একাধিক নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে শতাধিক দূর্নীতির মামলা। কিন্তু এসব মামলাই এখন থমকে আছে। সমঝোতাই মামলার গতিরোধ করেছে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

৪. তারেক কে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেই: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দন্ডিত তারেক জিয়া। এছাড়াও মানি লন্ডারিং মামলায় তারেকের ৭ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। এনিয়ে সরকারের কোন তৎপরতা চোখে পরে না। এমনকি তারেক বিরোধী বক্তৃতা, বিবৃতির ঝালও কমেছে।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin