বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রায় একমাস হতে চললো। এখন পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া কোন নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি, কোন বৈঠক করেননি, এমনকি তার মুখ থেকে কোন বক্তব্য বিবৃতিও কেউ পায়নি।
আজ বেগম খালেদা জিয়ার বড় বোন গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন যে, তিনি এখনো অসুস্থ এবং তিনি শুধুমাত্র তার সঙ্গে এবং শামীম ইস্কান্দারের স্ত্রী ছাড়া কারো সঙ্গে দেখা বা কথা বলছেন না, তারাই তাকে রাখছেন।
যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২৫ মার্চ বলেছিলেন যে, বেগম খালেদা জিয়া ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। সেই ১৪ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আরো ১৪ দিন অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া এখন কোন বিএনপি নেতাকেই পাত্তা দিচ্ছেন না। কারো সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করছেন না।
কোন বিষয়ে কারো সঙ্গে কথাও বলছেন না। বেগম জিয়ার বোন সেলিনা ইসলাম বলেছেন যে, তিনি এখনো অসুস্থ এবং পারিবারিক পরিবেশেই থাকবেন সেজন্যই তিনি মুক্তি পেয়েছেন। কাজেই এই অবস্থায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দর সঙ্গে তার দেখা সাক্ষাতের প্রশ্নই উঠে না।
এই প্রেক্ষিতেই রাজনৈতিক অঙ্গন এবং বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে যে, বেগম খালেদা জিয়া কি রাজনীতি থেকে অবসরে চলে গেলেন নাকি ৬ মাসের মুক্তির জন্য যে অঘোষিত শর্ত সেই জালে বন্দি তিনি? ইতিমধ্যে বিএনপি অবশ্য করোনার কারণ দেখিয়ে ২২ মে পর্যন্ত সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করেছে।
এই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রহস্যময়। বেগম জিয়াকে না পেয়ে এবং তার নির্দেশনার অভাবে দিকভ্রান্ত বিএনপি তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে বলে অনেক বিএনপি নেতা মনে করছেন। আর এই প্রেক্ষাপটেই বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপির রাজনীতি আসলে কোন পথে?
বেগম খালেদা জিয়া ২৫ মাস কারা ভোগের পর ২৫ মার্চ দুই শর্তে ছয়মাসের জন্য মুক্তি পান। সেই শর্তের মধ্যে ছিল তিনি শুধুমাত্র চিকিৎসা করবেন এবং দেশে চিকিৎসা করবেন। তার ভাইয়ের হেফাজতে তিনি থাকেবেন। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি তার বাসভবন ফিরোজায় চলে যান। বিএনপির নেতবৃন্দ সে সময় সামাজিক দূরত্ব এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার সমস্ত রীতিনীতি লঙ্ঘন করে বেগম জিয়াকে সংবর্ধনা জানাতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জমায়েত হয়েছিল।
সেখান থেকে তারা বেগম জিয়ার গাড়ীবহরে গুলশান পর্যন্ত গিয়েছিল। এটা নিয়ে বিএনপির মধ্যে তীব্র সমালোচনা হয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়াও এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন বলে জানা গেছে। এরপর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, তিনি খুব শীঘ্রই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফিরবেন। ফিরোজার সামনেই বলেছিলেন, হোম কোয়ারেন্টাইন শেষে তারা দেখা করবেন।
কিন্তু হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হওয়ার পরও বেগম খালেদা জিয়া এখনো কারো সঙ্গে দেখা করছেন না। বেগম জিয়ার পারিবারিক সূত্রগুলো বলছে, তার এখন রাজনীতিতে আগ্রহ নেই। বরং তিনি বাকিটা সময় অবসর এবং নিকটাত্নীয়দের সঙ্গে নির্বিঘ্ন সময় কাটাতে চান। বেগম জিয়ার একজন ঘনিষ্ঠ আত্নীয় বলেছেন যে, তিনি রাজনীতি নিয়ে বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছেন, কারণ ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি যখন গ্রেফতার হয়েছিলেন তখন তিনি মনে করেছিলেন তার বিশাল বড় একটা রাজনৈতিক দল আছে।
এই রাজনৈতিক দর যেকোনভাবে তাকে মুক্ত করে আনবে। কিন্তু ২৫ মাসে বেগম জিয়ার হাতে গড়া দল বিএনপি তাকে মুক্ত করা তো দূরের কথা, তাকে বন্দি রেখে নানা রকম আপসরফা করেছেন, অনেক নেতা ফায়দা লুটেছেন এমন অভিযোগ বেগম খালেদা জিয়ার কাছে আছে। এই রাজনীতি থেকে আস্থা উঠে যাওয়া এবং রাজনীতির ওপর বিরক্ত হওয়ার কারণে তিনি অঘোষিতভাবে অবসরে গেছেন বলে মনে করেন কেউ কেউ।
তবে বিএনপির একটি বড় অংশ মনে করেন যে, বেগম খালেদা জিয়া আসলে অবসরে যাননি। বেগম খালেদা জিয়ার ২৫ মাস কারাভোগের পর একটা শিক্ষা হয়েছে তা হলো যে, আওয়ামী লীগ বিশেষ করে শেখ হাসিনা যেটা বলেন সেটা করেন। কাজেই তিনি যদি কোন রকম শর্ত ভঙ্গ করেন তাহলে তাকে জেলে পুরতে সরকার এক মুহূর্ত বিলম্ব করবে না। আর এই ভয়ে তিনি কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ কিংবা বক্তৃতা বিবৃতি বা সরকারের বিরুদ্ধে কোন কথাবার্তা বলা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন।
প্রকাশ্য শর্ত দুটি হলেও বেগম জিয়ার রাজনীতিতে কিছু বিধি নিষেধ আছে বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্ট সকলে। কারণ বেগম খালেদা জিয়অর মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন যে, বেগম খালেদা জিয়া বিশেষ বিবেচনায় মুক্তি পেয়েছেন শুধুমাত্র স্বাস্থ্যগত কারণে।
কাজেই তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করার অধিকার নেই। বোঝাই যায় যে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দেওয়ার পেছনে কিছু শর্ত রয়েছে। যে শর্তগুলো প্রকাশ্য নেই। এই শর্তের কারণেই বেগম খালেদা জিয়া নিজেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। একরকম শর্তের জালে নিজেকে বন্দি রেখেছেন।
বাংলা ইনসাইডার