ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০ দলীয় জোটের অন্তত ৫টি দলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দলগুলো অংশ নেবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিএনপির কর্তৃত্ববাদী নীতি ২০ দলের উপর অব্যাহত থাকলে এই দলগুলো জোট থেকে বেরিয়ে আসবে বলেও জানিয়েছে।
বিএনপি যখন নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গড়ে তোলার সঙ্গে সম্পৃক্ত তখন ২০ দলেই ভাঙনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। বিএনপির স্বেচ্ছাচারিতা আগামী জাতীয় নির্বাচনে শরিকদের আসন ভাগাভাগি বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি না দেওয়াসহ নানা কারণে ২০ দলে অনৈক্যের সুর বেশ স্পষ্ট। সিলেট এবং রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বিএনপি-জামাত দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়।
২০ দলের প্রধান দুই শরিকের মধ্যে এখনো শীতল সম্পর্ক চলছে। এর মধ্যে ২০ দলের মধ্যে কয়েকটি দল মনে করছে, বিএনপি ২০ দলকে গুরুত্ব না দিয়ে যুক্তফ্রন্টের দিকে ঝুঁকছে। এনিয়ে তারা প্রকাশ্যেই বিএনপির সমালোচনা করছে। বিশেষ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ২০ দলকে অকার্যকর করেছেন বলে জোটে অভিযোগ উঠেছে।
আরো পড়ুন → বি. চৌধুরীর বাড়িতে বিএনপির চার নেতার পদধূলি
২০ দলের অধিকাংশ শরিকই ২০১৪’র মতো, আগামী নির্বাচন বর্জনের পক্ষে নয়। বরং তারা নিজ নিজ পছন্দের আসনগুলোতে জোরে সোরেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। ২০ দলের অবিশ্বাস আর অনৈক্যের সুযোগটি কাজে লাগাতে চাইছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, আওয়ামী লীগের বেশ ক’জন গুরুত্বপূর্ণ নেতা গত কয়েকদিন কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি, আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জেনারেল (অব.) ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এছাড়াও ২০ দলীয় জোটের শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টি। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সঙ্গেও আওয়ামী লীগ নেতারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
২০ দলের অন্তত একটি দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘রাজনীতি যখন করি তখন তো সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেই হবে।’ তবে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আরো পড়ুন → তোপের মুখে ফখরুল
তবে তিনি বলেন, ‘২০১৪’র মতো ২০১৮ তে এক তরফা নির্বাচন হবে না। আমার বিশ্বাস বিএনপি এবার ২০১৪’র মতো ভুল করবে না।’ এই প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ নেতা মনে করেন, ‘শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচন বর্জনের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ২০ দলের অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেবে।’
একাধিক সূত্র বলছে, ২০ দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নির্বাচনে আনতে ঐ নেতাদের আসনগুলোতে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ঐ সূত্র মতে, এলডিপিকে ৩ থেকে ৫ আসন, বিজেপিকে ৩টি এবং কল্যাণ পার্টিকে ২ আসন ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা জানিয়েছেন, ২০ দল ভাঙ্গা আমাদের লক্ষ্য নয়, আমরা চাই ২০ দলের মধ্যে থাকা দল গুলো যেন গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপির ফাঁদে পা না দেয়।
২০ দলের শরীকদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, তারা বলছেন, অবজ্ঞায় অবহেলায় প্রতারিত হয়েই আমরা আগামী নির্বাচনের বিকল্প খুঁজছি।
বাংলা ইনসাইডার/