bnp_12_november

হাসিনা নয় – নির্দলীয় সরকার, বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন: খালেদা জিয়া

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে ফের নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। শেখ হাসিনার অধীনে তো হবেই না। তাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সেই সঙ্গে বিচারিক ক্ষমতাসহ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার চলবে না।

সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। আমি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি- ভোট কেন্দ্রে যান, দেখেন মানুষ কাদের ভোট দেয়। জনগণের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ঐক্যই বড় ঐক্য, বড় শক্তি। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে কেউ অপকর্মের সাহস পাবে না। জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা আপনাদের মঙ্গল চায় তাদের পেছনে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন। ইনশাআল্লাহ, জয় আমাদের হবেই।

আমরা দেশকে আবার উন্নত করে গড়বো। আগামীতে সরকার গঠন করলে কী কী করবেন তার একটি সংক্ষিপ্তরূপ তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো মানুষের সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। এদিকে শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে ২৩ শর্তের অনুমতিতে বাধা বিএনপির সমাবেশ।

নানামুখী প্রতিবন্ধকতা ও সকাল থেকে যানবাহন সংকটের মধ্যেও জনসমুদ্রে পরিণত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সমাবেশে তরুণদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। রাস্তায় অবস্থান না নেয়ার বিষয়টি পুলিশের শর্তে থাকলেও বিপুল মানুষের উপস্থিতির কারণে পুলিশই মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে দেয়। তবে সরকারি বাধার কারণে টেলিভিশনগুলো সমাবেশটি লাইভ সম্প্রচার করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশে এখন ঘরে ঘরে মানুষের আহাজারি। মানুষ প্রতিনিয়ত নির্যাতিত, নিপীড়িত হচ্ছে। এদের হাত থেকে মানুষ মুক্তি চায়। মানুষ পরিবর্তন চায়। আমরা বলি, সে পরিবর্তন আসতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে। জনগণের ভোটের মাধ্যমে। তার জন্য মানুষকে তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কোনোদিন হতেই পারে না, হবে না। তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন- শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে আপনারা কি ভোট দিতে পারবেন? সবাই সমস্বরে জবাব দেন- ‘না না’। খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পর্যন্ত চুরি করেছে। কিন্তু চুরি করে জেতার মধ্যে আনন্দ নেই।

যারা জনগণকে পাশ কাটিয়ে জিততে চায় তারাই জনগণের সামনে যেতে ভয় পায়। আমরা জনগণের রাজনীতি করি। আমরা চাই ভোটাররা যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে যার যার ভোট সে সে দিতে পারে। আমরা চাই- জবাবদিহির সরকার। ন্যায় বিচারের সরকার, কার্যকর সংসদ। মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে, সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেই সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেশে একটি কার্যকর সংসদ থাকবে। সরকার ও বিরোধী দল একসঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। এসবের জন্য প্রয়োজন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।

খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচন কমিশনে আমরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। কমিশনকে বলেছি, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাইলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তাদের বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে। সরকার যা বলছে, সিইসি সেটাই বলতে চায়। সিইসি কেন বলে, সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে না। নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে চায়। আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, নির্বাচনে ইভিএম চলবে না। ইভিএম বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনে ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন কোনো নির্বাচনই ছিল না। সেবার ১৫৪ জনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা হয়েছে। অন্যরা নিজের ভোটটি দিতেও ভোটকেন্দ্রে যাননি। সে নির্বাচনে ৫ ভাগ ভোটও পড়েনি। বর্তমান পার্লামেন্ট অবৈধ। এ সরকার অবৈধ। এ পার্লামেন্টে কি বিরোধী দল আছে? যে বিরোধী দল আছে সেটা কেমন বিরোধী দল। যারা মন্ত্রী হবেন, বিরোধী দলেও থাকবেন! তারা দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। তাই বর্তমান অবৈধ সরকার জনগণকে ভয় পায়। বিএনপির মতো বড় দলকে ভয় পায়।

তাই তারা দেশের মানুষকে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের প্রতিনিয়ত হয়রানি করছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাবন্দি করছে। দেশে কত খুন-গুম হচ্ছে। সরকার তা প্রকাশ না করলেও বিদেশি সংস্থাগুলো তা প্রকাশ করে। দেশের মানুষ জানে। আমাদের কত ছেলেকে গুম করা হয়েছে তার হিসাব নেই। তাদের অপরাধ একটাই- তারা বিএনপির রাজনীতি করে। তারা সরকারের অপকর্মের প্রতিবাদ করে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে ভয় পায় বলেই একদলীয় বাকশাল গঠন করেছিল। এখন জনগণকে ভয় পায় বলেই বাকশাল পুনরুজ্জীবিত করতে চায়।

মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়। এখন দেশ অচল হয়ে গেছে। দেশ কোনোভাবেই চলছে না। সরকারি অফিসগুলো চলে মাত্র দুইঘণ্টা। ১২টায় আসে, ২টায় যায়। তাহলে দেশ কিভাবে চলবে? নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেই কেবল এ সমস্যার সমাধান হবে। খালেদা জিয়া বলেন, আমি বলেছি- আমি তাদের ক্ষমা করে দেব। কিন্তু দেশের জনগণ সেটা মানতে রাজি নয়। কারণ জনগণ জানে তারা কত অপকর্ম করেছে। তারপরও দেশের সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আমরা এ কথা বলেছি।

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে খালেদা জিয়া বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে অসুস্থ বানিয়ে জোর করে দেশের বাইরে পাঠিয়েছে সরকার। দেশের বাইরেও এজেন্সির লোক পাঠিয়ে তার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত চাপ দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতিকে আর দেশে ফিরতে দেয়া হয়নি। কারণ তিনি কিছু সত্য কথা বলেছিলেন। তিনি সরকারের হস্তক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেছিলেন, দেশের মানুষ ন্যায় বিচার বঞ্চিত হবে। আজকে তার সে কথা সত্যে প্রমাণিত হলো।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, আজকে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, রোহিঙ্গা সমস্যা। এ সমস্যা আওয়ামী লীগের নয়। দেশের প্রতিটি মানুষের। আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি বলতে চাই- আমরা মানবতার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু সেটা দীর্ঘদিন চলতে পারে না। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নয়, মিয়ানমারের নাগরিক। তারা যেন দ্রুত নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে সে জন্য আপনাদের সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, তারা যেন নাগরিকত্বসহ নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে। সেখানে তাদের শান্তিতে বসবাস নিশ্চিত হয়। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনসহ বড় দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের সাহায্য চান বিএনপি চেয়ারপারসন।

খালেদা জিয়া বলেন, সোহরাওয়ার্দীতে আমাদের সমাবেশের অনুমতি দেয়া হলেও পদে পদে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে সরকার। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। রাজধানীর সব রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যাতে লোকজন সমাবেশে যোগ দিতে না পারে। আমি যখন সমাবেশে আসছিলাম তখন আমার বাসা থেকে বেরিয়ে কিছুদূর আসার পর গুলশানে গাছ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। যেন আমি সমাবেশে অংশ নিতে না পারি। আপনাদের সামনে আসতে না পারি। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা সংঘর্ষের রাজনীতি করতে চাই না। আজকেও সরকার সংঘাত সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। যাতে আমাদের সমাবেশটি অনুষ্ঠিত না হয়।

আমাদের ছেলেদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। আজ জনসভায় যত মানুষ আসতে চেয়েছিল তারা আসতে পারেনি। অনেক কষ্ট করে আপনারা আজকের সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। শান্তিপূর্ণভাবে ঘরে ফিরে যাবেন। খালেদা জিয়া বলেন, সরকারের লোকজন বলছে- বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বহু লোককে মেরে ফেলবে। লোক মেরে ফেলা বিএনপির কাজ নয়। আমরা সহিংসতার রাজনীতি চাই না। আমরা শুদ্ধি অভিযান চালাবো। আমরা তাদের শুদ্ধ করবো। আওয়ামী লীগকে মানুষ বানানোর চেষ্টা করবো। আমাদের শক্তি জনগণ। বন্দুক, গুলি আমাদের শক্তি নয়।

বর্তমান সরকারের আমলে আর্থিক খাতে দুর্নীতির কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিবার ক্ষমতায় এসেই শেয়ার বাজার লুট করে। বাংলাদেশের টাকা সুইচ ব্যাংকে জমা হচ্ছে এটা জানতামই না। বর্তমান সরকার দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে। ২০১৫ সাল এক বছরেই সুইচ ব্যাংকে বাংলাদেশিদের একাউন্টে বেড়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। এ টাকা কারা পাচার করেছে, সবাই সরকারের লোক। বিগত ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থা বলেছে, বর্তমান সরকারের আমলে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে। পানামা পেপার্স অনেক দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করেছিল।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সমালোচনা করে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির দিকে দুদকের চোখ পড়ে না। দুদক এগুলোর ব্যাপারে কোনো তদন্ত ও মামলা করেনি। দুদক পড়ে আছে আমাদের নিয়ে, যেখানে দুর্নীতির সুযোগই নেই। খালেদা জিয়া বলেন, একটি বেসরকারি সংস্থার হিসেবে গত ৭ বছরে বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে চুরি হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকে টাকা রাখতে এখন মানুষ নিরাপদবোধ করে না। কারা এসব টাকা চুরি করে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কারসাজি করে ৮০০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। কিন্তু তাদের একজনকেও গ্রেপ্তার বা বিচার করেনি সরকার। আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন লুটপাট হবে।

আওয়ামী লীগের আমলে জনগণের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এ সময় তিনি বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির কথা তুলে ধরে বলেন, দেশের মানুষের বিদ্যুৎ পায় না। সরকার বিদ্যুতের জন্য কুইক রেন্টাল অনুমোদন দিয়েছিল। সেখানে অনেক বড় দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু সরকার তাদের দায়মুক্তি দিয়েছে। অথচ এখনো বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। বিদ্যুৎ যায়-আসে, ফলে যখন তখন কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কৃষকদের দুর্দশা, বেকারত্ব নিয়ে সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ১০ টাকা সের চাল খাওয়ানোর কথা বলে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ। এ সময় খালেদা জিয়া সমবেত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন- আপনারা কি ১০ টাকা সের চাল পান। বর্তমানে দেশের চালের কেজি ৭০ টাকা। কেন এক কেজি চালের দাম ৭০ টাকা সেটা জনগণ আজ শেখ হাসিনার কাছে জানতে চায়।

বিএনপি চেয়ারপারসন প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে কয়েক দফায়। কিন্তু কেন বারবার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান ও চাল কিনছে না। সরকারদলীয় টাউটরা তাদের কাছে সস্তায় ধান-চাল বিক্রি করতে কৃষকদের বাধ্য করছে। ফলে কৃষকরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষকদের জন্য এ সরকারের মায়া নেই। একই পরিস্থিতি শ্রমিকদের। তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর জন্য সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ঘরে ঘরে চাকরি দেবে বলেছিল আওয়ামী লীগ। এ সময় তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, তোমরা ঘরে ঘরে চাকরি পেয়েছো? এ সময় ‘না না’ বলে সমস্বরে জবাব দেন জনতা। তিনি বলেন, তাহলে এ সরকার ঘরে ঘরে চাকরি দিতে পারেনি। উল্টো ঘরে ঘরে বেকার সৃষ্টি করেছে।

খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশসহ সরকারি চাকরিজীবীদের ভয় দেখায়। তারা বলে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে চাকরি থাকবে না। আমরা বলতে চাই, সরকারি কর্মকর্তারা দেশের জন্য কাজ করবেন। আমরা দেখবো যোগ্যতা ও দক্ষতা। কে বিএনপি কে অন্যদল সেটা দেখবো না। তাই আপনারা নির্ভয়ে নির্দ্বিধায় দায়িত্ব পালন করবেন। সরকারের কথায় ভয় পাবেন না। আপনাদের মনে আছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি কার ছিল? এ দাবি ছিল জামায়াতের। সেদিন আওয়ামী লীগ জামায়াতকে নিয়ে তত্ত্বাবধায়কের দাবি আদায়ে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল।

রাস্তায় অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল। পুলিশের মাথা থেঁতলে দিয়েছিল ইট দিয়ে। সরকারি কর্মকর্তাকে পথে দিগম্বর করেছিল। এটাই আওয়ামী লীগের চরিত্র। সমুদ্র বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল। খালেদা জিয়া বলেন, আমি চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে রোহিঙ্গাদের দেখতে গিয়েছিলাম। পথে ফেনীতে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে সাংবাদিকদের আহত করেছে। আমাদের দলের নেতাকর্মীদের আহত করেছে। ফেরার পথেও ফেনীতে হামলা হয়েছে। যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা মেরে আগুন দিয়েছে। সবাই দেখেছে এ হামলা করেছে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। কিন্তু আমাদের ছেলেদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগেরই বাসে আগুন দেয়ার অভ্যাস আছে।

তারা রাজধানীতে যাত্রীবাহী বাসে গান পাউডার দিয়ে আগুন দেয়ার মাধ্যমে যাত্রীদের হত্যা করেছিল। তিনি বলেন, দেশে এখন বাসে-ট্রেনে মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশে নতুন নতুন জিনিস আমদানি করে। খালেদা জিয়া বলেন, আমি গণতন্ত্রের জন্য জেল খেটেছি। আমাদের তখন দেশের বাইরে চলে যেতে বলা হয়েছিল। আমি পরিষ্কার বলেছিলাম, দেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই। যার কারণে আমাকে কারাভোগ করতে হয়েছে। আমার দুই ছেলেকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করেছে।

একজন এখনো চিকিৎসাধীন। অন্যজন তো বিদেশেই মৃত্যুবরণ করলো। এ সময় কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। বক্তব্যের শেষদিকে বিএনপির কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, অবিলম্বে আমাদের দলের নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, মশিউর রহমান, লায়ন আসলাম চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবর, গাজী নুরুজ্জামান বাবুল, রফিকুল ইসলাম মজনুসহ অন্যদের মুক্তি দিতে হবে।

আগামীতে সরকার গঠন করতে পারলে কি কি করবেন তার একটি সংক্ষিপ্তরূপ তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, কিছুদিন আগে আমরা ‘ভিশন ২০২৩’ ঘোষণা করেছিলাম। আমরা দেশের জনগণের কাছে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেবো বলেছি। আমরা বলেছি, বেকার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। ১ বছরের বেশি বেকার থাকলে ভাতা দেব।

টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ দেব। সকল শিক্ষার্থীকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দেব। সকল নাগরিকের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে। পর্যায়ক্রমে সবার জন্য স্বাস্থ্যবীমা করা হবে। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনা হবে। কৃষকদের উৎপাদনে উৎসাহিত করা হবে। বেশি দামে কৃষিপণ্য কেনা হবে। গরিব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণ মওকুফ করা হবে। গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।

অন্য নেতারা যা বলেন: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সৈনিক ও জনতার ভালোবাসার মধ্যদিয়ে ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থানে দেশপ্রেমিক মানুষ জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। এরপর তিনি এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী রাজনীতি। তারই উত্তরসূরি দেশনেত্রী খালেদা জিয়া মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন। দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম করেছেন।

অবৈধ ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দীনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। এখন আবার সংগ্রাম করছেন গণতন্ত্র হত্যাকারী লুটেরা অত্যাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে। তারা মানুষের অধিকার লুট করেছে। লুট করেছে মানুষের ভোট দেয়ার অধিকার। মিথ্যা মামলা দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে হয়রানি করা হচ্ছে। আজকে কোটি কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। জনগণ তার জবাব দেবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনা আসন থেকে সরে না গেলে কোনো নির্বাচন হবে না।

শপথ নিতে হবে তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরানোর। যারা খুন-গুম করছে তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। উল্লেখ্য, ৭ই নভেম্বরকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে বিএনপি। এবার ২৩ শর্তে পুলিশের অনুমতি পায় দলটি। ফলে নির্ধারিত দিনের ৫ দিন পর গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে দলটি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ৭ই নভেম্বরকে আওয়ামী লীগ ভয় পায়। কারণ এর সূত্র ধরেই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজকের এই জনসমাবেশকে পণ্ড করে দেয়ার জন্য রাস্তায় বহু বাধা দেয়া হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া যে নির্বাচনকালীন রূপরেখা দেবেন সে অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে। স্থায়ী কমিটি সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, একটি বড় দলকে ২৩টি শর্ত দিয়ে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়াতেই প্রমাণ করে দেশে গণতন্ত্র নেই।

প্রধান বিচারপতির ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায়ে এই সংসদকে অকার্যকর, দেশের আইনের শাসন নেই এবং সর্বত্র দুর্নীতি চলছে বলে উল্লেখ করেছেন। এজন্য তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এমন আচরণে দেশ চলতে পারে না। জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার দাবি করেন, জিয়াউর রহমান যে গণতন্ত্র দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছেন। আর আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। যতদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে ততদিন খুন-গুম চলতে থাকবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, যারা বলে- বিএনপির জনসমর্থন আছে কিন্তু সাংগঠনিক দৃঢ়তা নেই, তারা জানুক বিএনপির সাংগঠনিক দৃঢ়তাও প্রবল।

এই সভার ঘোষণা আসার পর কম সময়ের মধ্যেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মীরা এই সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। বাস বন্ধ ও মিছিলে গুলি করার পরও এত জনসমাগম প্রমাণ করে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে কত দৃঢ়। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়াকে মানুষ বলে মাদার অব ডেমোক্রেসি। হাসিনার আদালতের বাইরেও আদালত আছে। জনগণের আদালত। হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি সেই আদালতের দিকে তাকানোর অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে আপসহীন থাকার আহ্বানও জানান তিনি। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নে শহীদ জিয়া এগিয়ে এসে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিলেন।

বর্তমান শাসনকে বাকশাল উল্লেখ করে তা ধ্বংস করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় খালেদা জিয়া এগিয়ে এসেছেন বলেও দাবি তার। স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত গণতন্ত্র বাকশালের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছিল। শহীদ জিয়া তা উদ্ধার করে। এখন শেখ হাসিনা তা আবার কুক্ষিগত করলে খালেদা জিয়া উদ্ধারের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এখন যে জোয়ার উঠেছে তা আর থামানো যাবে না। এ জোয়ার সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তির উন্মেষ ঘটানোর সময়ে ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পান। তখন তিনি দায়িত্ব নিতে অনীহা প্রকাশ করলে দেশে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যেত। আজও আমাদেরকে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে এর প্রধান সেনাপতি উল্লেখ করে তার মামলা প্রত্যাহারের দাবি তোলেন তিনি।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে- মো. শাহজাহান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, জয়নাল আবেদীন, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান ও আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হারুনুর রশিদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান বক্তব্য দেন।

এদিকে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীতে সীমিত ছিল যানচলাচল। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন সমাবেশের কারণে চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীমুখী প্রতিটি মহাসড়কের যানবাহনে হয়রানির উদ্দেশে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ডা. মাজহারুল আলম বলেন, পুলিশি বাধা ও যানবাহনে তল্লাশির কারণে গাজীপুর থেকে অনেক কর্মী-সমর্থক সমাবেশে যেতে পারেননি। একই অভিযোগ করেছেন মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী ও টাঙ্গাইল বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় দুই সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিমউদ্দিন আহমেদ মিলন ও দিলদার হোসেন সেলিম বলেন, যানবাহন সংকট, পুলিশি বাধার বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ থেকে সমাবেশে অংশ নিতে নেতাকর্মীরা আগেই ঢাকা চলে আসেন।

নেতাকর্মীদের ঢল: সমাবেশ ঘিরে নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশেপাশের এলাকায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশের নির্ধারিত মাঠে জায়গা না পেয়ে আশেপাশের বিভিন্ন সড়ক ও পার্কে অবস্থান নেন আগত নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের ভিড়ে দুপুর ১২টার পরে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, হাইকোর্টের প্রধান ফটকের সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। সমাবেশস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে জায়গা না হওয়ায় পাশের শিশুপার্ক, রমনা পার্কে জায়গা নেন তারা। এসময় সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের মিছিল ও স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। বিশৃঙ্খলা এড়াতে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা ছিলেন তৎপর। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ব্যানারে সমাবেশে এসেছিলেন আবুল কালাম।

তিনি বলেন, আজকের সমাবেশ ছিল আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সরকার আমাদেরকে কোনো ধরনের মিছিল- মিটিং করতে দেয় না। আমরা আমাদের নেতা জহির উদ্দিন স্বপনের নেতৃত্বে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির কয়েকশ’ নেতাকর্মী এসেছি। আমাদের প্রায় কর্মীর নামে মামলা রয়েছে। আমরা জেল-জুলুম, মামলা-হামলায় ভয় পাই না। তাই সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করেই এখানে এসেছি। গাজীপুর থেকে এসেছিলেন যুবদল নেতা তোজাম্মেল আলী। তিনি বলেন, আমাকে আসতে হয়েছে অনেক কষ্ট করে। আজকের সমাবেশে আমি অনেক পথ হেঁটেই এসেছি।

সকাল ১১টা পর্যন্ত শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবনে যাওয়ার রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও সকাল ১১টার পর থেকে ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। বাটা সিগন্যাল থেকে আসা গাড়িগুলো শাহবাগের শেরাটন ক্রসিং দিয়ে হেয়ার রোডের দিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও কাওরান বাজার থেকে শাহবাগমুখী গাড়িগুলো একইভাবে শেরাটন ক্রসিং দিয়ে হেয়ার রোডের দিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। মৎস্য ভবনের মোড়ে প্রচণ্ড যানজট থাকার কারণে গাড়িগুলো হেয়ার রোড থেকে কাকরাইলের দিকে চলে যায়। রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে আশেপাশের রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীরা। দুপুর ১২টা থেকে রাজধানীর উত্তরা, মিরপুর ও ঢাকা জেলার সাভার থানার নেতাকর্মীরা শাহবাগ জাদুঘরের সামনের রাস্তা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার গেটের সামনে অবস্থান নেন। সাভার থানা বিএনপির নেতাকর্মীদের কয়েকটি ছোট ট্রাকে করে আসতে দেখা গেছে।

এসময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। অনেকেই সেখানে দুপুরের খাবার খান। বেলা ২টার দিকে তারা সেখান থেকে মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাটের গেট দিয়ে মূলমঞ্চের সামনে যান। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার অধিকাংশ মিছিল ছবির হাট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করে। কিছু মিছিল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের গেটের সামনের গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করে।

বিএনপির জনসভাকে ঘিরে উদ্যান এবং তার আশেপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উদ্যানের ভেতর, শাহবাগ, টিএসসি, হাইকোর্ট মোড়, মৎস্য ভবনের মোড়ে কয়েক প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা যায়। শাহবাগ ও রমনা থানা পুলিশের সদস্যরাও তৎপর ছিলেন। এছাড়াও র‌্যাব-৩ এর সদস্যদের মৎস্য ভবন মোড় এবং আশেপাশের এলাকায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে রমনা জোনের পুলিশের এসি এহসানুল ফেরদাউস সাংবাদিকদের জানান, সমাবেশ সুষ্ঠু করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক কাজ করেছে। মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগের শিশুপার্কের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ ছিল। তিনি আরো জানান, রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে যেন যানজট না হয় এজন্য ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে গাড়িগুলো উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) মো. মোসলেহ উদ্দিন জানান, রাস্তায় যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে সকাল থেকে তৎপর ছিল ট্রাফিক পুলিশ। ট্রাফিক পুলিশের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করার কারণে জনদুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হয়েছে।

উৎসঃ   মানবজমিন

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin