সিটি নির্বাচনে গাজীপুর ও খুলনায় প্রার্থী ঘোষণায় চমক বিএনপির

গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে গাজীপুরে পেয়েছেন হাসান উদ্দিন সরকার আর খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

সোমবার রাতে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত মনোনয়ন বোর্ড আগ্রহী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আগামী ১৫ মে গাজীপুর ও খুলনা সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে এই দুই সিটির নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। সর্বশেষ নির্বাচনে এই দুই সিটিতেই মেয়র পদে জয়লাভ করেন ধানের শীষের প্রার্থী। সেই ধারাবাহিকতা রাখতে চায় দলটির হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট একক প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দুই সিটিতে নির্বাচনকালীন পৃথক দু’টি সমন্বয়ক টিম গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

দুই সিটিতে বিএনপির ১০ নেতা মেয়র পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। প্রার্থী হতে দলের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন গাজীপুরে বর্তমান মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার, শ্রমিক দলের কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, জেলা বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, মেয়র আবদুল মান্নানের ছেলে এম মনজুরুল করীম রনি, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শরাফত হোসেন এবং জেলা বিএনপির সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক শওকত হোসেন সরকার। আর খুলনা সিটিতে মেয়র পদে লড়তে চান বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বর্তমান মেয়র খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি ও জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা।

‘এটা স্যাম্পল, সামনে আরও আসছে’

সোমবার সকালে বিএনপি অফিস জমজমাট। গতকালও নেতাদের চোখে মুখে ছিল হতাশা, আতঙ্ক। আর আজ নেতাকর্মীরা যেন উল্লাস চেপে রাখতে পারছিলেন না। দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী টেলিভিশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা লাইভ দেখছিলেন। সারা দেশে ছাত্রদলের নেতাদের ফোন করছিলেন।

কাউকে কাউকে ধমক দিচ্ছিলেন, ‘এখনই ক্যাম্পাসে যাও, রাস্তা অবরোধ করো।’ ১২টার মধ্যেই মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কার্যালয়ে এলেন। এলেন মির্জা আব্বাসসহ আরও নেতৃবৃন্দ। মির্জা আব্বাস ফোন করলেন বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে। মির্জা আব্বাস মিন্টুকে বললেন, ‘কংগ্রাচুলেশনস। ভালোই করছেন সারারাত। এইটারে চালায়া যাইতে হইব।’ স্পিকার অন করে অন্যদের শুনিয়েই কথা বলছিলেন মির্জা আব্বাস। ওপর প্রান্ত থেকে আব্দুল আউয়াল মিন্টু বললেন, ‘এইটা তো কেবল স্যাম্পল, সামনে আরও আসছে।’

রোববার রাতভর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈরাজ্য, উপাচার্যের বাড়িতে তাণ্ডব, গুজব ছড়িয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করা যে একটি নীলনকশা, বিএনপির কার্যালয়ে কিছুক্ষণ থাকলে তা কারও বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়।

কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ আছে। তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, এই তথ্য সবার জানা। কিন্তু যেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরাও জানতেন না যে, তাঁদের মধ্যে তারেক জিয়ার নিজস্ব ক্যাডাররা ঢুকে গেছে। এই আন্দোলনকে সহিংস রূপ দিয়ে, সরকার পতনের দিকে নিয়ে যাওয়াই হলো এই ক্যাডারদের কাজ। লন্ডন থেকে রাতভর এই সহিংসতাকে উস্কে দিয়েছেন তারেক জিয়াই।

অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে, একজন শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে, এই গুজবও ছড়িয়েছে তারেক জিয়ার ক্যাডাররাই। এরপর উত্তেজিত ছাত্রদের নেতৃত্ব নিয়েছে প্রশিক্ষিত এই বাহিনীর সদস্যরা। তারা উপাচার্য বাসভবনের হামলা চালিয়েছে। লন্ডনে তারেক জিয়া এবং ঢাকায় আব্দুল আউয়াল মিন্টু পুরো ঘটনার তদারকি করেছে।

এখন তাঁদের লক্ষ্য যেকোনো ভাবে এই আন্দোলন সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে দেওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা স্বীকার করেন যে, ‘একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে তারা ইমোশনাল হয়ে পড়েন।’ অন্য একজন শিক্ষার্থী বলেছেন, ‘হঠাৎ কয়েকজন যুবক হৈ হৈ বলে ভিসির বাসার দিকে ছুটে গেলো। আমরাও না বুঝে তাঁদের পিছনে ছুটলাম।’ পুরো ঘটনাই ছিল পরিকল্পিত। যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেছে শতাধিক দক্ষ ক্যাডার।

এরা তারেক জিয়ার বেতনভুক নিজস্ব বাহিনী। এরা তরুণ স্মার্ট। চট করে এদের অছাত্র ভাবা অসম্ভব। মূলত: ছাত্রদল এবং শিবির থেকে বাছাই করা তরুণদের নিয়ে তারেকের এই নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী গঠিত। এরা বেতনভুক্ত। সরকার পতনে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারেক জিয়া এখন যে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছেন। এটা তাঁরই একটি। শিক্ষার্থীরা আবেগপ্রবণ, তাদের খেপিয়ে তোলা সহজ।

এই বিবেচনা থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এরকম আরও কিছু আন্দোলনের নীল নকশা তৈরি হয়েছে বলেও জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, ‘শিগগিরই দেখবেন সচিবালয়ে আন্দোলন। তারেক জিয়া সেটা নিয়ে কাজ করছেন। এরকম নানা জায়গায় আন্দোলনের বোমা পুঁতে রাখা হচ্ছে। একসময় গুজব ছড়িয়ে খেপিয়ে তোলা হবে, বিভিন্ন পেশার মানুষকে।’ ওই নেতা বলেন, ‘এজন্যই তারেক জিয়া বিএনপিকে আন্দোলন না করার পরামর্শ দিয়েছেন।

বিএনপি ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, দেশে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারের পতন ঘটানোই তারেকের মূল পরিকল্পনা। আর কোটা সংস্কারের একটা নিরীহ আন্দোলনকে সহিংস করে তুলে, সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু করলেন লন্ডনে পলাতক ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিচিতি পাওয়া তারেক জিয়া।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin