bnp-flag

সরকারের টার্গেটে বিএনপির জনপ্রিয় ও সক্রিয় নেতারা

বিএনপির জনপ্রিয় ও সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় সিনিয়র নেতাদের বিপাকে ফেলতে সরকার টার্গেট করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে দলটি। বিএনপি নেতারা বলছেন, দল পরিচালনায় শূন্যতা তৈরি করতেই সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে ‘সন্দেহজনক লেনদেন’সহ নতুন-নতুন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে দলকে যারা ঐক্যবদ্ধ রেখে সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় থেকেছেন, তাদের সেই ঐক্য ছিন্ন করার উদ্দেশ্যেই সরকারের নির্দেশেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কৌশল নিয়েছে। তারা এও বলছেন, অভিযোগে যে সব ব্যাংক থেকে লেনদেনের কথা বলা হয়েছে, অনেকের সেসব ব্যাংকে কোনও অ্যাকাউন্টই নেই।

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, যে আটনেতার বিরুদ্ধে সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ তোলা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকেই বর্তমানে বিএনপির নেতৃত্বে সবচেয়ে অগ্রগামী ভূমিকা রাখছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমন্বয়ে এই নেতারা বিভিন্নভাবে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে এখন বেশি কার্যকর। আর এ বিষয়টিই ক্ষমতাসীন দলকে বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, অভিযুক্ত খন্দকার মোশাররফ হোসেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর থেকে সিনিয়র হিসেবে স্থায়ী কমিটিতে জোরালো ভূমিকা রাখছেন। নজরুল ইসলাম খান দলের সাংগঠনিক বিষয়ে শক্তিশালী অবস্থানে আছেন। অসুস্থতা থাকলেও তিনি নিয়মিত দলের কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসায়ী।

দলের সাংগঠনিক নীতি-নির্ধারণী ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোয় ভূমিকা রাখেন তিনি। ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান ধনী ব্যবসায়ী ও দলের নীতিনির্ধারণে সহযোগিতা করেন। আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও দলীয় কর্মকাণ্ডে অর্থনৈতিক ভূমিকার বিষয়ে দলে তার প্রশংসা রয়েছে। ঢাকা মহানগরের রাজনীতিতে দৃশ্যমান ঐক্য ও সাংগঠনিকভাবে সংহত অবস্থান রয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের। এছাড়া তাবিথ আউয়ালও নতুন করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দলের হয়ে কাজ করছেন।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের টার্গেট করার মানেই হচ্ছে, দলের স্বাভাবিক পরিচালনাকে বিনষ্ট করা। তারা এও বলছেন, এভাবে টার্গেট করলেও বিএনপি অক্ষত থাকবে এবং নেতাদের ঐক্যও অটুট থাকবে।

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সারা জীবনেই সাত কোটি টাকা লেনদেন করেছি বলে মনে হয় না। আসলে এটা নোংরা রসিকতা। দুদক মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করেছে। তারা (দুদক) নিজেদের স্বাধীন বলে দাবি করে। আসলে কি তারা স্বাধীন?’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে লিখতে পারেন, মিথ্যা মামলা দিতে পারেন। কিন্তু আমাদের নীতিভ্রষ্ট করা যাবে না, আমাদের ঐক্য বিনষ্ট করা যাবে না। আমরা দীর্ঘ রাজনীতি করে বর্তমান পর্যায়ে এসেছি।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এসব অভিযোগ একদলীয় শাসন কায়েমের অংশ। আসলে সরকার আর্থিক খাত ধ্বংস করে টাকা লুট করেছে। দুর্নীতিও আজকে একদলীয় হয়ে গেছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘একদলীয় প্রচারণার জন্য আওয়ামী লীগ ২৫টি পোর্টাল খুলেছে। তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে শুধু ক্ষমতা দখলের জন্য।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘ব্যবসা করি, লেনদেন হতেই পারে। কিন্তু দুদকের অভিযোগ বানোয়াট। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গোয়েন্দা সংস্থার উচিত মানুষকে সত্যটা জানানো, কারও বিশেষ কাজে ব্যবহৃত না হওয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুদককে বলবো—জনগণের টাকায় আপনাদের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জনগণকে হয়রানি করবেন না। বরং সুষ্ঠু তদন্ত করুন। নইলে এই দেশ ধ্বংসের জন্য আপনারা দায়ী থাকবেন।’

এ বিষয়ে বিএনপির অন্যতম স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা যারা সক্রিয় এবং যৌথ নেতৃত্বে দল পরিচালনা করছি, তাদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টিসহ চাপে রাখাতে বিষয়টা আনা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার নামে যে দুই ব্যাংকের কথা বলা হয়েছে, ডাচবাংলা ব্যাংকের কথা বলা হয়েছে, সেই ব্যাংকে আমার কোনও দিন অ্যাকাউন্ট ছিল না, এখনও নেই। শুধু আমার নয়, আমার পরিবারের কারও অ্যাকাউন্ট নেই। এতে বোঝা যায়, এসব অভিযোগের সবই বানোয়াট, কল্পনাপ্রসূত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য মানে হলো আমাদের চাপে রাখা।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুদক একটি স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে সরকারের কোনও হাত নেই।’ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু বিএনপি নেতাই নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সরকার অনেক কঠিন। দলের অনেকেও দুদকের নজরে আছে। ইতোমধ্যে দুদক আওয়ামী লীগের অনেক এমপি-মন্ত্রীসহ প্রভাবশালীদের তলব করেছে। আজকেও একজন এমপিকে তারা ডেকেছে।’

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিএনপির আট সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে, তারা হলেন স্থায়ী কমিটির চার সদস্য—খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মির্জা আব্বাস; দুই ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও এম মোর্শেদ খান; যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। এ ছাড়া এম মোর্শেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোর্শেদ খানের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান হচ্ছে।
বাংলা ট্রিবিউন

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin