kader_photo

সব কিছুতে সরকারের যোগসুত্র খোঁজেন কেন? সাংবাদিকদের কাদের

ডিএনসিসি উপ-নির্বাচন স্থগিত করে দেয়া হাইকোর্টের আদেশের সঙ্গে সরকারের কোনো যোগসাজশ নেই বলে দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, সব কিছুতে সরকারের যোগসুত্র খোঁজেন কেন।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভোট ৩ মাসের জন্য হাইকোর্ট স্থগিত করা সাথে সরকারের কোন যোগসূত্র আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ দাবি করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন দলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুনাহার চাপা প্রমুখ।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সব কিছুতে সরকারের যোগসুত্র খোঁজেন কেন? সরকারের কোনো যোগসাজশ নেই। আমরা তো গতকাল মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছি। আজ দুই সিটির ৩৬ জন কাউন্সিলরের নাম ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু হাইকোর্টে আদেশের কারণে আমরা তা স্থগিত করেছি।’

তিন মাস পর জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচন ঠিক হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘এটা নির্বাচন কমিশনারের ব্যাপার। এটা নির্বাচন কমিশন জানে’

মন্ত্রী বলেন, ‘হাইকোর্টের স্থগিত আদেশ আমাদের মেনে নিতে হবে। যদি হাইকোর্টের রায় পরিবর্তন হয় তাহলে আমরা ঘোষণা করব।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা সব কিছু ঠিক করে ফেলেছি। কিন্তু অন্য কোন দল তো তাদের কাউন্সিলর নাম ঠিক করতে পারেনি। শুধু মাত্র মেয়র প্রার্থীর নাম ঠিক করেছে। যেহেতু হাইকোর্ট থেকে ভোট স্থগিত করা হয়েছে তাই আমরা কাউন্সিলরদের নাম ঘোষণা করতে পারব না এখন। যদি এখন কাউন্সিলরের নাম আমরা ঘোষণা করি তাহলে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করা হবে।’

পরবর্তীতে প্রার্থীর কোন পরিবর্তন হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রার্থীতা আমরা দিয়েছি। যেহেতু নির্বাচন একটা তাই প্রার্থীতা এতো তাড়াতাড়ি পরিবর্তন হবে কিনা তা সময়ই বলে দিবে।’

এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপ নির্বাচন স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। একটি রিটের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ উপনির্বাচনের তফসিল কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে রুলও জারি করা হয়েছে।

বুধবার সকালে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটের নিষ্পত্তি করে রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।

গত ৯ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচনসহ সিটি কর্পোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া এলাকায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।

ওই তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গতকাল হাইকোর্টে পৃথক দুটি রিট করেন রাজধানীর সদ্যবিলুপ্ত ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম এই রিট করেছিলেন। রিটে নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রিটটি করেছিলেন তারা।

রিটে উল্লেখ করা হয়, সিটি করপোরেশন আইন অনুসারে ৭৫ শতাংশ কাউন্সিলর নির্বাচনের মাধ্যমে ফল সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হবে। এর ভিত্তিতে মেয়র পদ গঠিত হবে। অথচ গত বছরের জুলাইতে উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৮টি ওয়ার্ড সম্প্রসারিত করা হয়। এ অবস্থায় ৭৫ শতাংশ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচন হচ্ছে না। নতুন পুনর্গঠিত ওয়ার্ডের ভোটার তালিকা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিটটি করা হয়।

তাছাড়া মনোনয়ন দাখিল করতে হলে ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষরসহ তা জমা দিতে হবে। কিন্তু, রিটকারীর এলাকার ভোটার এখনো তালিকাভুক্তই হননি, যার ফলে তিনি স্বাক্ষর নিতে পারছেন না।

পরে রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসান হাবীব ভূঁইয়া জানান, একই আদালতে আরো একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। দুটি আবেদনেই নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিলের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে। দুটি আবেদনের বিষয়েই আদেশ দেওয়া হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি।

এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে বিকাল সাড়ে ৩টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তফসিল অনুযায়ী, এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র কেনা ও জমা দেওয়া যাবে আগামীকাল ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। আবেদনকারী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২১ ও ২২ জানুয়ারি। তা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৯ জানুয়ারি।

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রচার চালানো যায় না। সে অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারি থেকে প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভোট হয়। আওয়ামী লীগের সমর্থনে ওই নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন সদ্য প্রয়াত আনিসুল হক। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতবছরের ৩০ নভেম্বর তার মৃত্যুতে স্থানীয় সরকার বিভাগ ১ ডিসেম্বর থেকে ওই পদটি শূন্য ঘোষণা করে।

হার নিশ্চিত জেনে সুযোগ নিয়েছে সরকার

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিলের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এটি নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতা। সরকার হেরে যাওয়ার ভয়ে এ সুযোগ নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল।

আজ বুধবার সকালে এ উপনির্বাচনের তফসিলের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ডিএনসিসির সম্প্রসারিত অংশের কাউন্সিলর নির্বাচনের সার্কুলারের কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়। পৃথক দুটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

উপনির্বাচন স্থগিত সম্পর্কে হাইকোর্টের নির্দেশের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতা। কারণ, তারা সীমানা নির্ধারণ না করেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এটা আইন অনুযায়ী হয় না।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সরকার যেহেতু নির্বাচনের ফলাফল আগেই জানত, অর্থাৎ তারা হেরে যাবে, তাই তারা সুযোগ নিয়েছে বলে আমরা মনে করি।’

৯ জানুয়ারি মেয়র পদে উপনির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিল ও ১৮টি সম্প্রসারিত অংশে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর নির্বাচনে সার্কুলার কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল চেয়েছেন হাইকোর্ট।

গত ৩০ নভেম্বর মেয়র আনিসুল হকের আকস্মিক মৃত্যুর পর ডিএনসিসির মেয়র পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসির মেয়র পদসহ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি করে ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং ৬টি করে ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডেরও ভোট হওয়ার কথা ছিল।

৯ জানুয়ারি তফসিল ঘোষণার এক সপ্তাহের ব্যবধানে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গতকাল পৃথক রিট হয়। একটি রিটের আবেদনকারী ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। অপর রিট আবেদনকারী হলেন বেরাইদ ইউপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin