alig_bnp

সবার কৌতূহল এখন নির্বাচনকালীন সরকারে

ভোটের বছর ২০১৮ সাল শুরু হতে না হতেই ফের শুরু হয়ে গেছে ভোট-রাজনীতির বাহাস। এটা কোনো হারজিতের বাহাস নয়। ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ নিয়েই চলছে যুক্তি-তর্ক বাহাস। বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সবখানে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ কী হবে তা নিয়ে কৌতূহল আরও জোরালো হয়েছে রাজনীতি সচেতন সকল শ্রেণী-পেশার জনগণের মাঝে।

সেই সাথে সবার মাঝে আশাবাদের সাথে নানামুখী প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের মুখে সেই একই কথা, আমরা চাই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হোক একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।

দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও সার্বিকভাবে শান্তির জন্যই তা অপরিহার্য।

একদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় ‘নির্বাচনকালীন সরকারে’র অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অপরদিকে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলছে, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের’ কিংবা ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারে’র কোনো বিকল্প নেই। একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য এটি এখন পর্যন্ত বিএনপির প্রধান দাবি।

এদিকে বর্তমান মহাজোট সরকারের চতুর্থ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কীভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে।

সেই সরকার নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করবে। আমি আশা করি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সকল দল আগামী সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে সহায়তা করবেন’।

প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত ভাষণে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ প্রসঙ্গটি এখন সচেতন বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন আঙিকে আলোচনা-পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে মানুষের আলাপচারিতা থেকে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ বিষয়টি একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে ফুটে উঠছে।

গতকাল (শনিবার) চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থানে আলাপে-আড্ডায় এ বিষয়টি সম্পর্কে লোকজনকে বলতে শোনা যায়, সরকারি দল আওয়ামী লীগ বলছে ‘নির্বাচনকালীন সরকারে’র অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তা হবে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই। আবার মাঠের প্রধান বিরোধী দলের দাবিটি হলো, ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার’।

একই সঙ্গে বিএনপি নির্বাচনের পূর্বে সংসদ (দশম) বিলোপের দাবিও তুলেছে।

এখনও রাজনীতির দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থানকারী দুটি প্রধান দল দূরত্বে থাকলেও জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ যে অপরিহার্য দিক তা উভয় পক্ষের বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হচ্ছে। যা একটি ইতিবাচক দিক বটে। তবে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ অথবা ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারে’র রূপরেখা ও কাঠামো কীভাবে হবে তা নিয়ে উভয় পক্ষকে সংলাপে মিলিত হওয়া দরকার।

এরজন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সক্রিয় ও বলিষ্ঠ ভূমিকা আশা করেন দেশবাসী। তাহলে ভোটের আগে দুই প্রধান দল নির্বাচনী পথরেখা নিয়ে আরও কাছাকাছি অবস্থানে চলে আসতে পারে। দীর্ঘদিন পর বরফ গলতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর ভাষণকে অনেকে গভীর তাৎপর্যের সাথে আলোচনায় তুলে আনছেন।

এদিকে বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের চতুর্থ বর্ষপূর্তি (গত শুক্রবার) উদযাপনের পর আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখন সময় গণনার পালা শুরু হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই। সেই হিসাবে জাতীয় নির্বাচনের জন্য অপেক্ষার পালা আর এক বছরেরও কম সময়।

বর্তমানে তীব্র শীতের মাঝেই শহর-নগর-গ্রামেগঞ্জে ভোট রাজনীতির মাঠ সরগরম শুরু হতে দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী বা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ‘ভোটের বার্তা’ দিয়ে বড় বড় ও হাস্যোজ্জ্বল ছবি সম্বলিত ‘শুভেচ্ছা-স্বাগতম’ ব্যানার পোস্টার বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রতিটি এলাকা।

চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলায় নির্বাচনী আসন রয়েছে ১৬টি।

প্রত্যেক আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ এবং তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আগের চেয়ে বেশি তৎপরতায় ভোটের হাওয়া জানান দিচ্ছে। চায়ের আড্ডা সর্বত্র জমে উঠেছে ভোটের আলোচনা ঘিরে। নিজ নিজ এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি আগামীতে নির্বাচনী পরিবেশ তথা একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের আকাক্সক্ষা ফুটে উঠছে মানুষের আলাপচারিতা থেকে। কেউই আর আশা করেন না ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো ভোটারবিহীন ও একপেশে নির্বাচন।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দুই প্রধান দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মাঝে রাজনৈতিক কথামালায় সরব বাহাস যেমন চলছে, তেমনি নির্বাচনমুখী মাঠ সাজাতে এবং নিজেদের দলীয় বিরোধ-বিবাদ, ঝক্কি-ঝামেলা মিটিয়ে গুছিয়ে নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ আর বিএনপি জোরালো তৎপর রয়েছে। নেতা-মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সম্ভাব্য প্রার্থী কিংবা নতুন মুখের মনোনয়র প্রত্যাশীরা যার যার এলাকায় ছুটছেন অবিরাম।

তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা আগের ঢিমেতালে অবস্থা কাটিয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। তবে বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতা, মনোনয়ন, আর্থ-স্বার্থগত ও পদ-পদবীর দ্ব›েদ্ব উভয় দলের স্থানীয় পর্যায়ে আন্তঃকোন্দল গ্রুপিং সমস্যা কাটেনি। বরং কোথাও কোথাও কলহ-কোন্দল নতুন মাত্রায় মাথাচাড়া দিয়েছে।

ইনকিলাব

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin