soskar_bnp

সংস্কারপন্থীদের কদর বাড়ছে বিএনপিতে

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার অংশ হিসেবে সংস্কারপন্থিদের সক্রিয় করা এবং বহিষ্কৃত কয়েক নেতাকে দলে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। দলের অন্ত্মঃকোন্দলজনিত বিশৃঙ্খলা এড়াতে এরই মধ্যে গোপনে এক নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারও করা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাদিক নেতা জানান, আগামী নির্বাচনের আগে দলের প্রতিটি স্ত্মরকে শক্তিশালী করতে চায় বিএনপি। কোনো পর্যায়ে যাতে ত্রম্নটি না থাকে সেদিকটা লক্ষ রেখে সংস্কারপন্থিদের দলে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ১/১১ প্রেক্ষাপটে ভুল করা নেতারা এরই মধ্য শিক্ষা পেয়েছেন বলে দলের হাইকমান্ড থেকে শুরম্ন করে অধিকাংশ নেতাকর্মীরা মনে করেন। তবে দলের একটি অংশ এখনো বিশ্বাসঘাতকার বিষয়টি মনে রেখে সংস্কাপন্থিদের দলে নিতে নারাজ।

কিন্তু প্রায় দুই ডজন নির্বাচনী আসনে সংস্কারপন্থি নেতা স্থানীয় পর্যায়ে এখনো নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখায় দলের হাইকমান্ড তাদের দলে সম্মানের সঙ্গে ফেরাতে চান। এর অংশ হিসেবে এক নেতার এক পদ নিয়ম কার্যকর করে প্রায় ১০ নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটির পদে আনার চিন্ত্মাভাবনা করা হচ্ছে। অনেককে বিষয়ভিত্তিক উপকমিটিতে স্থান দেয়া হচ্ছে।

অনেকে পাবেন জেলা কমিটির গুরম্নত্বপূর্ণ পদ। এছাড়া প্রায় বেশ কয়েকজন নেতাকে বিএনপির ব্যানারে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য প্রস্ত্মুতি নিতে বলা হয়েছে। আর সংস্কারপন্থি এবং অন্ত্মঃকোন্দেলের কারণে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া কয়েক নেতাকে এরই মধ্যে গোপনে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে দলের ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

ওয়ান ইলেভেনের সময় দলে সংস্কার প্রস্ত্মাবের পক্ষে অবস্থান নেয়ার অভিযোগে তখনকার মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন ও দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে বহিষ্কার করা হয়। গত ১৯ নভেম্বর অতি গোপনে তৃপ্তির বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্রটির দাবি, মূলত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অভ্যন্ত্মরীণ কোন্দল যাতে মাথাচারা দিতে না পারে সেজন্য গোপনে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিষয়টি এতটাই গোপন রাখা হয়েছে যে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিভাবক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম ছাড়াও কেন্দ্রীয় দাপ্তরিক কাজে নিয়োজিত প্রভাবশালী নেতারাও বিষয়টি জানতে পারেননি।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তৃপ্তি। জোট সরকারের সময় হাওয়া ভবনের প্রভাবশালী নেতাদের একজন ছিলেন তিনি। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে আপাতত কোনো কথাও সংবাদ মাধ্যমকে বলতে রাজি নন তৃপ্তি। এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানান দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রম্নহুল কবির রিজভীও।

এদিকে দীর্ঘদিন পর তৃপ্তির বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়ায় আশাবাদী হয়ে উঠেছেন সংস্কারপন্থি অন্য প্রভাবশালী নেতারা। দুই ডজন আসনে বছরের পর বছর ধরে নিজেদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখা নেতারা এখন দলের কেন্দ্রীয় পদের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের টিকিটেরও আশা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলে সক্রিয় হতে না পারলেও গত ১০ বছরে নিজ এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখা সংস্কারপন্থি নেতাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন নরসিংদীর সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, বরিশালের জহিরউদ্দিন স্বপন, শাহ মো. আবুল হোসাইন, ঝালকাঠি-সদরে ইলেন ভুট্টো, যশোরের মফিকুল হাসান তৃপ্তি, নারায়ণগঞ্জের আতাউর রহমান আঙ্গুর,

ময়মনসিংহের দেলোয়ার হোসেন খান দুলু, আনোয়ার হোসেন খান চৌধুরী, পাবনার আনোয়ার হোসেন, চাঁদপুরের এস এ সুলতান টিটু, কক্সবাজারের ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামান, বরগুনার নুরম্নল ইসলাম মনি, মেহেরপুরের আবদুল গণি, মৌলভীবাজারের এম এম শাহীন, নোয়াখালীর ফজলে আজিম, গাইবান্ধার শামীম কায়সার লিঙ্কন, সুনামগঞ্জের নজির হোসেন ও নওগাঁর সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরম্নতেই সংস্কারপন্থিদের দলের ফেরানোর সিদ্ধান্ত্ম নেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর অংশ হিসেবে এ বছরের ২৩ ফেব্রম্নয়ারি সংস্কারপন্থি নেতা সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ও জহির উদ্দিন স্বপনকে দলে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের কাজ করার নির্দেশ দেন খালেদা জিয়া। তারপর আরেক নেতা নজির হোসেনও দেখা করেন বেগম জিয়ার সঙ্গে। আগামী নির্বাচনে নিজ নিজ আসনে বিএনপির হয়ে নির্বাচনের জন্য এরই মধ্যে দলের সবুজসংকেত পেয়েছেন বলে দাবিও করেন সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ও জহির উদ্দিন স্বপন।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ২৫ জুন খালেদা জিয়াকে মাইনাস করে সংস্কার প্রস্ত্মাব উত্থাপন করেন তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। তাকে সমর্থনকারী নেতারা সংস্কারপন্থি বলে বিএনপিতে পরিচিতি লাভ করেন। ওই বছরেরই ৩ সেপ্টেম্বর মান্নান ভূঁইয়াকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হলে সংস্কারপন্থিরা তার নেতৃত্বে তৎপরতা চালাতে থাকেন। কার্যত তখন থেকেই বিএনপিতে সংস্কার ও খালেদাপন্থি দুটি ধারা তৈরি হয়। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মহাসচিব হওয়ার পর বিভেদ আরও বাড়ে।

কারণ, তিনি ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কমিটি গঠনের নামে সংস্কারপন্থিদের বিতাড়িত করেন। ফলে মান্নান ভূঁইয়ার সমর্থকরা দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। বিএনপি চেয়ারপারসন ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর সংস্কারপন্থি প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা ভোল পাল্টিয়ে মূলধারায় ফেরত আসেন। এরপরও প্রায় অর্ধশতাধিক সাবেক সংসদ সদস্য ও নেতা দলের বাইরেই থেকে যান। তারা বিএনপির কর্মকাণ্ড- এবং কমিটিতে আসতেও ব্যর্থ হন। প্রায় ১০ বছর দলীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও এসব নেতা অন্য দলে যোগ দেননি।

যায়যায়দিন

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin