‘শেখ হাসিনা আমাদের ভেড়া বানিয়েছে’

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেছে এটা পুরনো খবর। তবে, মেয়র নির্বাচনের ছোট্ট একটা টর্নেডো বিএনপিকে এবং ২০ দলীয় জোটকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। প্রকাশ্যে বিএনপি সরকারকে দুষছে, আর একান্তে নিজেদের ‘আহাম্মক’ বলে গালি দিচ্ছে। না বুঝেই বিএনপি মেয়র নির্বাচন ইস্যুতে ঝাপ দিলো। এর ফলে বিএনপির ক্ষতি হলো দুটো।

প্রথমত: বিএনপির পরীক্ষিত এবং ত্যাগী নেতারা বুঝলেন, ত্যাগ স্বীকার করে লাভ নেই, বিএনপির মনোনয়ন টাকাওয়ালাদের জন্য নির্ধারিত। তাঁরা এখন নিজেদের গুটিয়ে রাখবে। দ্বিতীয়ত: এই নির্বাচনী ফাঁদ ২০ দলীয় জোটের ফাটল ধরিয়ে দিলো। বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র জামাতের সঙ্গে তাঁদের বিরোধ প্রকাশ্যে নিয়ে এলো।

বিএনপির অনেক নেতাই শুরু থেকে এই নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। বিএনপির চেয়ারপারসনকে তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে বলেছিলেন, এই নির্বাচন সরকার করবে না, নির্বাচনের নাটক করে বিএনপিকে অস্থির করাই সরকারের কাজ। কিন্তু বেগম জিয়া নেতাদের ঐ সব কথা পাত্তা দেননি। বরং তাঁর পুত্র তারেক রহমানের নির্দেশে তাবিথ আওয়ালকে প্রার্থী করা হয়।

বিএনপি মেয়র নির্বাচনে এতোটাই উৎসাহী ছিলো যে ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের ঘোষণার আগেই তাঁরা প্রার্থীতা ঘোষণা করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, ‘মেয়র নির্বাচনের ডামাডোলে আওয়ামী লীগ বিএনপি কারো লাভ হয়নি, লাভ হয়েছে তারেক জিয়ার। তারেক জিয়া মনোনয়ন দিয়ে যা নেওয়ার নিয়ে নিয়েছে।’ জামাতের মেয়র প্রার্থী সেলিম উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, ‘একশ কোটি টাকার বিনিময়ে তাবিথকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন তারেক জিয়া।’

তবে, বিএনপির প্রায় সব নেতাই একান্তে বলছেন,‘আওয়ামীলীগ,বিশেষ করে শেখ হাসিনার কৌশলের কাছে আরেকবার ধরাশায়ী হলো বিএনপি’। মেয়র নির্বাচনের বিরোধী ছিলেন মির্জা আব্বাস। এই নির্বাচন যে হবে না সেটা আগেই বলেছিলেন তিনি। হাইকোর্টের আদেশের পর তিনি কর্মীদের বলেছেন,‘শেখ হাসিনা আমাদের ভেড়া বানিয়েছেন। উনি নাচাচ্ছেন, আমরা নাচছি। কি আশ্চর্য্য!

বিএনপির আরেক নেতা আমির খসরু মাহমুদ হাইকোর্টের আদেশের পর, তার কর্মীদের কাছে নিজের অজ্ঞতাই স্বীকার করে বলেছেন,‘হোয়াট এ গেম প্ল্যান। আমাদের তো বেকুব বানিয়ে ছেড়েছে।’ কর্মীদের কাছে তিনি মন্তব্য করেছেন,‘ আমরা যদি শেখ হাসিনার গেম প্ল্যান বুঝতে না পারি। তাহলে আগামী নির্বাচনেও আমরা ধোকা খাবো।’ মেয়র নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। হাইকোর্টের আদেশের পর।

তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন,‘ এটা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের যৌথ প্রযোজনা’। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের আগে কর্মীদের বলেছেন,‘শেখ হাসিনা একটা করে ইস্যু দিচ্ছে। আমরা তার পিছনে ছুটছি। এরপর আরেকটা ইস্যু। এমন করে নির্বাচনটাও করে ফেলবে।’ রিজভী মনে করেন,‘বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আরো দূর দৃষ্টির পরিচয় দিতে হবে।’

জামাত নেতারা বলছেন,‘মেয়র নির্বাচন আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা বুঝতে পেরেছি বিএনপি কত স্বার্থপর একটি দল।’

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin