লক্ষ্মীপুরে আ.লীগে আত্মীয়তাই শেষ কথা

নেতা নির্বাচনে আত্মীয়তার সম্পর্কই শেষ কথা লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগে। প্রভাবশালী দুটি পরিবারের আত্মীয়স্বজনই নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় রাজনীতি। একটি পরিবারের প্রধান লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র আবু তাহের। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তাঁর ছেলে কে এম সালাহ উদ্দিন (টিপু) জেলা যুবলীগের সভাপতি।

আবার সালাহ উদ্দিনের আপন মামাতো বোনের স্বামী নুর উদ্দিন চৌধুরী লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। নুর উদ্দিনের পরিবারের আরও ছয়জন জেলা কমিটিতে রয়েছেন। তাঁর বোনের ভাশুর হারুনুর রশিদ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। দুই ফুফাশ্বশুর এম এ তাহের ও ইসমাইল খোকন সদস্য, বোনের স্বামী মামুনুর রশিদ, ফুফা মিজানুর রহমান এবং মামা কবির পাটোয়ারীও জেলা কমিটির সদস্য।

দলীয় সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ নুর উদ্দিন চৌধুরী হাতে। যুবলীগ চলছে সালাহ উদ্দিনের ইশারায়। তিনি সদর উপজেলা পরিষদেরও চেয়ারম্যান।

২০১৫ সালের ৩ মার্চ লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। এতে সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন এম এ তাহেরসহ চারজন। সাধারণ সম্পাদক পদে নুর উদ্দিন চৌধুরীসহ পাঁচজন প্রার্থী হন। শ্বশুর-জামাই (তাহের ও নুর উদ্দিন) একজোট হয়ে সভাপতি ও সম্পাদক পদে প্রার্থী হন। পরে কেন্দ্রের নির্দেশে গোলাম ফারুককে (পিংকু) সভাপতি এবং নুর উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। তবে দলীয় কর্মকাণ্ডে সভাপতি খুব একটা সক্রিয় নন। সাধারণ সম্পাদকের ওপরই কার্যত সবকিছু নির্ভর করে।

দলীয় সূত্র জানায়, গত বছর জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাহের ও নুর উদ্দিনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নুর উদ্দিন প্রার্থী হলে তাহেরের স্ত্রী নাজমা তাহেরও প্রার্থী হন। দুজনই মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। পরে দল থেকে মো. শাহজাহানকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব এখনো রয়ে গেলেও তা কর্মী পর্যায়ে ছড়ায়নি।

দুই পরিবারের বাইরে জেলা কমিটিতে অন্য যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের মতামত দলে তেমন গুরুত্ব পায় না। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে চান না তাঁরা। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও লক্ষ্মীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, অনেক নেতা জনগণের জন্য রাজনীতি করতে আসেননি।

তাঁরা নিজের জন্য করতে এসেছেন। জনগণের জন্য রাজনীতি না করার কারণে লক্ষ্মীপুরে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। দলের মধ্যে কারা নিজের জন্য রাজনীতি করছেন, এটি স্পষ্ট করেননি তিনি।

জেলা যুবলীগের সভাপতি এ কে এম সালাহ উদ্দিন বলেন, একটা সময় লক্ষ্মীপুর বিএনপির ঘাঁটি ছিল। তাঁদের পরিবারের লক্ষ্য এই জেলাকে আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে গড়ে তোলা। দল যখন সরকারে ছিল না তখনো তাঁদের পরিবার মাঠে ছিল, এখনো রয়েছে। এ কারণে তাঁদের পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়দের অনেকে জেলার বিভিন্ন কমিটিতে রয়েছেন।

অবশ্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার আগেই তাঁর আত্মীয়েরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে ছিলেন। একসময় লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল। তিনি নেতৃত্বে আসার পর মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যানসহ কমপক্ষে ৫০ জন দল থেকে নির্বাচিত হন। দল এখন সুসংগঠিত বলে দাবি করেন তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রুহুল আমিনের বর্তমান কমিটিতে জায়গা হয়নি। অথচ ছাত্রলীগ থেকে ধাপে ধাপে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। একসময় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, পরে যুবলীগের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। ২০০৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।

এর আগে ছিলেন প্রচার সম্পাদক। তিনি বলেন, সুসময়ে দলে তাঁর স্থান হয়নি। এ নিয়ে কারও প্রতি ক্ষোভ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবারের লোকজন দলের বিভিন্ন পদে থাকলে একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা সহজ হয়।

prothom-alo

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin