fakhrulll

রংপুরে হিন্দুপল্লীতে হামলার সময় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো হাবিবের বাড়িতে ফখরুল

রংপুরে হিন্দুপল্লীতে হামলার সময় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো হাবিবুর রহমানের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হাবিবের বাবা আবদুর রাজ্জাকের হাতে এই সহায়তা তুলে দিয়েছেন তার বাড়িতে গিয়ে।

সোমবার রংপুর সদরের শয়েলশা ঠাকুরপাড়ায় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুপল্লী পরিদর্শক শেষে ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে লাল চাঁদপুর গ্রামে হাবিবের বাড়িতে যান ফখরুল।

ফেসবুকে ধর্মীয় অবমানাকর পোস্ট শেয়ার দেয়ার অভিযোগ তুলে গত ১০ নভেম্বর যে মিছিল থেকে ঠাকুরপাড়ায় হিন্দুপল্লীতে হামলা হয়, সেখানে ছিলেন হাবিবুর রহমানও। সেদিন হামলাকারীরা অন্তত ১১টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া ছাড়াও বেপরোয়া ভাঙচুর চালায় বেশ কিছু বাড়িতে, ভেঙে দেয়া হয় মন্দির।

এ সময় পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাদের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়ায় হামলাকারীরা। পরে পুলিশ গুলি চালালে আহত হয় বেশ কয়েকজন। নিহত হন হাবিবুর রহমান।

হিন্দুপল্লীতে হামলার এই ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ে দেশে গুরুত্ব পাওয়া ঘটনাগুলোর একটি। এরই মধ্যে সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থা হামলাকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই হামলায় জড়িত এবং মদদ দেয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে একাধিক, গ্রেপ্তারও হয়েছে বেশ কয়েকজন।

সরকারি দলসহ বেশ কিছু সংগঠনের নেতা-কর্মী, সদস্যরা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী পরিদর্শন করতে গিয়ে তাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের পাশাপাশি বিচারের আশ্বাস দেন। তবে এদের কেউই হামলাকারী হাবিবের বাড়িতে যাননি।

মির্জা ফখরুল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুপল্লী পরিদর্শনে যান। সেখান থেকে বেলা ১২টার দিকে যান হাবিবের বাড়িতে। সেখানে তিনি হাবিবের বাবা আব্দুর রাজ্জাকের কাছে অর্থ সহায়তার একটি খাম তুলে দেন।

হাবিবের বাবা সাংবাদিকদেরকে তার ছেলের বিষয়ে কিছু না বললেও বলেন, ‘আমিও এই ঘটনার বিচার চাই।’

মির্জা ফখরুল হাবিবের পরিবারকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা এই ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি। তদন্ত করে যারা প্রকৃত অপরাধী তাদেরকেই শাস্তি দিতে হবে। আমরা প্রশাসনকে বলেছি, যারা নিরপরাধ তাদের কাউকে হয়রানি না করতে। আমরা আশা করব এই ঘটনায় নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হবে না।’

এর আগে হিন্দু পল্লীতে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকেও ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেন ফখরুল। সেখানে তিনি বলেন, ‘কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা হলেই সরকার আমাদের দোষারোধ করে। কিন্তু তখন আমি তাদের বলব, আপনারা আপনাদের খতিয়ানগুলো খুলে দেখবেন, স্টাটিসটিক দেখবেন কোন সরকারের আমলে বেশি করে এই হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার হয়েছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার হয়েছে। তাহলেই বোঝা যাবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই অত্যাচার বেশি হয়েছে।’

এই ঘটনায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপির উপর দোষ চাপানো হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আপনারা রামুর (কক্সবাজারে বৌদ্ধদের ওপর হামলা) ঘটনায় দেখেছেন যে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দই সেখানে এই কর্মকাণ্ড করেছে। একইভাবে পাবনা এবং নাসিরনগরের (ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিন্দুদের ওপর হামলা) ঘটনাও তারা ঘটিয়েছে।’

রংপুরে হিন্দুদের ওপর হামলায় এক বিএনপি নেতার নাম এসেছে- গণমাধ্যমকর্মীদের এমন মন্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে কেউ যদি করে থাকে তাহলে তারা ব্যক্তিগতভাবে করেছে, দলীয়ভাবে নয়।’

সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করার চেষ্টা করা দূরভিসন্ধি চলছে বলেও মনে করেন ফখরুল। বলেন, ‘আমরা মনে করি রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে তারা (সরকার)।’ তিনি বলেন, ‘এই ইস্যুগুলোতে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবেলা করতে হবে। যারা এই ধরনের সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, রংপুর নগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু, জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাটাইমস

আমরা তো চাই কিন্তু আপনারাই তো সাড়া দিচ্ছেন না: কাদেরকে ফখরুল

দেশে রাজনৈতিক বৈরী আবহাওয়ায় সাধারণত বিরোধী পক্ষের সঙ্গে সরকার দলীয় নেতাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয় না বললেইও চলে। নব্বইয়ে দশকে যতটুকুই হয়েছে ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে আর সেটাও হয় না।

রাজনীতির মাঠে সরকার ও বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে সম্পর্ক যেন দা কুমড়ার সম্পর্ক। এমন আবহাওয়ায় পরস্পরকে দোষারোপে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন হয়ে উঠেছে বিষাক্ত। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই সেটা আরো বেশি জটিল হয়েছে।

এরই মধ্যে রবিবার নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। দেখা হলো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একত্রে। এসময় কথা ও কুশল বিনিময়ও হলো তাদের মধ্যে। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে রাজনীতিতে এ যেন ভিন্ন নজির।

প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, রবিবার দুপুরে সৈয়দপুর থেকে ফেরার পথে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে অপেক্ষা করছিলেন ওবায়দুল কাদের। পাশের আরেকটি কক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আছেন জেনে তার সঙ্গে দেখা করতে যান ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদেরকে দেখেই উঠে দাঁড়ালেন মির্জা ফখরুল। হাতের সঙ্গে হাত মেলালেন পরস্পর। এসময় মির্জা ফখরুলকে ওবায়দুল কাদের বললেন, ‘ঢাকা এয়ারপোর্টে আপনার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু শুনলাম আপনি আসছেন না। একসঙ্গে এলে ভালো হতো। কথা বলা যেত। তিনি বলেন, যেহেতু রাজনীতি করি, আলাপ–আলোচনার পথ খোলা রাখা ভালো। কথা হওয়াও দরকার।’

পারিবারিক কারণে একটু পরে আসতে হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা তো চাই আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করতে, কিন্তু আপনারাই তো সাড়া দিচ্ছেন না।

দুই নেতার মধ্যে দেখা ও কথা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, ওবায়দুল কাদের ও মির্জা ফখরুল ইসলামের দেখা হয়েছে। কুশল বিনিময়ও হয়েছে। এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান বলেন, বিমানবন্দরে দুই নেতার মধ্যে কুশল বিনিময় হয়েছে।

দুই নেতার আলাপের সময় ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সেখানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত নন্দী, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরে ফ্লাইটের সময় হলে ওবায়দুল কাদের সেখান থেকে ঢাকায় চলে আসেন। তখনো মির্জা ফখরুল অন্য আরেকটি বেসরকারি বিমান সংস্থার ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

প্রসঙ্গত, কাদের ও ফখরুলের রবিবার ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে একটি বেসরকারি উড়োজাহাজ কোম্পানির ফ্লাইটে সৈয়দপুর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মির্জা ফখরুল সফর স্থগিত করেন। ফলে একই ফ্লাইটে দুই বড় দলের দুই নেতার সাক্ষাৎ হওয়ার সুযোগ নষ্ট হয়। এরপর রবিবার নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে কাকতালীয়ভাবে তাদের মধ্যে দেখা ও কথা হয়।

রাজনৈতিক বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পরস্পর বিরোধী আদর্শের দুই নেতার সাক্ষাৎকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এ প্রসঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এটা খুবই ইতিবাচক। আমরা আশা করবো তারা দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনা অব্যাহত রাখবেন।

এই দুই নেতার সাক্ষাতের খবরটি টক অব দ্যা কাউন্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। সর্বত্রই আলোচনা চলছে এ নিয়ে।

rtnn

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin