যেসব পুরাণ নেতাকে আওয়ামীলীগ আবার ফেরাতে চায়

১/১১ সরকারের সময় দলে ‘সংস্কার’ দাবি করা নেতাদের একটা বড় অংশকে ইতোমধ্যে দলে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অবশিষ্ট সংস্কারপন্থি ও বিভিন্ন কারণে দূরে থাকা নেতাদের দলে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন কাদের সিদ্দিকী, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এবং প্রফেসর আব্দুল মান্নান। আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

দলের নেতারা জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এবং মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান ১/১১-এর সময়ে সংস্কারপন্থির অভিযোগে দলের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ওই সময় দলে যারা সংস্কার চেয়েছিলেন, তাদের অনেকেই বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। কেউ কেউ মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনও করেছেন।

এ ছাড়া নানা কারণে দলের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয় মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর টাঙ্গাইল এলাকায় সক্রিয় কাদেরিয়া বহিনীর প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর। পরে দল থেকে বেরিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে নতুন দল গড়েন। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড এই চার নেতাকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাবনা হলোÑ এরা আর যা-ই হোক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভক্ত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তাই আগামী নির্বাচনের আগে এই চারজনকে রাজনীতিতে সক্রিয় করার তৎপরতা শুরু হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের দু-একজন নেতা জানান, ইতোমধ্যে দলের হাইকমান্ড থেকে এসব নেতার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। এতদিন দূরে থাকায় অনেকের হয়তো অভিমান ছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতি ভালোবাসা ও দুর্বলতার কারণে তারা দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। এ বিষয়ে ‘প্রকাশ্যে উদ্ধৃত’ হয়ে আওয়ামী লীগের কোনো দায়িত্বশীল নেতা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, আমি দেশের জন্য রাজনীতি করি, রাজনীতি করে যেতে চাই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে কোনো কথা বলতে রাজি হননি বৃহত্তর সিলেট এলাকার এই রাজনীতিবিদ।

আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেন টাঙ্গাইলের সাবেক এমপি কাদের সিদ্দিকী। গত কয়েক বছর সরকারবিরোধী রাজনীতি করে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেননি। তবে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ বেড়েছে তার। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কয়েক দফা দেখা করেছেন। গত ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানম-ি ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার সঙ্গে দেখা করেন কাদের সিদ্দিকী। সূত্রমতে, এর পর আরও একবার গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের সিদ্দিকী আমাদের সময়কে বলেন, খুব ছোট্ট দেশ। এখানে অনেক কিছুই হয়। এখনো কিছু বলার সময় আসেনি।
আওয়ামী লীগের দুই সাবেক এমপি পাবনা সাঁথিয়া আসনের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এবং মেহেরপুর-১ আসনের প্রফেসর আব্দুল মান্নান দুজনই আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিজ নিজ এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সঙ্গে জনসংযোগ বাড়িয়েছেন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন বলেও আশাবাদী তারা।

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, আগামী নির্বাচন মুক্তিযুদ্ধ শক্তির বাঁচা-মরার লড়াই। নির্বাচনে জয়লাভ করে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে এগিয়ে নিতে হবে। নির্বাচনে জয়লাভ করতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এছাড়া আওয়ামী লীগের ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, আগামী নির্বাচনে আমি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ অব্যাহত আছে।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin