দেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করেই আবির্ভাব হয়েছে নতুন জোট ‘যুক্তফ্রন্ট‘। গত সোমবার রাজধানীর উত্তরার একটি বাড়িতে এই জোট গঠিত হয়। তবে জোটের শরিকদের পূর্বের ইতিহাসের কারণে শুরুতেই যুক্তফ্রন্ট নিয়ে নানা প্রশ্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তবে সব প্রশ্ন ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি প্রশ্নই, যুক্তফ্রন্ট কার?
যুক্তফ্রন্ট জোটে আছে বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও নাগরিক ঐক্য। জোটের আহ্বায়ক বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রবের উত্তরায় বাসায় নতুন জোট গঠনের লক্ষ্যে বসেন দলগুলোর নেতারা।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সেখানে আ স ম আবদুর রব ছাড়াও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না উপস্থিত ছিলেন।
এর আগেও উত্তরা, বারিধারায় এ ধরনের বৈঠক করেছেন নেতারা। গত ১৩ জুলাইয়ে আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে পুলিশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই দিনও সোমবারের চেয়ে বেশি রাজনৈতিক দলের নেতা সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন। আর আবদুর রব তখন বলেছিলেন, সেটি সামাজিক অনুষ্ঠান।
অবশ্য গত সোমবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে পুলিশ বাধা দেয়নি। আর এ কারণেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কিছুদিন আগেও এমন জোটের বিষয়ে সরকারের মনোভাব ছিল নেতিবাচক। তবে এখন সরকারই বিষয়টিকে পশ্রয় দিচ্ছে। হআগামী নির্বাচনে এমন জোটের অংশগ্রহণকে হয়তো ইতিবাচক হিসেবেই নিচ্ছে সরকার।
অতিসম্প্রতি বিএনপি মহাসাচিব মির্জা ফখরুলও জোটকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি কীসের আশায় তিনি এমন জোটকে স্বাগত জানালেন সেটা বোধগম্য নয় বিশেষজ্ঞদের।
জোটের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন আছে অনেকের। জোটের আহ্বায়ক বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পূর্ব রাজনৈতিক ইতিহাস বড়ই জটিল। তিনি বিএনপির হয়ে প্রেসিডেন্ট হন। পরে তাড়া খেয়ে প্রেসিডেন্ট পদের পাশাপাশি দল থেকেও সরে যান। আওয়ামী লীগে দিকে ঘেঁসে আবার বিএনপির দিকে মুখ ফেরান।
সবশেষে তাঁর মতোই কয়েকজন ভাবধারার মানুষের জোটে গেলেন। যুক্তফ্রন্টের অন্যান্যদের বিষয়েও একই রকম দোদুল্যমান গতিবিধি দেখা গেছে। আবার যুক্তফ্রন্টে গণফোরামের ড. কামাল হোসেনেরও যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রাপ্তির হিসেবে নিকেশ মিলিয়ে সরে গেছেন বলে মনে করেন অনেকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তফ্রন্টের এই নেতারা হলেন তরল পদার্থের মতো। এর আগে যে পাত্রে (যেখানে) গেছেন সেই পাত্রের (সেখানাকার) আকৃতি নিয়েছেন। এখন কোন প্ররোচনায় জোট গঠিত হলো সেটিও এক রহস্য। আবার এরই মধ্যে নির্বাচনে ৩০০ টি আসনে প্রার্থীতা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন যুক্তফ্রন্ট নেতারা।
হাবভাবে নিজেদের বড় দল হিসেবে প্রচারের মনোভাবই দেখা যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আগামী নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের অংশগ্রহণ কী অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তকমা এনে দেবে। বিষয়টি সময়ের হাতে ছেড়ে দেওয়ারই পক্ষপাতী রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলা ইনসাইডার