`মোদি পারলে খালেদা কেন নয়?’

সহায়ক সরকারের ব্যাপারে সরকারকে ভারত যেন চাপ দেয় সেই চেষ্টায় ব্যস্ত এখন বিএনপি। এজন্য বেগম জিয়া তিনজনকে ভারতের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দিয়েছেন। এরা হলেন বেগম জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল আওয়াল মিন্টু, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম এবং ড. মঈন খান। এদের মধ্যে অসুস্থতার কারণে তরিকুল ইসলাম ভারতের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছেন না।

কিন্তু বাকি দুজন দফায় দফায় বৈঠক করছেন। সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে গত মাসে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে। আবদুল আওয়াল মিন্টুর অনুরোধে ভারতীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার তিনজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উড়ে যান ব্যাংককে। সেখানেই বিএনপির সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র ওই বৈঠকে কথা স্বীকার করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে বেগম জিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে আবদুল আওয়াল মিন্টু সুনির্দিষ্ট সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে বলা হয়ছে, নির্বাচনের ৯০ দিন আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন। তাঁর বদলে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তি ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি নির্বাচনী এলাকা থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।

ওই ঐক্যমতের ব্যক্তি আন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচনকালীন সময়ে শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। মিন্টু তাঁর প্রস্তাবে বলেন, আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য দলের সদ্যদের নিয়ে একটি সীমিত মন্ত্রিসভা এ সময় দৈনন্দিন কাজগুলো পালন করবে। ভারতের প্রতিনিধিদের মিন্টু এও জানান যে, এটি বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই সম্ভব এবং এই ফর্মুলায় শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারই ক্ষমতায় থাকবে।

ভারতীয় প্রতিনিধিরা জানতে চান, বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠদের আস্থাভাজন ছাড়া অন্যকেউ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন কিনা। উত্তরে আবদুল আওয়াল মিন্টু বলেন, এ সময় সংসদ অধিবেশন বসবে না, তাছাড়া এটি একটি আপদকালীন ব্যবস্থা। তিনি ভারতের উদাহরণ দিয়ে বলেন, রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর নরসিমা রাও অনির্বাচিত অবস্থায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

ভারতের কর্মকর্তারা বলেন, ওটা রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর। ‘শেখ হাসিনাকে কি আপনারা মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছেন না তো?’ ঠাট্টার ছলে একথায় কিছুটা নিরবতা আসে বৈঠকে। এরপর ভারতীয় প্রতিনিধি দলের একজন বলেন, মনমোহন সিংহের অধীনে নির্বাচন করে যদি নরেন্দ্র মোদী বিপুল ভোটে বিজয়ী হন, অটল বিহারী বাজপায়ীর অধীনে নির্বাচন করে যদি সোনিয়া গান্ধী বিজয়ী হন, তাহলে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করে কেন বেগম জিয়া জয়ী হতে পারবেন না?

উত্তরে মিন্টু বলেন, ভারতের পরিস্থিতি আর বাংলাদেশের পরিস্থিতি এক নয়। ভারতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। উত্তরে প্রতিনিধি দলের নেতা বলেন, ‘আমরাও চাই বাংলাদেশের গণতন্ত্র একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপরে দাঁড়াক। আর সেজন্য প্রথম দরকার তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা। তত্ত্ববধায়ক সরকার কখনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য সহায়ক হতে পারে না।’

ওই নেতা এটাও বলেন, ‘একটা শিশুকে যদি ছেড়ে না দিয়ে সারাক্ষণ সাপোর্ট দিয়ে রাখেন তাহলে সে কখনোই হাঁটতে শিখবে না। তাঁকে নিজে চেষ্টা করতে দিন। সে পড়বে, বার বার পড়বে তারপরে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। আপনারাও চেষ্টা করুণ। নিশ্চয়ই বাংলাদেশেও রাজনৈতিক কাঠামো নিজের পায়ে দাঁড়াবে।’ বৈঠকে অবশ্য ভারতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দেন।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin