মাহমুদুর রহমান বনাম আমি

বিএনপি নেতা এবং দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান নিঃসন্দেহে একজন ব্যতিক্রমধর্মী অনন্য বাংলাদেশি। জেলখানাতে আমরা পাশাপাশি পঞ্চাশ দিন ছিলাম এবং একই টেবিলে একশত পঞ্চাশ বার খানা খেয়েছি। তার সাহস, বুদ্ধিমত্তা, সততা এবং জ্ঞানের গভীরতা আমাকে মুগ্ধ করে।

কিন্তু প্রচণ্ড আওয়ামী বিদ্বেষী মনোভাব এবং বিএনপির ব্যাপারে অন্ধ সমর্থন আমাকে আশ্চার্য করে তোলে। তিনি যদি আমার মতো তার নিজ দলের সমালোচনা করতেন তবে বিএনপি আরো ভালো করতে পারতো।

বর্তমান সরকারের আমলে জনাব মাহমুদুর রহমানের দীর্ঘ কারাবাস এবং অনেকগুলো মামলা আমাকে ব্যথিত করে। তার একরোখা মনোভাব এবং মত প্রকাশের নির্ভীক এবং দূদর্মনীয় যুদ্ধাংদেহী প্রচেষ্টা কেবল বাংলাদেশ নয় – বর্তমান বিশ্বের জন্য বেমানান। আমার বিশ্বাস পশ্চিমা গণতন্ত্রও মাহমুদুর রহমানকে ধারণ করতে পারতো না।

উইকিলিকসের জুলিয়ান এ্যাসাঞ্জ মার্কিন সরকারকে যে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছিলো তার চেয়েও বেশি মাত্রার বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন জনাব মাহমুদুর রহমান।

আজ হঠাৎ করেই জনাব মাহমুদুর রহমানের কথা মনে পড়লো মুলতঃ দু’টি কারণে। প্রথমতঃ নিন্দুকদের সকল সন্দেহ ও অপপ্রচারকে রীতিমতো অপমান করে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। দ্বিতীয়তঃ সরকার এখনো তাকে কোন হয়রানি করেনি। আমি মনে করি মাহমুদুর রহমানের মতো ব্যতিক্রমী চিন্তার তেজী মানুষ কালে ভদ্রে জন্ম নেয়। তাঁকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। কিন্তু সে তুলনায় তিনি তার নিজ দলে দারুণভাবে উপেক্ষিত এবং দলের স্বার্থবাদী কমবুদ্ধির প্রভাবশালীদের ঈর্ষার শিকার।

অনেকে হয়তো আমাকে খোটা দেয়ার জন্য বলবেন- আপনিও তো আওয়ামী লীগে উপেক্ষিত। এই ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো – আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমার অবস্থান কোন দিন মাহমুদুর রহমানের সমপর্যায়ের ছিলো না। আমি দলটির একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে হঠাৎ করেই মনোনয়ন পেয়ে এম. পি হয়ে যাই এবং মিডিয়ার কল্যাণে রাতারাতি ফুলানো ফাঁপানো বেলুনের মতো দৃশ্যমান এবং আলোচিত হয়ে উঠি।

তারপরও গত দশটি বছর ধরে আওয়ামী লীগ যেভাবে আমার সমালোচনা সহ্য করে যাচ্ছে তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরল ঘটনা। এতো কিছুর পরও আমি নিজ দলের কোন স্তরে উপেক্ষিত হইনি বরং শীর্ষস্তরের নেতৃবৃন্দের যে অকুণ্ঠ ভালোবাসা, স্নেহ এবং সমর্থন এখনো পেয়ে যাচ্ছি তা আমাদের দলের বাইরের লোক আন্দাজও করতে পারবেন না।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin