khaleda_adalat

‘মামলা নিয়ে এত তাড়া কিসের আপনাদের?’

বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরুর কিছুক্ষণ পরই যেন একটা ঝড় উঠল। ধীর লয়ে শান্তভাবে চলা আদালতকক্ষে বিচারক, আসামিপক্ষের আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবীর (পিপি) মধ্যে হঠাৎ শুরু হয়ে গেল বাগ্‌বিতণ্ডা।

আইনজীবী আহসান উল্লাহ্‌ আগের দিনের ধারাবাহিকতায় আসামি শরফুদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ৩১ নম্বর সাক্ষী হারুন-অর রশিদের জবানবন্দির অসমাপ্ত অংশ পড়তে শুরু করেন। হঠাৎ করে তিনি আসামি কাজী সালিমুল হক সম্পর্কে ওই জবানবন্দিতে যা বলা হয়েছে, তা পড়তে শুরু করেন।

এ সময় বিচারক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আপনি তো শরফুদ্দিন আহমেদের আইনজীবী। তাঁর প্রসঙ্গেই বলছিলেন। তাহলে হঠাৎ সালিমুল হকের প্রসঙ্গে বলছেন কেন?’ জবাবে আহসান উল্লাহ্‌ বলেন, ‘আমি দুজনেরই আইনজীবী।’ বিচারক বলেন, ‘সে কথা তো আপনি আদালতকে বলেননি।’ আইনজীবী বলেন, ‘বলব, বলব, ধীরে ধীরে বলব।’

বিচারক বলেন, ‘আপনি আগের দিন ওকালতনামা না দিয়েই আদালতে দাঁড়ালেন। আজ আবার আদালতকে না জানিয়েই আরেকজন আসামির পক্ষে বলছেন। এটা তো ঠিক না।’ আইনজীবী বলেন, ‘হাইকোর্টে আমরা ওকালতনামা দিই না। ওকালতনামা লাগে না।’ বিচারক বলেন, ‘হাইকোর্টের কথা বলছি না, ট্রায়াল কোর্টে ওকালতনামা লাগে।’

আইনজীবী এ সময় উচ্চকণ্ঠে বিচারকের বক্তব্য চ্যালেঞ্জ করে এভিডেন্স অ্যাক্টের বই দেখিয়ে বলেন, ‘এই যে এভিডেন্স অ্যাক্ট। এর কোন ধারায় আছে যে সব আসামি সম্পর্কে সাক্ষীদের জবানবন্দি পড়তে পারব না, যদি দেখাতে পারেন তাহলে আজই ওকালতি ছেড়ে দেব।’

বিচারক বলেন, ‘আপনি সব সাক্ষীর সাক্ষ্যের শুধু সেই অংশটুকুই পড়বেন, যেটুকু আপনার মক্কেলের বিষয়ে সম্পৃক্ত।’ আইনজীবী বলেন, ‘আমার মক্কেলের সঙ্গে পুরো মামলাই সম্পৃক্ত। কাজেই আমি সব পড়ব।’ এ সময় পিপি মোশাররফ হোসেন আহসান উল্লাহ্‌কে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী আপনার সেটুকু পড়ার কথা, যেটুকু তাঁদের সম্পর্কে বলা হয়েছে।’

আহসান উল্লাহ্‌ এ সময় অতি উচ্চকণ্ঠে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, কোর্ট কি আপনি চালান না পিপি সাহেব চালান। উনি কেন মাঝে মাঝেই হস্তক্ষেপ করেন।’ এ সময় পিপি বলেন, ‘এ তো মারদাঙ্গা অবস্থা।’ বিচারক পিপিকে বসতে বলেন এবং আহসান উল্লাহ্‌কে তাঁর মক্কেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বক্তব্য পড়তে বলেন। এরপর আহসান উল্লাহ্‌ আরও উচ্চকণ্ঠে বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘জাস্টিস হারিড, জাস্টিস বারিড। আপনারা পড়তে দিতে চান না কেন? এত তাড়া কিসের আপনাদের? তাড়া তো থাকার কথা আমার। কারণ, আমার মক্কেল জেলে। আপনি যত তাড়াতাড়ি তাঁদের দণ্ড দেবেন আমি তত তাড়াতাড়ি হাইকোর্ট থেকে তাঁদের ছাড়িয়ে নিয়ে যাব। তাড়াহুড়া করবেন না। পড়তে দিন। আমি সবই পড়ব।’ কিন্তু তিনি সব পড়েননি।

এরপর তিনি উচ্চকণ্ঠে কথা বলার জন্য আদালতের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে বলেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। সুগার লেবেলে কনসিস্টেন্সি থাকে না। সেই জন্য এখন আর ট্রায়াল কোর্টে মামলা করি না। তবে আগামী দুই দিন যে ছুটি আছে, এই সময় আমি আরও খুঁজে দেখব যে কোন আইনে আছে আমি সব পড়তে পারব না।’

গতকাল আদালতে যুক্তিতর্ক শুরু হওয়ার পর দুপুর ১২টার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত হন। ২৩, ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin