‘আমার প্রতি অন্যায় করেছে।জেল-জুলুম দিয়ে আমাকে দুর্বল করা যাবে না। দেশের মানুষ আমার সাথে আছে। দেশবাসীকে বলব, আপনারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন, ধৈর্য্য ধরবেন। ইনশা আল্লাহ আমাকে নত করার সুযোগ নেই। অচিরেই বিজয় হবে।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেয়ে কারাগারে প্রবেশের আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এই কথাগুলো বলেছিলেন বলে জানান তার আইনজীবী ও দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার।
মাসুদ বলেন, ‘আমি ও আমার বন্ধু বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া বকশীবাজার আদালত থেকে হেঁটে হেঁটে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এসেছি। তাকে বিশেষ সেলে রাখা হবে। মর্যাদাসম্পন্ন বন্দিদের সকল সুযোগ-সুবিধা পাবেন তিনি। এ ব্যাপারে কারাগার কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে কথা বলেছে।’
এর আগে দুপুর ২টা ১৪ মিনিটে খালেদা জিয়ার মামলার রায় পড়া শুরু করেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান। ২টা ২৭ মিনিটে দেওয়া রায়ে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর ও তার ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের প্রত্যেককে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৩২ জন। ১২০ কার্যদিবসের বিচারকার্য শেষ হয়েছে ২৩৬ দিনে। আত্মপক্ষ সমর্থনে গেছে ২৮ দিন। যুক্তি উপস্থাপন চলেছে ১৬ দিন। আর আসামিপক্ষ মামলাটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উচ্চ আদালতে গিয়েছেন ৩৫ বার।
এর আগে ‘তোমরা কেঁদো না, আমি আবারো ফিরে আসবো’ আদালতের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়ার আগে অশ্রুসজল আত্মীয় স্বজন ও সমর্থকদের সর্বশেষ এই কথাটি বলেছিলেন খালেদা জিয়া। ফিরলেন না তিনি, কোটি মানুষের হৃদয় ভেঙে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ৭২ বছরের এই প্রবীণ নারী নেত্রীকে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন।
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নিজের স্বামী জিয়াউর রহমানের নামে গঠিত এতিম তহবিলের প্রায় আড়াই লাখ ডলার তছরুফ করার অভিযোগে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই এক খবরে জানিয়েছে, রায় শুনতে আদালতে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া নামাজ আদায় করেন। কান্নারত আত্মীয় স্বজনদের স্বান্তনা দেন।
গুলশানে অবস্থিত নিজের বাড়ি ফিরোজা ত্যাগ করার সময় খালেদার অনেক স্বজনই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় খালেদা বলেন, ‘কান্নার প্রয়োজন নেই। আমি ঠিক থাকবো। তোমরা সবাই অপেক্ষা করো। আমি ফিরবো। চিন্তা করো না। শক্ত থাকো।’
আদালতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার বড় বোন, ভাবি, ছোট ভাই, ভাতুষ্পুত্র ও কন্যা এবং তার আইনজীবীরা। খালেদার পাশাপাশি একই মামলায় তার বড় ছেলে তারেক রহমানকে ১০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। তিনি বর্তমানে লন্ডনে আছেন। একই সাজা দেওয়া হয়েছে খালেদার সাবেক চার সহযোগীকে।
বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে পিটিআই লিখেছে, দন্ডিত হওয়ায়, রোববার পর্যন্ত কমপক্ষে তিনদিন জেলে থাকতে হবে খালেদা জিয়াকে। বৃহস্পতিবার যদি আদালতের রায়ের সার্টিফায়েড পেতেন খালেদার আইনজীবীরা, তবুও তারা উচ্চ আদালতে আপিল করার সময় পেতেন না। রোববার পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে। উচ্চ আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে খালেদাকে জামিন দেওয়ার বিষয়ে।
তবে আরও বড় প্রশ্ন হলো, ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা খালেদা। এই রায়ের ফলে খালেদাকে ওই নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনানুযায়ী দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হলেই, পরবর্তী ৫ বছর কেউ নির্বাচন করতে পারেন না। খালেদার মামলায় উচ্চ আদালত তাকে জামিন দিলেও, যদি রায় বহাল রাখে, তাহলে নির্বাচনে অংশ নিতে অযোগ্য ঘোষিত হবেন তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গতবার নির্বাচনে অংশ না নিলেও, এবার অংশ নেওয়ার ব্যাপারে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। রায় ঘোষণার একদিন আগে তিনি নিজ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি বলেন, এবার বিরোধী দল বিহীন মাঠে কাউকে গোল দিতে দেওয়া হবে না।