bnp_jot

বিএনপির সামনে তিন চ্যালেঞ্জ, সময়মতো সহায়ক সরকারের রূপরেখা

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে নিয়ে এগোচ্ছে ক্ষমতার বাইরে থাকা বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। নানা অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা নিয়ে সময় পার করলেও বিএনপির টার্গেট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদায়ই দলটির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। একইসাথে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ তৈরি করতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যও প্রস্তুত হচ্ছে দলটি। এ লক্ষ্যে আলোচনার দ্বার খোলা রেখে আগামী দিনে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে সামনে এগোনোর পরিকল্পনা নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। তবে সরকারের মনোভাব দেখে সময়মতো নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা ঘোষণা দেবে বিএনপি।

সম্প্রতি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক, দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এসব বৈঠকে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ছাড়াও ২০ দলীয় জোটের পরিস্থিতি, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ১২ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভার পর্যালোচনা, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সরকারকে সংলাপের জন্য আবারো সময় দিতে চায় বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট। তা না হলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলনই সর্বশেষ বিকল্প থাকবে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

জানা গেছে, বিএনপির রাজনৈতিক পরিকল্পনা হচ্ছে প্রথমত, বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার সাজা হলে পরবর্তী পদক্ষেপ, দ্বিতীয়ত, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা ও দাবি আদায় এবং তৃতীয়ত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগত ও দলীয়ভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করা।

জানা গেছে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। এ দু’টি মামলায় প্রতি সপ্তাহেই আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন বেগম জিয়া। গত ১৮ অক্টোবর লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পরদিনই তিনি আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্যের পর সাফাই সাক্ষী ও যুক্তিতর্ক। তারপরই মামলার রায় হবে। এ মামলায় প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দুই মামলায় তার ‘সাজা’ হওয়ার আশঙ্কা করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে বিশেষ আদালতে নিজের ‘সাজা’ হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা হলে দলের হাল কে ধরবেন এ নিয়েও চলছে নানা আলোচনা। কিন্তু এ নিয়ে দলের পক্ষে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি।

দলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুধু বেগম খালেদা জিয়াকেই নয়, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকেও সাজা দিতে পারে সরকার। বেগম জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে। তবে বেগম খালেদা জিয়া তার মামলার রায় বা সাজা নিয়ে চিন্তিত নন বলে তিনি নিজেই বলেছেন। দলটির সিনিয়র নেতারাও বলছেন জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে বেগম জিয়া তার মামলা নিয়ে চিন্তিত নন। তিনি ন্যায়বিচার পাবেন বলে নেতারা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান নয়া দিগন্তকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রতীক। তিনি জীবনের শেষ মুহূর্তে এসেও গণতন্ত্রের জন্য লড়ছেন। তাকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, করতে দেয়া হবে না। তিনি এবং আমরা দলের নেতাকর্মীরা মামলা আর জেলের ভয় করি না। নির্বাচনে অযোগ্য করার ষড়যন্ত্রও কাজে আসবে না। আমরা জনগণের সাথে ছিলাম এবং আছি। জনগণও বিএনপির সাথে আছে। যার প্রমাণ ইতোমধ্যে বেগম জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দর, কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে যাওয়া এবং সর্বশেষ ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে জনতার ¯্রােত সেটাই প্রমাণ করে। বেগম জিয়া ন্যায়বিচার পেলে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বেশ সতর্ক। নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে এ মুহূর্তে অতি উৎসাহ দেখানোর পক্ষপাতী নয় দলটি। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করেই নতুন সিদ্ধান্ত নিতে চান দলের হাইকমান্ড। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো সমঝোতা না হলে নির্বাচনের ছয় মাস আগে আন্দোলনের পথ বেছে নেয়া হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে বিএনপি আগামী নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ও অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চায়। তবে সরকারের মনোভাব দেখে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবে বিএনপি।

দলীয় সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে জোটগত ও দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করা নিয়ে কাজ করছে বিএনপি। এ নিয়ে দলটি বেশ কিছু কাজও সেরে ফেলেছে। যদিও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে যে জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ফলে জামায়াতকে ছাড়াই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী দেবে বিএনপি। এ বিষয়ে কেউ কোনো স্পষ্ট বক্তব্য না দিলেও বিএনপি আগামী নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবেই নির্বাচনে যাবে বলে বিএনপির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। কারণ জামায়াতের সাথে বিএনপির জোট হচ্ছে নির্বাচনী জোট।

দলটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে নানা ভাবনা কাজ করছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই। কেননা বিএনপি সরকার পরিচালনাকারী দল। নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। প্রার্থীরও সঙ্কট নেই।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে এ মুহূর্তে বলার প্রয়োজন নেই। সরকার যখন বলছে, ‘সংবিধান ছাড়া কোনো কিছুতে যাবে না’ তখন তো আমরা বলব- আগে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে, তাহলে আমরা সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবো। আমরা আলোচনায় রাজি আছি। আলোচনায় বসলে পথ বেরিয়ে যাবে। বারবার এ কথা বলে আসছি- আসুন আমরা বসি। রূপরেখা কী হবে না হবে তা বিস্তারিত আলোচনার বিষয়। এতে অনেক রকম বিষয় আসতে পারে। আমাদের ও তাদের প্রস্তাব থাকবে। এরপর গ্রহণ-বর্জনের মধ্য দিয়ে একটি ফর্মুলা বেরিয়ে আসবে।

তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপ ছাড়া এই সঙ্কট সমাধান করা যাবে না। সঙ্কট সমাধানে আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে। যখন সরকার এ বিষয়ে রাজি হবে তখন আমরা রূপরেখা দেবো। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনকালীন সরকারের জন্য সংলাপ প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বহাল থাকলে তো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।

আগামী নির্বাচনে বিএনপির সাথে জামায়াতের জোটে থাকা না থাকা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের জোট অটুট আছে। এখনো জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়নি। তাই আগামী নির্বাচনে তারা আমাদের সাথে থেকেই নির্বাচনে অংশ নেবে।

dailynayadiganta

বগুড়া বার সমিতির নির্বাচনে সভাপতি-সম্পাদকসহ বিএনপি-জামায়াত প্যানেলের নিরঙ্কুশ বিজয়

শুক্রবার অনুষ্ঠিত বগুড়া জেলা অ্যাডভোকেটস বার সমিতির বার্ষিক নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত-সমর্থিত আফতাব–সাইফুল পরিষদ কার্যনির্বাহী কমিটির ১৩টি পদের মধ্যে ১১টি পদেই বিজয়ী হয়েছে। অপরদিকে আ’লীগ, জাপাসহ সমমনা দল-সমর্থিত গালিব–মুকুল পরিষদ শুধু দু’টি সদস্য পদে জয়লাভ করেছে। সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত সমিতির গওহর আলী ভবনে একটানা ভোট গ্রহণ শেষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি রাত সাড়ে ৯টায় ফলাফল ঘোষণা করে। এই নির্বাচনে ৬৪৬ জন ভোটারের মধ্যে ৬২৬ জন ভোট দেন।

সভাপতি পদে বিজয়ী বিএনপি জামায়াত-মর্থিত আফতাব উদ্দিন আহমেদ পেয়েছেন ৩৩৫ ভোট। নিকটতম একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী প্যানেলের প্রার্থী বর্তমান সভাপতি লুৎফে গালিব আল জাহিদ মৃদুল পেয়েছেন ২৭৫ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী বিএনপি প্যানেলের (সাবেক পিপি )এ কে এম সাইফুল ইসলাম পেয়েছেন ৩২৬ ভোট। নিকটতম আ’লীগ-সমর্থিত প্রার্থী সাবেক সাধারন সম্পাদক মকবুল হোসেন মুকুল পেয়েছেন ২৭১ ভোট্।

অন্যান্য পদে বিজয়ীরা হলেন সহসভাপতি পদে বিজয়ী বিএনপি প্যানেলের আজবাহার আলী ও সেলিম রেজা, যুগ্ম সম্পাদক পদে পিএম মইনুল হাসান হেলাল ও আতিকুল মাহবুব সালাম, লাইব্রেরী ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সিরাজুল হক, ম্যাগাজিন, ক্রীড়া ও সাংস্কুতিক সম্পাদক গোলাম দস্তগীর সরকার(শাওন), কার্য্য নির্বাহী সদস্য পদে আতোয়ার হোসেন প্রামাণিক (আপন) গোলাম মোস্তফা মজনু, শরীফুল ইসলাম (২) হীরা।

অপরদিকে আওয়ামী প্যানেলের বিজয়ী দুই সদস্য হলেন মোঃ জুয়েল ও দেবাশীষ রায়। এদিকে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম সহ বিজয়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

dailynayadiganta

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin