বিএনপির সমাবেশে জনতার ঢল, দুশ্চিন্তায় আ.লীগ

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিএনপির জন সমাবেশ অনেকটা সোনার হরিণের মত হয়ে গিয়েছে। সরকারের বাধা আর অনুমতি না দেয়ার কারণেই মূলত তেমন কোনো জনসমাবেশ করতে পারেনি বিএনপি।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বৈরাচারের তকমা পাওয়া আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর উপর দমন পীড়ন চালিয়ে রাজপথের রাজনীতিকে অনেকটাই ঘরোয়া রাজনীতিতে পরিণত করেছে।

বিএনপিকে দশটির মধ্যে একটি সমাবেশের অনুমতি প্রদান করলেও ২০-৩০ টা শর্ত আরোপ করে দেয়া হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন পর এবার প্রথম বিএনপিকে শর্তবিহীন সমাবেশ করার অনুমতি দিলো সরকার।

৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির এই সমাবেশে কোনো শর্ত না দেয়ায় রাজনৈতিক বোদ্ধারা অনেকটাই অবাক হয়েছেন। বলা যায় অবাক হয়েছে স্বয়ং বিএনপিও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বিএনপির জনপ্রিয়তা যাচাই করতেই মূলত সরকার শর্তবিহীন সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার দেখতে চেয়েছে বিএনপির বাধাহীন সমাবেশে কেমন জনসমাগম হয়। এবং এর মাধ্যমে বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা ও শক্তি পরিমাপ করাই সরকারের টার্গেট ছিলো।

শর্ত ও বাধাহীন বিএনপির আজকের সমাবেশে জনতার ঢল নেমেছে। দুপুর থেকেই বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা নয়া পল্টনে জমায়েত হতে থাকেন। ফকিরাপুল পয়েন্ট থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত সড়ক লোকারন্য হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন পর নয়াপল্টনের রাজপথকে স্লোগানে মুখরিত করলো বিএনপি নেতাকর্মীরা। সমাবেশে জনতার এই ঢলই আওয়ামী লীগের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুশ্চিন্তায় পড়েছে আওয়ামী লীগ।

দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর দমন, পীড়ণ, নির্যাতন, গুম, খুন, হামলা, মামলা চালানোর পর আওয়ামী লীগ ভেবেছিলো বিএনপির অস্তিত্ব নেই। নেতাকর্মীরা হামলা মামলার ভয়ে দলীয় প্রোগ্রামে অংশ নিবে না। সমাবেশে অত লোকের উপস্থিতি হবে না। কিন্তু সরকারি দলের এই ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে লাখো জনতার ঢল নেমেছে রাজপথে।

তাদের স্লোগানে ছিলো দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি। সমাবেশে বক্তাদের বক্তব্যেরও প্রধান বিষয় ছিলো খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়। নেতাকর্মীদের মাঝে ছিলো ব্যাপক উদ্দীপনা।

নেতাদের বক্তব্যেও ছিলো ভবিষ্যৎ সুদিনের ইঙ্গিত। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল নির্বাচন কমিশনকে হুমকী দিয়ে বলেছেন, ইভিএম নিয়ে নাটক বন্ধ করুন। তা না হলে নির্বাচন কমিশন ভেঙে ইভিএম মেশিন বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সারাদেশের পাড়ায় পাড়ায় প্রতিরোধের জন্য কমিটি গঠন করুন। সামনে সময় আসছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, পুলিশ ভাইদের উদ্দেশ্যে বলছি -বেতন কিন্তু আওয়ামী লীগ দেয় না। আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করবেন না। সময় কিন্তু ভালো নয়। ছাত্র-জনতা প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে বিএনপির সামাবেশে এমন উপস্থিতি ও বক্তাদের বক্তব্য সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। অস্বস্তি দেখা দিয়েছে সরকারের নীতি নির্ধারনী মহলেও। ভবিষ্যতে এরকম বাধা ও শর্তহীন আর কোনো সমাবেশ বিএনপিকে করতে না দেয়ার পক্ষেও সরকারের অনেকে মত দিয়েছেন। নির্বাচনের আগে দেশে কিছু গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছেন শেখ হাসিনা। বিদেশিদের দেখানোর জন্য হলেও এটা করতে চাচ্ছেন তিনি। তবে এমনটা করতে গিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা তৈরি হওয়াটাকেও ভালো হিসেবে দেখা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে এক প্রকার অস্বস্তির মধ্যেই পড়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।

উৎসঃ   অ্যানালাইসিস বিডি

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin