বিএনপির মনোনয়নপত্র কেনার পর প্রার্থীরা যা বললেন

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপ নির্বাচনে মেয়রপদে বিএনপির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন মোট ৫ জন প্রার্থী। রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে রোববার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিএনপির মনোনয়নপত্র বিক্রি করা হয়।

১০ হাজার টাকার বিনিময়ে এসব প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র কেনেন। তারা হলেন- গতবারের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, সাবেক এমপি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, বিএনপি সহ-প্রকাশনা সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এমএ কাইয়ুম।

মনোনয়পত্র কেনার পর বিএনপির সহ-প্রকাশনা সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমার যোগ্যতা, দলের প্রতি আমার কমিটমেন্ট, আমি একটা খসড়া ইশতেহার সাবমিট করেছি, এসবের মান বিচার বিবেচনা করে আমার ধারণা আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি একটা স্বপ্ন দেখানোর চেষ্টা করছি। আসুন গড়ি বিশ্ব মানের একটা নগর। বিশ্বমানের শহর বলতে আমরা যেগুলো বুঝি প্যারিস, নিউইয়র্ক, লস এঞ্জেলস, সিঙ্গাপুর, সাংহাই এসব।

তিনি বলেন, ঢাকাও একটি মেগা সিটি। আমি যদি ঢাকা উত্তরের মেয়র হতে পারি এবং ঢাকার নাগরিকদের যদি আমি সম্পৃক্ত করতে পারি, তাহলে ঢাকাকেও আমরা বিশ্বমানের সিটি হিসাবে গড়ে তুলতে পারবো।

সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব) আখতারুজ্জামান বলেন, প্রথমে শুকরিয়া আদায় করছি পরম করুনাময় আল্লাহ নিকট, তিনি আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন বিএনপির মনোনয়ন কেনার জন্য। ধন্যবাদ জানাচ্ছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে, তিনি আমাকে অনুমতি দিয়েছেন মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার জন্য। আজকে পরিবর্তনের সময় আসছে। আমরা আগেও বলেছি ২০১৮ সাল পরিবর্তনের বছর। পরিবর্তন হবেই, হতে হবে।

দেশের বাইরে অবস্থান করার কারণে এম এ কাইয়ুমের পক্ষে মনোনয়নপত্র কেনেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল বাসিত আঞ্জুম। তবে তিনি কোনো কথা বলেননি।

বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন মনোনয়ন নেওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকে সংগঠন করে এসেছি। সবসময় স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান। দলের দুঃসময়ে সামান্য অবদান রাখার চেষ্টা করেছি। আমার লেখাপড়া, সাংগঠনিক দক্ষতা এবং বিভিন্ন দেশের নগর উন্নয়ন সম্পর্কে অভিজ্ঞতাসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে দলীয় মনোনয়ন পাবো বলে আশা করি।

তিনি বলেন, আমি অবিভক্ত ঢাকা মহানগরী থাকাকালীন সময় থেকে দলের চেয়ারপারসনের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করি। আমি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর ও বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছি। ওখানকার নগর ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। সেখানকার মেয়রদের সঙ্গে কথা বলেছি। এসব দিক ভেবে আমি আমাদের নগর উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছি। আমার বিশ্বাস দলীয় মনোনয়ন পাবো।

সব শেষে আসা দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল বলেন, উত্তর সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। নির্বাচনী বিধি মোতাবেক আগামীকাল মনোনয়ন ফরম জমা দিবো। তখন দল ডিএনসিসির জন্য নির্ধারণ করবে কে হচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী।

তাবিথ আউয়াল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে। গতবার তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী সদ্যপ্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সঙ্গে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে দল থেকে মনোনয়ন কনফার্ম হোক। তারপর আগামী নির্বাচন ও গত নির্বাচন নিয়ে আপনাদের সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে কথা বলব।

তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাব, এ ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। কারণ, গতবার দল আমাকে সমর্থন দিয়েছিল, আমি সে আস্থার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘বিগত নির্বাচনে আমার কর্মকাণ্ড দেখে হাইকমান্ড সন্তুষ্ট বলেই আমি মনে করি। এবারো আল্লাহর রহমতে সমর্থন পেলে দলকে এই সিটিতে জয় উপহার দেওয়ার চেষ্টা করব।’

তাবিথ আউয়াল আরো বলেন, ‘মনোনয়ন না পেলেও সমস্যা নেই। যিনি পাবেন তার হয়ে আমি এবং আমার সমর্থকরা কাজ করবে।’

আগামীকাল সোমবার বিকেল ৪টার মধ্যে আরও ২৫ হাজার টাকা জামানত দিয়ে মনোনয়নপত্র দলীয় কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। এরপর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে থেকে সিটি করপোরেশনের উপ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থী মনোনীত করবেন।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভোট হয়। আওয়ামী লীগের সমর্থনে ওই নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন সদ্য প্রয়াত আনিসুল হক। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতবছরের ৩০ নভেম্বর তার মৃত্যুতে স্থানীয় সরকার বিভাগ ১ ডিসেম্বর থেকে ওই পদটি শূন্য ঘোষণা করে।

এরপর গত ৯ জানুয়ারি ডিএনসিসির মেয়র পদে উপ-নির্বাচন, সম্প্রসারিত ১৮টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর ও ৬টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর এবং ডিএসসিসির সম্প্রসারিত ১৮টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর ও ৬টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।

তফসিল অনুযায়ী, এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র কেনা ও জমা দেওয়া যাবে আগামী ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। আবেদনকারী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২১ ও ২২ জানুয়ারি। তা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৯ জানুয়ারি।

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রচার চালানো যায় না। সে অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারি থেকে প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করতে পারবেন।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin