‘বিএনপিতে আর কত অপমানিত হবেন?’

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। বললেন, ‘আপনি আপনার ঘরে ফিরে আসুন। আমি আপনাকে সম্মান দেবো, মর্যাদা দেবো। বিএনপিতে আর কত অপমানিত হবেন?’

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে সন্ধ্যায় এরশাদ বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ওই দিন বিকেলে তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনায় যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সহ অন্যান্য দলের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ওই সংম্বধনা অনুষ্ঠানে বিএনপির কেউ যোগ দেয়নি। রাতে একারণেই বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ টেলিফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এক সময় জাতীয় পার্টিতে ছিলেন, এখন বিএনপিতে এরকম অন্তত তিনজনের সঙ্গে এরশাদ টেলিফোনে কথা বলেন।

এদের প্রত্যেককেই এরশাদ জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তবে, ব্যারিস্টার মওদুদ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং মুনিরুল হক চৌধুরী কেউই এরশাদের ডাকে সারা দেননি। তাঁরা বরং এরশাদের কুশলাদি জানতে চেয়েছেন।

সংস্কারপন্থীদের কদর বাড়ছে বিএনপিতে

বিএনপিতে আবার সক্রিয় হয়ে উঠছেন ওয়ান ইলেভেনের সংস্কারপন্থীরা। দলে তাঁদের গুরুত্ব বাড়ছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁদের বিভিন্ন কাজ দিচ্ছেন। ফলে তাঁরা দলের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় অবদান রাখছেন।

দলে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত, লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জহির উদ্দিন স্বপন, এমরান সালেহ প্রিন্স, মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম, ব্যরিস্টার জিয়াউর রহমান খান-এরকম সংস্কারপন্থীরা এখন দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয় এবং দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত হচ্ছেন। দলের মহাসচিব তাদের বিভিন্ন দায়িত্ব দিচ্ছেন।

২০০৭ সালে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে এই নেতারা প্রকাশ্যে এবং গোপনে ওই সরকারকে সমর্থন জানায়। বিএনপির মধ্যে এই নেতারাই বেগম খালেদা জিয়াকে নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তাব প্রণয়ন করেন।

ওয়ান ইলেভেনের পর এরা দলে অপাংক্তেয় হয়ে পড়েন। কিন্তু বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হবার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আস্তে আস্তে তাদের কাছে টানেন। বিএনপি সূত্রে জানা গেছ, দলের সিনিয়র এবং কট্টরপন্থীদের অসহযোগিতার কারণেই মির্জা ফখরুল সংস্কারপন্থীদের দিকে ঝুঁকেছেন।

অবশ্য অন্য একটি সূত্র বলছে, এটি বিএনপির ভাঙ্গনেরই পূর্বাভাস। বিএনপির সংস্কারপন্থীদের নিয়েই মির্জা ফখরুল আলাদা অবস্থান নেবেন, এটি তারই প্রস্তুতি মাত্র।

২৮ অক্টোবরের আগেই ভাঙবে সংসদ?

২৮ অক্টোবরের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে কয়েকটি দাতা ও বন্ধুরাষ্ট্র। এর ফলে সংসদ ভেঙে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিরোধী দলের দাবি পূরণ হবে। এর ফলে, নির্বাচনের খুব একটা পরিবর্তন হবে না। বর্তমান সংবিধানের ১২৩ (৩) ‘ক’ অনুযায়ী ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।’

দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। সেই হিসেবে, ২৮ অক্টোবরের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া না হলে, নির্বাচনের সময় বর্তমান সংসদ বহাল থাকবে। সেক্ষেত্রে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সংবিধানের ১২৩ (৩) ‘খ’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে’ …. সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। তাই ২৭ অক্টোবরও যদি প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেন, সেক্ষেত্রে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পার্থক্য হবে এটুকুই যে, তখন বর্তমান সংসদ বহাল থাকবে না। এরকম ভাবে সংসদ ভেঙে দিলেও সংবিধানের ৫৭ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে।

ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, মেয়াদ অবসানের ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভেঙে দেবেন। রাষ্ট্রপতি তখন তাঁকে নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত তাঁকেই দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার অনুরোধ করবেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একটি ছোট নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার মাধ্যমে রুটিন কাজ পরিচালনা করবেন।

আওয়ামী লীগের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপদেষ্টা বলেছেন, ‘দুটো অপশনের মধ্যে পার্থক্য একটাই তাহলো মেয়াদপূর্ণ হলে বর্তমান সংসদ বহাল থাকবে। আর মেয়াদের আগে হলে সংসদ বাতিল হবে।’ বিএনপি একজন নেতা বলেছেন, ‘আমরা নূন্যতম মুখ রক্ষার সম্মান চাই। প্রধানমন্ত্রী ২৮ অক্টোবরের আগে সংসদ ভেঙে দিলে আমাদের মুখরক্ষা হয়।

আমরা কিছু অর্জন করেছি, এটি দেখিয়ে সবাইকে নিয়ে নির্বাচনে মাঠে যেতে পারি।’ তবে, এই প্রস্তাব আওয়ামী লীগ খুব সহজে মেনে নেবে না। আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেছেন, ‘অতীতে বারবার সংসদ ভাঙার সুযোগ নিয়েও অনির্বাচিত সরকারগুলো ক্ষমতা দখল করেছে, যার সর্বশেষ উদাহরণ হলো ওয়ান ইলেভেন। একদিন আগেও সংসদ ভেঙে দিলে, অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা আসার সুযোগ থাকে।’

তাঁর মতে, ‘অসাংবিধানিক ধারা বন্ধের জন্যই এই রক্ষাকবচ নেওয়া হয়েছে।’ অবশ্য আওয়ামী লীগের অন্য একটি সূত্র বলছে, বেগম জিয়া যদি নির্বাচনের অযোগ্য হন এবং বিএনপির একটি বড় অংশ যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রে বৃহত্তর সমঝোতার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা মেয়াদ অবসানের একদিন আগে হলেও সংসদ ভেঙে দিতে পারেন। ওই সূত্রমতে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী এমনটা করলেও করতে পারেন।

আওয়ামী লীগ চায় বিজয়ের মাসে ডিসেম্বরে নির্বাচন। সংসদ ভাঙুক আর নাই ভাঙুক-দুই অবস্থানেই নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। আওয়ামী লীগের মুখ্য অবস্থান হলো বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই নির্বাচনকালীন সরকার। সংসদ ভেঙ্গে দিলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচন হবে। তাই এ বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করার আগে আওয়ামী লীগ বিএনপি পরিণতি দেখে নিতে চায়। খালেদা জিয়া বিহীন বিএনপি হলেই কেবল এই প্রস্তাব আওয়ামী লীগ বিবেচনায় নিতে পারে বেলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin