বাইডেনের জয়: বাংলাদেশের যত লাভ

মার্কিন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে থেকে গোটা বিশ্ব। এই নির্বাচনের উপর বিশ্বরাজনীতির অনেক হিসেব নিকেশ নির্ভর করে। অনেক দেশের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তিত হয় এই নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে। আন্তর্জাতিক  সংস্থাগুলোর কাছে এ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনের ওপর আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভাগ্য অনেকখানি নির্ভর করে।

কাজেই মার্কিন নির্বাচন কেবল ওই দেশের একজন নতুন রাষ্ট্রপতি বা সিনেটর কংগ্রেসম্যান করার নির্বাচন নয়, এ নির্বাচন পুরো বিশ্বের গতিপ্রকৃতির নির্ধারণ করার অন্যতম নিয়ামক নির্বাচন। আর এই নির্বাচনে এখন মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে,জো বাইডেনই হচ্ছেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

জো বাইডেন যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে বাংলাদেশের কি হবে? এই নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে কূটনৈতিক অঙ্গনে। এখন নয় নির্বাচনের শুরু থেকেই এ নিয়ে কূটনৈতিক মহলে নানা রকম আলোচনা হচ্ছে।

যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেই জিতুকনা কেন তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। একই কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ড.গওহর রিজভী।

কূটনীতিকদের সাথে আলাপ করে দেখা গেছে, জো বাইডেন যদি শেষ পর্যন্ত জয়ী হন তাহলে বাংলাদেশের জন্য বেশকিছু ইতিবাচক ঘটনা ঘটবে। বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে লাভবান হবে। যে বিসমস্ত ক্ষেত্রে বাংলাদেশ লাভবান হবে, তার মধ্যে রয়েছে:-

১। ভিসা সহজ হবে: ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের শাসনামলে বাংলাদেশসহ কিছু দেশের জন্য ভিসা করাকরি করা হয়েছিল।  ভিসা প্রদানের হার ছিল অত্যন্ত কম। আবার বারাক ওবামার সময় বাংলাদেশের ভিসাব্যবস্থা সহজীকরণ করা হয়েছিল। ঐতিহাসিক ভাবে ডেমোক্রেটরা যেহেতু অনেক বেশি উদারনৈতিক তারা বাংলাদেশের মত দেশ গুলোর ব্যাপারে ভিসা সহজীকরণ করে। বাইডেন যদি বিজয়ী হয় তাহলে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য ভিসা সহজীকরণ হবে এটা নিশ্চিত।ৎ

২। অভিবাসী প্রত্যাশীরা লাভবান হবেন: বাংলাদেশের অনেক অভিবাসি প্রত্যাশী অপেক্ষামান রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইমিগ্রেন ভিসা একরকম বন্ধই রেখেছেন। আর জো বাইডেন আসার পর ইমিগ্রন্ট ভিসা পুনরায় চালু করবেন বলে, অঙ্গীকার করেছেন।  এটার ফলে বাংলাদেশে অনেক মানুষ উপকৃত হবেন, বাংলাদেশ লাভবান হবেন।

অবৈধভাবে বসবাসকারীরা লাভবান হবেন। প্রচুর বাংলাদেশের নাগরিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তারা সেখানে অবস্থান করছেন, কাজকর্ম করছেন।  তাদেরকে আইনগতভাবে বৈধতা দেয়ার কোনো উদ্যোগ ট্রাম্প সরকার নেয়নি।

তবে ডেমোক্রাটরা এ ব্যাপারে অনেক উদার। তাই ডেমোক্রেটরা বিজয়ী হলে অবৈধ ভাবে থাকা এসব নাগরিকদের বৈধতার পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে বলে তাঁরা মনে করছেন। এর ফলে বাংলাদেশ লাভবান হবে।

৪।  শিক্ষার্থীদের সুযোগ বাড়বে: বাংলাদেশের প্রচুর শিক্ষার্থী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার জন্য যায়। কিন্তু সেই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ট্রাম্প কড়াকড়ি আরোপ করেছিল। এখন জো বাইডেন বিজয়ী হলে শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগটা প্রসারিত হবে। যেটা বারাক ওবামার দুই মেয়াদে হয়েছিল।

৫। পরিবর্তিত পররাষ্ট্রনীতিতে লাভ হবে বাংলাদেশের: জো বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতি আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতি বলতে গেলে দুই মেরুতে। আর পরিবর্তিত পররাষ্ট্র নীতির কারণে জো বাইডেন বিজয়ী হলে ট্রাম্পের যে নীতি সে নীতি থেকে সরে আসবেন। তিনি ইতিমধ্যে  ঘোষণাও দিয়েছেন  জলবায়ু পরিবর্তনের প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন করবেন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করবেন।

আর এর ফলে পরোক্ষ ভাবে লাভবান হবে বাংলাদেশ। কারণ বাংলাদেশে জলবায়ুতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। তাছাড়া জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি জো বাইডেন বিজয়ী হন তাহলে এই সংস্থাগুলোর প্রতি মার্কিন অনীহা কমবে। ফলে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশ লাভবান হবে। এছাড়াও এই বিজয়ের ফলে দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন বিষয় লাভবান হতে পারে বাংলাদেশ।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

সৌদি রাজ পরিবারের ১৫০ সদস্য করোনা আক্রান্ত!

সৌদি রাজ পরিবারের অন্তত দেড়শ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। খবর নিউইয়র্ক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin