আহ মাশরাফি! বাহ মাশরাফি! আহ মাশরাফি! বাহ মাশরাফি! ২০ বলে ১৫ রান। একটি চার, একটি ছয়। ব্যাটসম্যানের নাম ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।৩টি ছয় ও একটি চারের সাহায্যে ২৫ বলে ৩৩ রান। করেছেন ক্রিস গেইল।আরেকজন খেলেছেন ১৭ বলে ৪২ রানের বিধ্বংশী একটি ইনিংস! যেখানে চার ৪টি, ছক্কা ৩টি।
কে তিনি? খেলা না দেখে থাকলে অনুমান করা কঠিন- মাশরাফি বিন মর্তূজা! এবং বিস্ময়কর ব্যাপার, তিনি ব্যাটিংয়ে নেমেছেন তিন নম্বরে! কোনো ধরনের ক্রিকেটে এর আগে মাশরাফি কখনো ওয়ানডাউনে ব্যাট করেছেন কী না তা কেউ তাৎক্ষনিকভাবে স্মরণ করতে পারেন নি। সম্ভবত এবারই প্রথম!
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) আজকের দ্বিতীয় ম্যাচে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে চিটাগং ভাইকিংস করেছিল ১৭৬ রান। রাতের শিশির ভেজা উইকেটে এই টার্গেট মোটেই সহজ কিছু ছিল না রংপুর রাইডার্সের জন্য।
তার উপর ওপেনিংয়ে নেমে মোটামুটি একটা ‘টেস্ট ইনিংস’ খেললেন ম্যাককালাম! ৫.২ ওভারে দলীয় ৩২ রানে ম্যাককালামের আউটের পর সেই বিস্ময়কর ঘটনার সাক্ষী হলো সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম! গ্যালারি এবং টিভি পর্দার সামনে থাকা সবাই বিস্ফোরিত নেত্রে প্রত্যক্ষ করলো ব্যাট বগলদাবা করে উইকেটে আসছেন মাশরাফি! আরও বড় চমকটা দেখা তারপর!
কী ইস্পাত কঠিন দৃড়তা নিয়ে স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যানের মতোই ব্যাট করলেন মাশরাফি! মুখোমুখি হওয়া আল-আমিনের প্রথম বলটা ঠেকিয়ে পরের বলে বাউন্ডারি মেরে খুললেন রানের খাতা। পরের ওভার থেকেই বোলারদের উপর তান্ডব চালানো শুরু! এই বলে চার তো পরের বলে ছক্কা! দ্বিতীয় উইকেটে ২৬ বলে উঠলো ৬০ রান! সানজামুলের বলে বোল্ড হওয়ার আগে মাশরাফি করলেন ৪২ রান।
সবচেয়ে বড় কথা, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান মানা হয় যাকে, সেই ক্রিস গেইলকে কেমন ম্লান দেখালো মাশরাফির পাশে! স্বয়ং গেইলকে দেখা গেল সিঙ্গেলস নিয়ে মাশরাফিকে স্ট্রাইক দেয়ার চেষ্টা করছেন! এক একটি দর্শণীয় শটের পর সবার মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে চিৎকার- সাবাস মাশরাফি, সাবাস! একইসঙ্গে কী আক্ষেপের ঝড়ও বয়ে যায় নি!
কী আক্ষেপ? এই মাশরাফিকেই তো ধরে বেঁধে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে পাঠানো হয়েছে! বিদায় নেয়া কোচ চন্ডিকা হাতুরুসিংহের ফর্মূলা অনুসরন করে তার উপর এতটাই চাপ সৃষ্টি করা হলো যে, শ্রীলংকার সঙ্গে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টসের পরই আচমকা ঘোষণা করলেন পরের ম্যাচ খেলেই বিদায় নেয়ার কথা!
দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে পরে ঠিকই সেই মাশরাফির শরণাপন্ন হয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আতœমর্যাদা সম্পন্ন মাশরাফি বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দিয়েছেন টি-টোয়েন্টিতে আবারও ফেরার অনুরোধ। তারপর চলমান বিপিএলে নিজের ক্যারিশমা দেখিয়েই যাচ্ছেন। অধিনায়কত্বে যেমন, বোলিংয়েও তেমন! আজ যেমন চিটাগংয়ের অমন মারমুখি ব্যাটিংয়ের পরও ৩ ওভারে ২৪ রান দিয়ে একটি উইকেট নিয়ে রংপুরের সবচেয়ে সফলতম বোলার! অবশ্য নাহিদুল ইসলাম এক ওভারে ৪ রানে পেয়েছেন এক উইকেট।
চিটাগংয়ের সঙ্গে রংপুর ম্যাচটা জিতেছে কী জিতে নি; সেই বিষয় সরিয়ে মাশরাফির ব্যাট হাতে ওয়ানডাউনে নামার সাহসিকতা এবং ৪২ রানের ইনিংসের গুরুত্ব এতটুকু ম্লান হবে না। মাশরাফি মানেই অন্য ব্যাপার। মাশরাফি মানেই চমক আর ব্যতিক্রমী কিছু! এখনো ম্যাশের ভেতরে ক্রিকেটকে দেয়ার মতো অনেক কিছুই আছে!
আর কত বিস্ময় জমা রেখেছেন মাশরাফি?