`পাপ কখনো চাপা থাকে না’

সৌদি আরবে জিয়া পরিবারের অবৈধ সম্পদের কথা বলায় প্রধানমন্ত্রী ববাবর উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন বেগম জিয়া। আজ বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানিয়েই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল হুংকার ছাড়লেন, ৩০ দিনের মধ্যে জবাব না পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মির্জা ফখরুল যখন ওই কথা বলছিলেন তখন তাদের বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়া গুলশানের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ছিল আজ। এতিমদের টাকা মেরে খাওয়া প্রমাণ হয়েছে দাবি করে মঙ্গলবার আদালতে সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন জানায় দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী।

আর প্রধানমন্ত্রীর কম্বোডিয়া সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনের দুই সপ্তাহ পর বিএনপি আইনি নোটিশ পাঠাল। তবে মির্জ ফখরুলের ওই কথা জানানোর ৭ ঘণ্টার মধ্যেই বিকেল পাঁচটায় এক সংবাদ সম্মেলনে নোটিশের মোক্ষম জবাব দিল আওয়ামী লীগ। এক দুর্নীতি ঢাকার অপচেষ্টায় জাতি আবার জানল বিএনপি ও জিয়া পরিবারের অগণিত দুর্নীতির ফিরিস্তি।

বেগম জিয়া ও দুই পুত্রের দুর্নীতির ফিরিস্তি দিয়ে শেষ করা যাবে না। তবে আজ উঠে এসেছে এর কয়েকটি। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলা সন্দেহাতীত প্রমাণিত হয়েছে, তাঁকে কারদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। ওই মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসেছিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের কর্মকর্তা।

২০০১-০৬ সালে বিএনপি আমলে ৯৮০ কোটি টাকার দুর্নীতি করে লুট করেছে বেগম জিয়ার পুত্রদ্বয়। আর ওই সময়ে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে ছায়া সরকার সৃষ্টি করে লুট করা হয়েছে দেশের দুই লাখ কোটি টাকার সম্পদ, যা গেছে জিয়া পরিবার, তাঁর দুই পুত্র ও বিএনপি নেতাদের কাছে। ওই সময়ে শুধু বিদ্যুৎখাতে থেকেই লুট হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা।

দুর্নীতির বরপুত্র তারেক জিয়াকে ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানায় দেশটি। ২০০৮ সালে ৩ নভেম্বর এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি তারবার্তা পরে উইকিলিকসে ফাঁস হয়, যেখানে বলা হয়েছে শুধু দুর্নীতির কারণেই তারেক জিয়াকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানায় যুক্তরাষ্ট্র। ওই ঘটনা থেকেই বোঝা যায় দেশে বিদেশে তারেক জিয়ার দুর্নীতির কথা সর্বজনবিদিত।

জার্মানির এক সিমেন্স কোম্পানি থেকেই তারেক-কোকো হাজার কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছে। সিমেন্সের সঙ্গে দেশের সব চুক্তিতে মিস্টার ২ পারসেন্ট ছিলেন তারেক। এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি থেকে সাড়ে ৭ কোটি টাকা পেয়েছেন জিয়া পরিবারের জ্যেষ্ঠ পুত্র।

আর ওই টাকা তারেকের সব দুর্নীতির বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের মাধ্যমে চলে যায় সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে। একটি কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে সাড়ে ৭ লাখ মার্কিন ডলার ঘুষ নিয়েছেন তারেক জিয়া। সেই টাকাও গেছে সিঙ্গাপুরে।

বেগম জিয়ার প্রয়াত ছোটপুত্র আরাফাত রহমান কোকোর সিঙ্গাপুরে পাচার করা ২১ লাখ ৫৫ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার ফেরতও আনা হয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যসহ ১২টি দেশে জিয়া পরিবারের ১২ বিলিয়ন ডলার থাকার কথাও গণমাধ্যমে এসেছে। এই দুর্নীতির তদন্ত করছে সৌদি সরকারও।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ২০১৭ সালে মে মাসে কানাডার ফেডারেল আদালতে বলা হয়েছে বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। বেগম জিয়া শুধু নয়, তাঁর পরিবারই শুধু নয়, তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিদেশি আদালত কতৃক স্বীকৃতি পেয়েছে। তাঁদের শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা কোনো ভাবেই টিকবে না।

আর কৃষিমন্ত্রী আওয়ামীগ নেত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘যা প্রকাশ হয়েছে, তা টিপ অব দ্য আইসবার্গ। জিয়া পরিবাবের মোট দুর্নীতির ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র। দুর্নীতির পরিমাণ এরচেয়ে অনেক বেশি। এগুলো কাগজে এসেছে এগুলো তদন্তাধীন এবং এর মাধ্যমে কঠিন যে সত্য বেরিয়ে আসবে তার শুরু মাত্র হয়েছে। আর আওয়ামী লীগ আইনি নোটিশকে আইনিভাবেই মোকাবেলা করবে।’

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ বিটিভিতে আমরা ৪০ দিন শুনেছি জিয়াউর রহমানের পুরোনো প্যান্ট কেটে তারেক রহমানের প্যান্ট তৈরি করে দিতেন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে আজকে তাদের বসন-ভূষণ সম্পদের পরিমাণ, বিদেশে যে তারেক জিয়া আছেন সেখানে তারেক জীবনযাত্রার ব্যয়ভার কে নির্বাহ করছে, কীভাবে নির্বাহ করছে?

এটাও দেশের মানুষ জানতে চায়। আর যেই অভিযোগে বেগম জিয়ার মামলা চলছে তা দিয়েছে তত্ত্ববধায়ক সরকার। কোনো দুর্বলতা না থাকলে তিনি (বেগম জিয়া) আইনের মাধ্যমে কেসগুলোকে ফেস করুক।

বেগম জিয়ার ছেলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে এসেছিল এফবিআই। তাদেরকে কেউ নিয়ে আসতে পারে না, তারা আসে সেই বাহিনীর বাধ্যবাধকতা থেকেই। এফবিআইয়ের বিরুদ্ধে তারেক জিয়া আজ পর্যন্ত কোনো কথা বলেনি। কৃষিমন্ত্রীর মতে, ‘বিএনপি জানে নিস্ফল তাঁদের প্রচেষ্টা। তাই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা তাদের। এখানে মনে রাখতে হবে পাপ কখনো চাপা থাকে না।’

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin