‘দ্য গেম ইজ স্টিল অন’ – সংসদ ছাড়লেই প্রধানমন্ত্রী? – সমঝোতা এখন দিল্লিতে

কোটা সংস্কার আন্দোলন আপাতত শেষ হলেও সরকারের ‘বিপদ’ এখনো কাটেনি- এমনটাই বলছেন বিএনপির নেতারা। একাধিক বিএনপি নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা বলেছেন, ‘দ্য গেম ইজ স্টিল অন’।  সরকারের সামনে নতুন সমস্যা আসছে- এমন ফিসফাস কথাবার্তা বিএনপির নেতারা কর্মীদের বলছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে, তারেক-অধ্যাপক মামুনের কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর বিএনপি অনেকটাই ব্যাক ফুটে চলে গেছে। কর্মীরা তো বটেই, নেতারা পর্যন্ত হতাশ হয়ে পড়েছেন।

কিন্তু গত দুই দিনে লন্ডনের ফোন আবার নেতাদের আশান্বিত করেছে। তারেক জিয়া ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করেছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সব সদস্যের সঙ্গে। তাদের তিনি বলেছেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন এখনো শেষ হয়ে যায়নি। সামনে এই আন্দোলন নতুন রূপে আসছে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি একজন নেতা বলেছেন, ‘সামনে নতুন ইস্যু আসছে। সেই ইস্যুও অনেক জনপ্রিয়।

সেই ইস্যুতেই বড় আন্দোলন গড়ে উঠবে বলে আমাদের ধারণা।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘সরকারের জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে। তাই ষড়যন্ত্র করার দরকার নেই, এমনিতেই বড় আন্দোলন গড়ে উঠবে। সরকার কৌশলে কোটা আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নিতে পেরেছে। কিন্তু বার বার জনগণকে ধোঁকা দেওয়া যায় না।’

একাধিক সূত্র বলছে, ‘বিএনপি-জামাত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোট সংস্কার আন্দোলন নতুন করে শুরু করার চেষ্টা করছে। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের সাথে কয়েক দফা বৈঠকের খবরও পাওয়া গেছে। এদিকে তিনজন ছাত্রকে তুলে নিয়ে আবার ফেরত দেওয়ার ঘটনায় কোটা সংস্কার আন্দোলন আবার নতুন করে শুরু হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে।

শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয়, সচিবালয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়েও বিএনপি গোপনে কাজ করছে। বিভিন্ন পদ বঞ্চিত সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের যোগাযোগের খবর সচিবালয়ে কান পাতলেই শোনা যায়। সরকারি কর্মচারীদেরও উস্কে দেওয়ার কাজ থেমে নেই। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারের কাছে বার্তা দিয়েছে; সচিবালয়ে পদ বঞ্চিতরা যেকোনো সময়ে অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারে।

বেতন ভাতাসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের আন্দোলনও নতুন করে শুরুর আলামত পাওয়া গেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে বেসরকারি শিক্ষকরা বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছে।

বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, তারেক জিয়া একসঙ্গে বিভিন্ন পেশাজীবী এবং শিক্ষার্থীদের মাঠে নামানোর নতুন নীলনকশা তৈরি করেছে। ঈদের পর থেকে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যেতে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির একজন নেতা। ওই নেতা বলেছেন,‘কৌশলগত কারণে আমরা এক পা পিছিয়েছি, দু পা সামনে এগুবার জন্য। সামনে দেখুন কি কি হয়।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অবশ্য বলেছেন, ‘বিএনপির কর্ম হলো ষড়যন্ত্র করা। আমরা এ ব্যাপারে সজাগ। বিএনপি তো ২০০৮ সাল থেকেই নানা ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু জনসমর্থন ছাড়া শুধু ষড়যন্ত্র করে একটি জনপ্রিয় সরকারের ক্ষতি করা যায় না।’

সংসদ ছাড়লেই প্রধানমন্ত্রী?

জাতীয় পার্টিকে কাছে পেতে বিএনপি প্রয়োজনে প্রাধানমন্ত্রীত্ব দিতেও রাজি। লন্ডন থেকে জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অবশ্য এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐক্যের ব্যাপারে তারেক জিয়া যতটা আগ্রহী, ঠিক ততটাই আনাগ্রহী বিএনপি নেতারা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতাদের বলেছেন, ‘এরশাদের ওপর নির্ভর করা হবে আত্মহত্যার শামিল।’

তাছাড়া, এরশাদের সঙ্গে ঐক্য হলে, গণফোরাম, বিকল্প ধারার মতো দলগুলোকে জোটে টানা কঠিন হবে। কিন্তু তারেক জিয়া ‘যেকোনো মূল্যে’ এরশাদকে চান। তবে, বিএনপির একটি সূত্র বলছে, এরশাদকে কাছে টানা আসলে একটা কৌশল। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে জাতীয় পার্টিকে কেড়ে নিতেই এই কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে তারেক জিয়ার মূল লক্ষ্য হলো, জাতীয় পার্টির মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদর পদত্যাগ করানো। তাহলে এই সংসদ অর্থহীন হয়ে পড়বে।

এনিয়ে জাতীয় পার্টির নেতা জিএম কাদেরের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছে বিএনপির নেতারা। ওই বৈঠকে ঐক্যের প্রথম শর্তই দেওয়া হয়েছিল যে, জাপার এমপিদের সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। জাতীয় পার্টির জিএম কাদের পদত্যাগের ব্যাপারে ইতিবাচক হলেও রওশন এরশাদ পদত্যাগের পক্ষে নন। এমপিদের মধ্যে সিংহভাগই রওশন এরশাদের পক্ষে। তবে, জাতীয় পার্টিকে বাগে আনতে নানা রকম টোপ দেওয়া অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। সম্প্রতি এরশাদ জিএম কাদেরকে জিঙ্গেস করেন, বিএনপির সঙ্গে জোট করলে কত আসন ছেড়ে দেবে।

জিএম কাদের বিষয়টি বিএনপির দুজন নেতাকে বলেন। ওই দুজন নেতা লন্ডনে যোগাযোগ করেন। লন্ডন থেকে বলা হয়, এরশাদ সাহেব বলুক তিনি কত আসন চান। এরপর পয়লা বৈশাখে এরশাদ ৭০ আসন এবং ১২ জন মন্ত্রী দাবি করেন। প্রকাশ্যে এরশাদের এই দাবির পর তারেক জিয়া জানিয়েছেন, বাজেট অধিবেশনের আগে যদি জাতীয় পার্টির এমপিরা একযোগে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন, তাহলে ৭০ আসন এমনকি প্রযোজনে প্রধানমন্ত্রীত্ব দেওয়া হবে জাপাকে।

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রীত্বের টোপ দেওয়া হয়েছে আসলে রওশন এরশাদের দিকে তাকিয়ে। কারণ, এরশাদ প্রধানমন্ত্রী হবেন না। রাষ্ট্রপতি ছাড়া তিনি কোনো পদ নেবেন না বলেও জানিয়েছেন। তাই জাতীয় পার্টি থেকে প্রধানমন্ত্রী হলে, এই পদের দাবিদার হলেন রওশন এরশাদ এবং জি এম কাদের। তাই সংসদ থেকে পদত্যাগের ক্ষেত্রে এটা রওশন এরশাদের জন্য লোভনীয় টোপ হতে পারে, এই বিবেচনা থেকেই বিএনপি এমন প্রস্তাব দিচ্ছে।

তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি দুটি দলেরই মূল চিন্তা হলো প্রতারণা ও মিথ্যাচার। দুটি দলই পরস্পরের সঙ্গে প্রতারণার খেলায় মেতেছে। শেষ পর্যন্ত জাপা-বিএনপির জোট হবে না, আর জাপার এমপিরা পদত্যাগও করবে না।

সমঝোতা এখন দিল্লিতে

আগামী ২২ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ভারত যাচ্ছে। পরদিন ভারতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হবে তাঁদের। আর ওই প্রতিনিধি দল দেশে ফিরে আসবে ২৪ এপ্রিল।

আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল ফিরে আসার পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে তাদের একটি প্রতিনিধি দল যাবে ভারতে।

এদিকে রাষ্ট্রীয় সফরে বর্তমানে সৌদি আরব আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে সৌদি জোটের সামরিক মহড়া পর্যবেক্ষণ শেষে আজ সোমবারই লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন প্রধানমন্ত্রী। লন্ডনে অনুষ্ঠেয় কমনওয়েলথ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে প্রধানমন্ত্রীর। অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়েও কথা হবে।

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয় এবং সব দল যেন এতে অংশগ্রহণ করতে পারে এ ব্যাপারে উদ্যোগী ভারত। তবে ভারত চায় এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন, আর তা হতে হবে বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী। এ কারণেই দুই পক্ষকে একটা সমঝোতার জায়গায় আনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর সমঝোতার উদ্দেশেই দুই দলের প্রতিনিধিরা ভারত যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

ফখরুলের ১৫০-১৫০ নির্বাচনী ফর্মুলা

প্রকাশ্যে বিএনপি বলছে, বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন নয়। কিন্তু গোপনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করেছে। জামাতকে বাদ দিয়ে সর্বদলীয় এই জোটে বিএনপি মাত্র ১৫০ আসন নিজেদের জন্য রেখে বাকি ১৫০ আসন শরীকদের জন্য ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে।

একাধিক সূত্র বলছে, মির্জা ফখরুলের এই প্রস্তাব পেয়েই এরশাদ ৭০ আসনের প্রস্তাব দিয়েছেন। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, শেষ পর্যন্ত যদি, বেগম জিয়াকে ছাড়াই নির্বাচন করতে হয়, তাহলে বিএনপি একটি লক্ষ্য নিয়েই নির্বাচন করবে, সেটি হলো আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা।

বিএনপির একজন নেতা বলেন, ‘এরকম পরিস্থিতিতে নির্বাচন করতে হলে সেটি করা হবে আন্দোলনের অংশ হিসেবে। আর ওই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো সরকারের পতন।’ ওই নেতা বলেন, ‘এটা ক্রমশ: স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে বেগম জিয়ার মুক্তির সম্ভাবনা নেই। তাই, এ ব্যাপারে আমরা নূন্যতম ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে চাই।’

বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি যদি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেই করবে। আসন নিয়ে ভাববে না।

সম্প্রতি মির্জা ফখরুল ইসলাম দলের নেতাদের কাছে ঐক্যের স্বার্থে অর্ধেক আসন ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। বাকি অর্ধেক আসন জাতীয় পার্টি, বিকল্প ধারা, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্যসহ সব দলগুলো দেওয়ার কথা বলেছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, ‘সর্বদলীয় নির্বাচনী ঐক্য করার একটা আলোচনা বিএনপিতে আছে। তবে তা ২০ দল ভেঙে না। ২০ দলীয় জোট আছে, এর বাইরে ক্রিয়াশীল সব দলকে নিয়ে একটা নির্বাচনী প্লাটফরম করার চিন্তা আছে।’

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই দেড়শ, দেড়শ তত্ত্ব কমিউনিস্ট পার্টির প্রয়াত নেতা মোহাম্মদ ফরহাদের থেকে নেওয়া। ১৯৮৬ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন মোহাম্মদ ফরহাদ। আর এই নির্বাচনে দুই নেত্রীকে দেড়শ আসন করে প্রতীকী নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ওই কমিউনিস্ট নেতা।

ওই প্রস্তাব রাজনৈতিক অঙ্গনে বিপুল সাড়া ফেলেছিল। তখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইন অনুযায়ী একজন প্রার্থী যত খুশি আসনে প্রার্থী হতে পারতেন।  মোহাম্মদ ফরহাদের প্রস্তাবের পর বিচলিত এরশাদ গণ প্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ সংশোধন করেছিলেন রাতের অন্ধকারে। সংশোধনীতে বলা হয়েছিল একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। এরশাদ চলে গেলেও ওই সংশোধনী এখনো বহাল রয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব, বেগম জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় সরকার পুন:প্রতিষ্ঠা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের লক্ষ্যে এমনই প্রতীকী নির্বাচন করতে চান। যেখানে বিএনপি ক্ষমতায় যাবার জন্য নয় বরং সরকারের পতনের লক্ষ্যে নির্বাচন করতে চায়। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সব দলকে ঐক্যবদ্ধ করা কঠিন। তবে, বৃহত্তর ত্যাগ স্বীকার করে শেষ পর্যন্ত যদি সেটা করা যায়, তাহলে সরকারের জন্য কারচুপি করা কঠিন হয়ে পড়বে।

আ. লীগের আসল প্রতিপক্ষ কে?

শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ৬ এপ্রিল গিয়েছিলেন দিল্লি। সেখানে আশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনূস সেন্টার উদ্বোধন করেন তিনি। এটা ছিল প্রকাশ্য ঘটনা। কিন্তু তিন দিনের দিল্লি সফরে ড. ইউনূস বিজেপি সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশের রাজনীতি এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে।

কথা বলেন ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গেও। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিজেপি নেতা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ড. ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হলে, সে নির্বাচন অর্থবহ হবে না। অর্থবহ নির্বাচনের জন্য সকল দলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।’ এজন্য ড. ইউনূস ভারতকে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করতে বলেন।

প্রায় কাছাকাছি সময়ে বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন গিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তিনি পেট্রোলিয়াম সংক্রান্ত এক সেমিনারে অংশ নেন। প্রকাশ্য এই কর্মসূচির বাইরে গণফোরামের এই নেতা ১২জন সিনেটের এবং কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে এক নৈশভোজে মিলিত হন। ওই নৈশভোজের আয়োজক ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা একটি প্রতিষ্ঠান।

সেখানে ড.কামাল মার্কিন কংগ্রেসম্যান ও সিনেটরদের বাংলাদেশ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। যে ব্যাখ্যার পুরোটাই ছিল বর্তমান সরকারের সমালোচনা। ড. কামাল হোসেনও বাংলাদেশে অর্থবহ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের প্রস্তাব করেন। ড. কামাল হোসেন মন্তব্য করেন, এছাড়া ‘জনরায়’ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য একাধিক দেশের কূটনীতিকদের বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে ‘বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছেন। ওই মতামতে তিনি বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন নিয়ে এখনো সংকট কাটেনি বলে মন্তব্য করেছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আগামী নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কয়েকটি দাতা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছে। ওই সব বৈঠকে সুজনের পক্ষ থেকে সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই।

এই চারটি ঘটনাই প্রমাণ করে, আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ এখন বিএনপি নয় বরং সুশীল সমাজ। বিএনপি এখন প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করছে কিন্তু ওই সমালোচনা সাধারণ মানুষের কাছে কোনো আবেদন রাখতে পারছে না। কিন্তু সুশীল সমাজ কৌশলগত স্থানগুলোতে সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য উপাত্ত দিচ্ছে। আওয়ামী লীগকে আন্তর্জাতিক ভাবে নি:সঙ্গ এবং সমালোচিত করাই এখন সুশীল সমাজের প্রধান লক্ষ্য।

আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সুশীলদের গোপন তৎপরতাগুলো নজরে আনছে না বা উপেক্ষা করছে। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছে, সুশীলরা এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে যাতে, আন্তর্জাতিক মহল থেকে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি হয়।

স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠতেই পারে, আওয়ামী লীগের আসল শত্রু কে? বিএনপি, জামাত না সুশীল সমাজ?

ফখরুল কেন দূরে?

গত এক সপ্তাহ ধরে বিএনপিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। রাজশাহীর জনসভায় খন্দকার মোশাররফই সভাপতিত্ব করেন। দলের অন্যান্য কার্যক্রমেও দেখা যাচ্ছে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে নেতৃত্ব দিতে। আজ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে তিনিই নেতৃত্ব দিলেন।

যদিও বলা হচ্ছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মায়ের মৃত্যুর কারণে কয়েকদিন তিনি দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন না। তাছাড়া শারীরিকভাবেও তিনি কিছুটা অসুস্থ। তবে দলের অন্য একটি সূত্র বলছে মায়ের মৃত্যুর জন্য এতদিন নিষ্ক্রিয় থাকার মানুষ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন।

কিছু সিদ্ধান্ত যা লন্ডন থেকে দলের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটা বিএনপির মহাসচিবের পছন্দ হচ্ছে না। যেমন, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে মির্জা ফখরুল ধীরে চলো নীতি অবলম্বনের পক্ষে ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন এই আন্দোলন আগে পর্যবেক্ষণ করতে। কিন্তু তারেক জিয়ার চাপেই তাঁকে সংবাদ সম্মেলন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিতে হয়।

শুধু কোটা সংস্কার নয়, বিভিন্ন ইস্যুতে কী বলতে হবে না হবে, তা ডিক্টেট করা হচ্ছে মির্জা ফখরুলকে। এটা তাঁর মোটেও পছন্দ হচ্ছে নয়। এ কারণেই দলের নেতৃত্ব থেকে দূরে সরে গেছেন। তাঁর বদলে ড. খন্দকার মোশাররফ সামনে এসেছেন।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin