দিল্লির মাওলানা সাদ বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারছেন না: ডিএমপি কমিশনার

মাওলানা সাদ ইস্যুতে বিভক্তির মধ্যেই গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুক্রবার শুরু হচ্ছে ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা। মুসলমানদের অন্যতম বৃহত্তম এ ধর্মীয় গণজমায়েতকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন, দিল্লির মাওলানা সাদ বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারছেন না।

এবারের ইজতেমার আগে তাবলিগ জামাতের বিভক্তি প্রকাশ্যে এসেছে। দিল্লির মাওলানা সাদকে নিয়ে দুই ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছেন তাবলিগ অনুসারীরা। আলেমদের বড় অংশটি মাওলানা সাদকে ইজতেমায় আসতে বাধা দিয়ে আসছিলেন।

এর মধ্যেই বুধবার তিনি ঢাকায় পৌঁছেছেন। তার এই আসাকে কেন্দ্র করে বুধবার দিনভর বিক্ষোভ হয়েছে বিমানবন্দরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। দেশের বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসায় বিক্ষোভ করেছেন আলেম-ওলামা এবং মাদ্রাসা ছাত্ররা।

এ নিয়ে টঙ্গীর তুরাগ তীরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ প্রেক্ষিতে সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন, দিল্লির মাওলানা সাদ বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারছেন না।

যেকারণে বিতর্ক
নিউজ ডেস্ক
ঢাকা: মাওলানা সাদ ইস্যুতে বিভক্তির মধ্যেই গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুক্রবার শুরু হচ্ছে ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা। মুসলমানদের অন্যতম বৃহত্তম এ ধর্মীয় গণজমায়েতকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

তবে এবারের ইজতেমার আগে তাবলিগ জামাতের বিভক্তি প্রকাশ্যে এসেছে। দিল্লির মাওলানা সাদকে নিয়ে দুই ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছেন তাবলিগ অনুসারীরা। আলেমদের বড় অংশটি মাওলানা সাদকে ইজতেমায় আসতে বাধা দিয়ে আসছিলেন। এর মধ্যেই বুধবার তিনি ঢাকায় পৌঁছেছেন। তার এই আসাকে কেন্দ্র করে বুধবার দিনভর বিক্ষোভ হয়েছে বিমানবন্দরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। দেশের বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসায় বিক্ষোভ করেছেন আলেম-ওলামা এবং মাদ্রাসা ছাত্ররা।

২০১৫ সাল থেকে মাওলানা সাদ ইজতেমার আখেরি মোনাজাত করে আসছেন। তবে তার কিছু বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে আলেমদের বড় অংশ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। মাওলানা সাদ যেন ইজতেমায় আসতে না পারেন সে ব্যাপারে আলেমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তার আসাকে ঠেকাতে পারেননি আলেমরা।

বুধবার দিনভর বিক্ষোভের পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কওমি মাদ্রাসার আলেমরা। তারা ইজতেমার সময় তুরাগ তীরে অবস্থান নেবেন এবং মাওলানা সাদ যেন বয়ান করতে না পারেন সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন। এই ইস্যু নিয়ে এবারের ইজতেমায় উত্তেজনা বিরাজ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্যে দিয়ে ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ইজতেমার প্রথম পর্ব।

তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে তুরাগ তীরে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল সামিয়ানা। রাস্তাঘাট মেরামত, মাঠ সমতল করাসহ নানা প্রস্তুতিমূলক কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ময়দানের উত্তর পশ্চিম প্রান্তে প্রস্তুত রয়েছে বিদেশিদের জন্য আলাদা নিবাস। তাদের থাকা, খাওয়া ও অবস্থানে যেন কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য ইজতেমার নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকরা দিনরাত কাজ করছেন।

তাদের রান্না-বান্নার জন্য গ্যাস সংযোগ, বিদ্যুত সংযোগসহ সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এবারের ইজতেমায় ৩২ জেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে লাখো মুসুল্লি অংশগ্রহণ করবেন। ইজতেমায় আগত এসব মুসল্লির সুবিধার্থে গভীর নলকূপ থেকে পানি সরবরাহ, স্থায়ী টয়লেট ও সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ময়দানের পশ্চিম প্রান্তে বয়ানমঞ্চ, দোয়া মঞ্চ, তুরাগ নদীতে ভাসমান সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

বিশ্ব ইজতেমার মুরব্বি প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনসহ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ সন্তোষজনক। এবার প্রথম পর্বে ঢাকা, পঞ্চগড়, নীলফামারী, শেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাইবান্ধা, নাটোর, মাদারীপুর, লক্ষ্মীপুর, ঝালকাঠি, ভোলা, মাগুরা ও নোয়াখালী। এসব এলাকার মুসল্লিরা ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত ২৮টি খিত্তায় অবস্থান করবেন।

মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ইজতেমা ময়দানে জায়গা কম থাকায় ২০১৬ সাল থেকে ৬৪ জেলার মুসল্লিদের ৩২ জেলা করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এই ৩২ জেলার মুসল্লিদের মধ্যে আবার ১৬ জেলা করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিবছর ১৬ জেলা করে দুই ধাপে ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেন এই বিশ্ব ইজতেমায়। এবার দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হবে ১২ জানুয়ারি শুক্রবার। আখেরি মোনাজাত হবে ১৪ জানুয়ারি।

আসছেন দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইজতেমা ময়দানে এরই মধ্যে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। বাস, মিনিবাস, ট্রেনে চড়ে দলে দলের আসছেন মুসল্লিরা। এছাড়া ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মরক্কো, সুদান, মিসর, ইরাক, ইরানসহ অন্তত ১৩৫টি দেশের মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। এসব দেশ থেকে এবার সহস্রাধিক মুসল্লি অংশ নেবেন বলে আশা আয়োজকদের।

লাখ লাখ মুসল্লির সমাগমকে সামনে রেখে ইজতেমা ময়দানে গতবারের চেয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও বাড়ানো হয়েছে। স্থায়ী সিসিটিভি বসানোসহ থাকছে ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার, পুলিশ, র‌্যাবের আলাদা কন্ট্রোল রুম। ইজতেমা মাঠের একটি কেন্দ্রীয় এবং পাঁচটি সাব কন্ট্রোল রুম থাকছে।

বিরোধিতা উপেক্ষা করে বাংলাদেশে মাওলানা সাদ
বিরোধিতা উপেক্ষা করে গাজীপুরের টঙ্গীতে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে ঢাকায় পৌঁছেছেন দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের জিম্মাদার মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভি ও নিজামুদ্দিনের একটি জামাত।

সেখান থেকে পুলিশ প্রহরায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তিনি রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে পৌঁছেন। আপাতত সেখানেই তিন দিন অবস্থান করবেন।

শাহজালাল বিমানবন্দরে দিল্লি থেকে আগত থাই এয়ারওয়েজের টিজি ৩২১ ফ্লাইটে একটি বুধবার দুপুর পৌনে ১টায় পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরে কর্তব্যরত পুলিশের বিশেষ শাখার একজন কর্মকর্তা।

ওই কর্মকর্তা জানান, ১২ টা ৪৫ মিনিট তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছান। এ সময় তার সাথে একটি জামায়াতও ছিল। পুলিশ প্রহরায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তিনি রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে পৌঁছেন। আপাতত সেখানেই তিন দিন অবস্থান করবেন।

অপরদিকে বিমানবন্দর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মাওলানা সাদ বিমানবন্দরে আসার পর পরই পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা দেখা করেছেন। পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে তিনি বিশ্ব ইজতেমায় যোগদান করবেন। আন্দোলনের অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে বুধবার বেলা ১১ টা থেকে মাওলানা সাদের আগমন ঠেকাতে বিক্ষোভ করছেন হেফাজত ও বেফাকের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে বিমানবন্দর এলাকায় আগমনের পক্ষের কর্মীদেরও দেখা যায়।

আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা থেকে উত্তরা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে তীব্র ভোগান্তিতে পরেন যাত্রী সাধারণ।

এর আগে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর ঢাকায় আসা ঠেকাতে বিক্ষোভ ও তার বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে আন্দোলন থেকে তাবলিগ জামাতের ৫৩ তম বিশ্ব ইজতেমায় তাকে না আসার আহ্বান জানানো হয়।

অপর একটি সূত্র জানায়, মাওলানা সাদ কান্ধলভী ও নিজামুদ্দিন মারকাজের সদস্যদেরকে বাংলাদেশ সরকার বিশেষ কূটনৈতিক ভিসা দিয়েছে। সেই ভিসায় তারা ঢাকা এসেছেন।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ইজতেমায় দিল্লির নিযামুদ্দিন মারকাজের মুরুব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলবীর অংশগ্রহণকে প্রতিহত করতে উত্তরা এলাকার বিভিন্ন মসজিদে এবং বিশেষ করে এয়ারপোর্ট এলাকার মসজিদগুলোতে আলেম ওলামা ও মাদরাসার শিক্ষক – শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছেন। এতে প্রায় দুই হাজার মুসল্লি রয়েছেন।

মাওলানা সাদ কান্ধলভী তার নিজের বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহার না করে এবং সবার সম্মিলিত সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে মাওলানা সাদের ইজতেমায় আসা অনুচিত এমন দাবিতেই তারা জড়ো হচ্ছেন।

জানা গেছে, দিল্লির নিজামুদ্দিনের ‘বিতর্কিত’ মুরব্বি মাওলানা মুহাম্মদ সাদের আসন্ন বিশ্ব ইজতেমায় আসার বিরোধিতা করছেন বাংলাদেশ-ভারতের তাবলিগ-জামাতকর্মী ও কওমিপন্থী আলেমদের একাংশ। তারা বলছেন, দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে সাদের ‘বিতর্কিত’ বক্তব্যের কারণে তার সঙ্গে কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আহমদ শফীসহ বাংলাদেশের সিনিয়র আলেমরাও চান, বিশ্ব ইজতেমায় সংঘর্ষ এড়াতে সাদ ও তার অনুসারী বা বিরোধীরাও যেন ইজতেমায় অংশ না নেন। যদিও তাবলিগের শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, মোহাম্মদ খান শাহাবুদ্দীন নাসিম, অধ্যাপক ইউনূস শিকদার, মাওলানা মোশাররফ হোসাইন সাদের ঢাকা সফরের পক্ষে রয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে গত ৭ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়ায় অনুষ্ঠিত তাবলিগের শুরা সদস্য ও আলেমদের বৈঠকে এবারের ইজতেমায় মাওলানা সাদের না আসার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিবর্তে বৈঠকের ফয়সাল নিজামুদ্দিনের দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের আসার সিদ্ধান্ত দেন।

ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত সেদিন রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে হস্তান্তর করা হয়। তখন সবাই জানতেন ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের বাইরে মাওলানা সাদ বাংলাদেশে আসবেন না।

তাছাড়াও ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দও মাওলানা সাদ কান্ধলভীর প্রতি আস্থাশীল নয় বলেই ভারত সফরকারী প্রতিনিধি দলের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। সে প্রতিবেদনের কপিও বাংলাদেশের আলেমদের গঠিত কমিটির প্রতিনিধির সরকারপক্ষকে হস্তান্তর করেন।

তবে ভারতে সফরকারী সদস্যদেরকে মাওলানা সাদ ও তার পক্ষ থেকে যে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন সেখানে তিনি স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন যে, আগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে তিনি এবারের বিশ্ব ইজতেমায়ও অংশগ্রহণ করবেন।

মাওলানা সাদের প্রতি সরকারের এত দরদ কেন?
তাবলিগ জামাতের মূলনীতি নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে বহু বছর ধরেই। ফাজায়েলে আমল নামে ছয় উসূলের একটি বইয়ের নির্দেশনার আলোকেই তাদের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, কুরআনের মৌলিক বিষয়গুলো তাদের এই বইয়ে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। বিশেষ করে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি তারা সব সময়ই এড়িয়ে চলে। ফাজায়েলে আমল নামক বইয়ে অল্প কিছু কুরআনের আয়াত ও কয়েকটি সহীহ হাদিস আছে। এখানে আবার বেশ কিছু জাল হাদিস ও কাল্পনিক গল্পকে হাদিস বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এসব নিয়েই মূলত দীর্ঘদিন যাবত আলেম ওলামাদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি হয়ে আসছে।

তারপর তাবলিগের লোকদের বিরুদ্ধে গুরুতর একটি অভিযোগ হল, তারা মানুষকে ভাল কাজের কথা বললেও সকল প্রকার অন্যায়ের প্রতিবাদ করা থেকে বিরত থাকে। এমনকি আল্লাহ, রাসুল, কুরআন, হাদীস ও ইসলামী শিক্ষা নিয়ে ধর্মবিদ্বেষীরা গালিগালাজ করলেও এবিষয়ে কোনো কথা বলেনি তাবলিগ জামাতের লোকজন। আর তাবলিগ জামাতের প্রধান কার্যালয় হলো ভারতের দিল্লিতে। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করলে সারা বিশ্বের মুসলমানরা বারুদের মতো জ্বলে উঠে। কিন্তু, দিল্লিতে বসেও তাবলিগ জামাতের লোকজন একটি টু শব্দও করেনি।

এসব কারণে মানুষের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই তাবলিগের ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয় রয়েছে। অনেকেই বলে থাকে ইসলামকে কেবলই মসজিদের ভেতর আবদ্ধ করে রাখার লক্ষ্যেই তাবলিগ জামাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনেক আলেম ওলামা এর পেছনে অনেক চক্রান্ত আছে বলেও মন্তব্য করে থাকেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের তাবলিগ জামাতের মূলকেন্দ্র নিজামুদ্দীন মারকাযের প্রধান মওলানা সাদ কান্ধলভির কিছু বক্তব্য নিয়ে আবার নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তাবলিগের লোকজন অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধে। তারা এখনো মাইকে আজান দেয় না। বিশ্ব ইজতেমায়ও এটা করা হয়। এনিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের প্রতি প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। এখন মাওলানা সাদের কিছু বিতর্কিত বক্তব্য মানুষকে আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।

মাওলানা সাদ বলেছেন, ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল ফোন রাখা হারাম। কারো পকেটে ক্যামেরা বিশিষ্ট মোবাইল রেখে নামায পড়লে নামায শুদ্ধ হবে না। যে উলামায়ে কেরাম ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখেন, তাঁরা উলামায়ে ছূ (নিকৃষ্ট)। বারবার কসম করে বলেন, তাঁরা হলেন উলামায়ে ছূ। এমন আলেমরা হল গাধা। মোবাইলে কুরআন শরীফ পড়া এবং শোনা, প্রস্রাবের পাত্র থেকে দুধ পান করার মতো। উনার শব্দ হল, পেসাবদানী ছে পানি পিনা হাঁয়’। কুরআন শরীফ শিখিয়ে যাঁরা বেতন গ্রহণ করেন, তাঁদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়ে খারাপ। যেই ইমাম এবং শিক্ষকরা বেতন গ্রহণ করেন, তাদের আগে বেশ্যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন।

তিনি আরও বলেছেন, রাসূল (সা.)এর পর কেবল তিনজনের বাই’আত পূর্ণতা পেয়েছে, বাকী সকলের বাই’আত অপূর্ণ। তিন জন হলেন; শাহ ইসমাঈল শহীদ, মাওলানা ইলিয়াছ ও মাওলানা ইউসূফ। বিশেষ করে সাদ বলেছেন, তাবলিগ না করে কেউ বেহেস্তে যেতে পারবে না।

এদিকে, ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দসহ বাংলাদেশের বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরামও মনে করছেন মাওলানা সাদের এসব বক্তব্য শুধু বিভ্রান্তিকরই নয়, কুরআন-হাদীসের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এসব ভারতের কোনো সম্প্রদায়ের শেখানো কথা। ইসলামের নামে মাওলানা সাদ এখন ভারতের কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। কোনো মুসলমানের জন্য সাদের এসব কথা কখনো জায়েজ হবে না।

এদিকে, দেশের বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরামের তীব্র বিরোধীতার পরও সরকার মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমিত দেয়া নিয়ে এখন বিভিন্ন মহলে সমালোচনা চলছে। তারা বলছেন, দেশের ওলামায়ে কেরাম যেখানে সাদকে চাচ্ছেন না সেখানে সরকার তাকে দেশে ঢুকতে দিলো কেন? এখানে সরকারের স্বার্থ কী? ভারতের ইশারাতেই সরকার সাদকে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে। সরকার দেশে ইন্ডিয়ান ইসলাম কায়েম করতে চায়!

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin