ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে বিএনপির স্মারকলিপি

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজার প্রতিবাদে এবং তার মুক্তির দাবিতে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে বিএনপি।

রোববার বেলা ১১টার দিকে পুরান ঢাকায় অবস্থিত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ স্মারকলিপি জমা দেন ঢাকা জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. সালাহ উদ্দিন স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু অাশফাক, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম পল, রাশেদুল হাসান রাশেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বদি, ঢাকা জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আব্দুর রহমান বাবুল, ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাজী মাসুম, ঢাকা জেলা যুবলের আহ্বায়ক ভিপি নাজিম, যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়ালিদ খান, মহিলাদলের আহ্বায়ক সাবিনা ইয়াসমিন প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

স্মারকলিপি জমা দেওয়া শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা।

উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান। একই মামলায় অন্য আসামি খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বিএনপি কেন গণস্বাক্ষর-মানববন্ধনের পথে?

দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য গত সপ্তাহে মানব বন্ধনের পর শনিবার গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।

বাংলাদেশের দুই প্রধান দলের কাছ থেকে এ ধরনের সাদামাটা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির নজির বিরল, বিশেষ করে ইস্যু যেখানে দলের নেত্রীর মুক্তি। খবর-বিবিসি

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ’ পথে থেকে তারা জনগণকে তাদের আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করতে চাইছেন।

তিনি বলেন, ‘জনগণকে সম্পৃক্ত করারই সত্যিকারের গণতান্ত্রিক আন্দোলন, এবং আমরা এ পথে থেকে সুফল পাচ্ছি। জনগণ এগিয়ে আসছে, সম্পৃক্ত হচ্ছে’।

২০১৪ এর নির্বাচনের আগে-পরে এবং সেই নির্বাচনের প্রথম বার্ষিকীতে বিএনপি যে মাত্রায় সহিংস আন্দোলন করেছে, সে বিবেচনায় তাদের মানববন্ধন বা গণস্বাক্ষরের মত কর্মসূচি বিস্ময় তৈরি করেছে।

সিনিয়র সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, যিনি একসময় খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসাবেও কাজ করেছেন, তিনি বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাবেন এটা বুঝতে পারলেও বিএনপি এক মাস আগে থেকেই রাস্তায় সহিংস আন্দোলনের পথে না যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি গত কয়েক বছরে কিছু ভুল করেছিল। রাস্তায় আন্দোলন করতে গিয়ে নিজেরাও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছিল, অন্য দলের লোকরাও তাতে ইন্ধন যুগিয়েছিল। পরে তাদের ক্ষতি হয়েছে। সেটা হয়তো তারা বুঝতে পেরেছে’।

রিয়াজ আহমেদ বলেন, বিএনপিকে যেমন তাদের নেত্রীকে জেল থেকে বের করতে হবে, সেই সাথে নির্বাচনও করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘তাদের কাছে প্রথম অগ্রাধিকার নির্বাচনের জন্য দল গোছানো। নমনীয় কর্মসূচিতে দলের ভেতর প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে… আমি তো মনে করি বিএনপির জন্য এটা ভালো হচ্ছে’।

রিয়াজ আহমেদ বলেন, রাস্তায় আন্দোলন করতে গেলে পুলিশী নির্যাতন, মামলা মকদ্দমায় পড়ে নির্বাচনের আগে দল গোছানোর কাজ কঠিন হয়ে পড়তো বিএনপির জন্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরীও মনে করেন, বিএনপির রাজনৈতিক কৌশলে বড় ধরণের পরিবর্তন ঘটেছে।

তিনি বলেন, ‘মানুষজন এখন আর হরতাল, বিশৃঙ্খলা পছন্দ করেনা। সেটা বুঝে বিএনপি বাস্তববাদি মনোভাবের পরিচয় দিচ্ছে…মানুষের সহানুভূতিও পাচ্ছে কারণ অধিকাংশ মানুষ মনে করছে খালেদা জিয়ার মামলাটি আসলে নির্বাচনের রাজনীতির মামলা’।

দিলারা চৌধুরী মনে করেন, সেটা প্রধানত নির্ভর করবে সরকারের সদিচ্ছার ওপর।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা ছাড়তে চায়না এবং সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে এমন শক্তিশালী নাগরিক সমাজ এদেশে গড়ে ওঠেনি’।

তিনি বলেন, ‘৮০ শতাংশ জনগণও যদি বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়, তারপরও যতক্ষণ না পর্যন্ত সরকার নাগরিক সমাজের কাছ থেকে অথবা আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে না পড়ছে, ততক্ষণ তারা সুস্থ নির্বাচন দেবে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে’।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin