ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তাবিথ আউয়ালের নাম শোনা গেলেও তা এখন কিছুটা থমকে গেছে। দলের মধ্যে জোরে-শোরে শোনা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বিশেষ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান রিপনের নাম।
ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে জামায়াত নেতা সেলিম উদ্দীন বা বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম, রুমিন ফারহানা কিংবা বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থর নাম শোনা গেলেও এগুলো রাজনীতিতে তাদের ব্যক্তিগত পরিচিতি বাড়ানোর কৌশল বলে মনে করছেন বিএনপিরই কেউ কেউ।
জানা গেছে, দলের মধ্যে তাবিথ আউয়াল এবং ড. আসাদুজ্জামান রিপনকে নিয়ে কথা হচ্ছে। তবে প্যারাডাইস পেপারস ইস্যুতে তাবিথ আউয়াল কিছুটা চাপা পড়ায় এগিয়ে রয়েছেন ড. আসাদুজ্জামান রিপন।
শুক্রবার দিনগত রাতে রিপন নিজেও জাগো নিউজের কাছে মেয়র প্রার্থী হওয়ার আভাস দেন। তিনি জানান, ‘গত বুধবার মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
তবে খালেদা জিয়া এ বিষয়ে কী বলেছেন সে বিষয়ে তিনি এখনই কথা বলতে রাজি হননি। ফলে দলের সঙ্কটকালীন সময়ে বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালনকারী এ নেতাকে ডিএনসিসিতে প্রার্থী করা হবে কিনা তার জন্য শনিবার রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের একটি সূত্র মতে, গত বুধবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে রিপনের এ নিয়ে আলাপ হয়েছে। খালেদা জিয়া আজ শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রিপনকে প্রার্থী করার বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের মতামত জানতে চাইবেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামী ১৮ জানুয়ারি এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৯ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২১ ও ২২ জানুয়ারি এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি এ উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
উৎসঃ জাগোনিউজ
আ.লীগ সরকারের ‘সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতা অনেক বেশি’
আওয়ামী লীগ সরকার গত চার বছরে যেসব কাজ করেছে, সেখানে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতা অনেক বেশি। এই ব্যর্থতা সরকারের পক্ষ থেকে স্বীকার করুক আর নাই করুক, তারা যদি সৎভাবে মূল্যায়ন না করে তাহলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সুশাসনের ক্ষেত্রে অনেক বড় ধরনের বিপর্যয়ের অপেক্ষা করছে আমাদের ।
আওয়ামী লীগ সরকারের ৪ বছরের সফলতা এবং ব্যর্থতা নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল এই কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, সরকারের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতা অনেক বেশি। আর যেসব সাফল্য রয়েছে তা সরকারের একক সাফল্য কিনা, নাকি প্রাইভেট সেক্টর, জনগণের সাফল্য, সেটা নিয়ে কিছুু প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে। যেমন, এই সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক বেড়েছে।
কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে এই চার বছরে কুইক রেন্টালের বিভিন্ন প্রজেক্ট রয়েছে, সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেটা এই অর্জনকে কিছুটা হলেও ম্লান করেছে। আবার গত চার বছরে আমাদের দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকা মানুষের সংখ্যা কমেছে। কিন্তু একি সাথে ধনী-গরিবের মধ্যে সম্পদের ব্যবধানও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত চার বছরে আমাদের জিডিপি বেড়েছে।
এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এই যে, আমাদের জিডিপি বেড়েছে, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে, এটা সরকারের কোনো অবদান না। এটা বৃহত্তর অর্থে প্রাইভেট সেক্টরের অবদান। প্রতিটা ক্ষেত্রেই কর্মসংস্থান, জিডিপি, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এগুলো আমাদের বেসরকারি খাতের ব্যাপক সাফল্যের প্রতিফলন। যেমন: পোশাক রপ্তানিতে আমরা এখন পৃথিবীতে দ্বিতীয় দেশ।
গার্মেন্টস সেক্টর তো পুরোপুরি প্রাইভেট সেক্টর। আবার বিদেশ থেকে যারা রেমিটেন্স পাঠায়, এটাও তো পুরোপুরি প্রাইভেট সেক্টর। রেমিটেন্স যারা পাঠায় তাদের সাফল্য, গার্মেন্টস ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তাদের সাফল্য, কৃষি ক্ষেত্রের সাফল্য।
কৃষি ক্ষেত্র বাদ দিলে বাকি যে তিনটা সেক্টর আছে এর সিংহভাগ ব্যক্তির বা প্রাইভেট সেক্টরের অবদান। এখানে সরকার প্রতিনিয়ত বলে আমাদের জিডিপি বেড়েছে জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়েছে কিন্তু এর অবদান তো প্রাইভেট সেক্টরের।
তিনি বলেন, সরকারি সেক্টরগুলোতে যদি দুর্নীতি কম করত তাহলে সরকারি ব্যাংক, সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি শিল্প, সরকারি রেগুলারিটিগুলোতে আমাদের প্রবৃদ্ধি আরও বৃদ্ধি পেত। আমাদের জীবনযাত্রার মান আরও উন্নত হতো। কাজেই যে সাফল্য সরকার ব্যাপকভাবে প্রচার করে, এটা প্রধানত ব্যক্তি খাতের সাফল্য। এখানে সরকার যদি প্রাইভেট সেক্টরগুলোতে দুর্নীতিমুক্ত ভাবে, বাধাহীন ভাবে কাজ করতে দিত, উৎসাহ দিত তাহলে আরও উন্নতি হত।
তিনি বলেন, আর ব্যর্থতা যেটা, সেটাতো বহুল উচ্চারিত। সরকার কয়েকটা ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এই চার বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, আমাদের শিক্ষার মেরুদ- অনেকাংশে ভেঙে পরেছে। যে কোনো পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, নকল, তারপর ভালো ফলাফল দেখানোর জন্য একটা ইনসেন্টিপ রেজাল্ট, এগুলো আমাদের জীবনে একটা খুব খারাপ প্রভাব রাখবে আগামী দিনে।
ব্যাংকিং সেক্টরে নৈরাজ্য আকাশ ছোঁয়া পর্যায়ে চলে গেছে। অবিশ্বাস্য সব কা- ঘটেছে জনগণের রেখে দেওয়া টাকা নিয়ে। ব্যাংকের পরিচালক অনেকেরই রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবে পরিচিত ব্যক্তিদের সংযোগ রয়েছে। জনগণের টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে।
কোনো বিচার হচ্ছে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক তো আছেই, প্রাইভেট ব্যাংক দখলের ঘটনাও ঘটছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা লোপাট করে দেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে যেই খারাপ পরিস্থিতি ছিল, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-। তার পরে ভুয়া মামলা দিয়ে ভিন্নমতের অধিকারী যারা আছে বা সরকারবিরোধী যারা আছে, তাদেরকে হয়রানি করা অব্যাহত রয়েছে।
তারপর চাকরির ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, নিজের দলের লোকদের, নির্দিষ্ট কোনো জেলার লোকদের চাকরি দেওয়া এই ধরনের খারাপ প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। কাজেই গত চার বছরে যে সাফল্য আসছে, তার চেয়ে ব্যর্থতা অনেক বেশি বলে আমি মনে করি।
আস