জোবায়েদা নয় ঢাকায় আসছে শর্মিলা

বেগম জিয়ার কারা জীবন দীর্ঘ হলে জোবায়েদা রহমান নন শর্মিলা রহমান দেশে আসবেন। শর্মিলা রহমান বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী। তাঁর ডাক নাম সিথি। কোকো মারা যাবার পর সিথি তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে মালয়েশিয়া থেকে লন্ডনে চলে যান। এখন তারা লন্ডনেই বসবাস করছেন।

তবে দেশে এসে শর্মিলা রহমান বিএনপির রাজনীতির হাল ধরবেন না। তিনি গুলশানের বাসভবন দেখভাল করবেন। গত বৃহস্পতিবার শর্মিলার মা মোখলেসা রেজা বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এই প্রস্তাব দেন। বেগম জিয়াও এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন বলেই জানা গেছে। সেক্ষেত্রে তারা হাইকোর্টে জামিনের আবেদনের পর সরকার বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে নতুন কোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় কিনা সে পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।

বৃহস্পতিবার কোকোর শাশুড়ি ছাড়াও, শামীম ইস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, ভাগিনা সাজিদ ইসলাম, শাহরিয়ার আখতার ও ভাতিজা আল মামুন বেগম জিয়ার সঙ্গে জেলখানায় সাক্ষাৎ করেন। তারা কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেল নি।

তবে, ব্যক্তিগত আলাপে তারা জানিয়েছেন যে, বেগম জিয়ার ধারণা তাঁকে হয়তো সরকার দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখার কৌশল নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি এবং গুলশানের বাসভবন নিয়ে বেগম জিয়া কিছুটা চিন্তিত বলে জানা গেছে। তবে শর্মিলাকে তিনি ( বেগম জিয়া) রাজনীতির ভেতর আনতে চান না। বেগম জিয়া তাঁর আত্মীয়দের বলেছেন, ‘তারেকই দল চালাক।’

বাংলা ইনসাইডার

বেগম জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের মৃত্যু?

বেগম জিয়ার জেলে যাবার এক সপ্তাহ পর রাজনীতিতে প্রধান প্রশ্ন হলো, তাঁর রাজনৈতিক জীবনের ভবিষ্যৎ কি? বেগম জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের কি পরিসমাপ্তি ঘটল? ৭৩ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী কি আর নির্বাচন করতে পারবেন?

এসব প্রশ্নের উত্তরে যদিও বিএনপি নেতারা ইনিয়ে বিনিয়ে বলছে, বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন শেষ নয় বরং পুণরুত্থান ঘটেছে। বিএনপি নেতারা এটাও বেশ জোর গলায় বলছে যে, বেগম জিয়া অবশ্যই আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন। কিন্তু বাইরে যাই বলুক, দিন যত যাচ্ছে ততই তাদের আশাবাদ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।

এর আগেই বিএনপির মধ্যে আলোচনা ছিল, এটাই হবে তাঁর শেষ নির্বাচন। এই নির্বাচনের পর দলের দায়িত্ব তারেক জিয়ার হাতে তুলে দেওয়ার একটা জোড়ালো মত বিএনপির মধ্যেই প্রবল। এখন এই মামলাও (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা) দণ্ডিত হবার পর বেগম জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কি না, সে এক বড় প্রশ্ন। এ নিয়ে প্রতিদিন নিত্য নতুন বক্তব্য শুনছি।

কিন্তু কেউই বলছেন না, হাইকোর্টে যদি দণ্ড বহাল থাকে তাহলে কী হবে? কারণ নির্বাচনের এখনো আছে ১০ মাস। এধরনের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ যদি সরকার নেয় তাহলে চার থেকে পাঁচ মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। হাইকোর্ট যদি বেগম জিয়ার দণ্ড বহাল রাখে তাহলে, আপিল বিভাগ কি তাঁর দণ্ড স্থগিত করবে? তাঁকে নির্বাচনের যোগ্য ঘোষণা করবে?

তাছাড়া হাই কোর্টের রায়ে যদি বেগম জিয়ার দণ্ড বহাল থাকে সেক্ষেত্রে সরকার দ্রুত আপিল বিভাগেও মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য নিয়ে যেতে চাইবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেছে, নির্বাচনের আগে তারা এই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে চায়।

শেষ পর্যন্ত যদি, এই মামলা আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়ায় এবং বেগম জিয়ার বর্তমানে সাজা যদি বহাল থাকে তাহলে সংবিধানের ৬৬ (২) এর (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি দণ্ডিত সময় পাঁচ বছর এবং মুক্তি লাভের পর পাঁচ বছর অর্থাৎ মোট ১০ বছরের জন্য নির্বাচনের অযোগ্য হবেন।

এই ধারায় বলা হয়েছে, ‘নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অনূন্য দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হইয়া থাকে।’ অর্থাৎ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তো নয়ই ২০২৩ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতাও তিনি হারাবেন। এরপর নির্বাচন এবং রাজনীতি করার মত কতটুকু শারীরিক এবং মানসিক শক্তি তাঁর থাকবে?

এবার আসা যাক জেল প্রসঙ্গে। জিয়া অরফানেজ মামলা রায়ের আগে বিএনপির আইনজীবিরা বলেছিল, ৪/৫ দিনের মধ্যেই বেগম জিয়ার জামিন সম্ভব। কিন্ত ৭দিন অতিবাহিত হওয়ার পর বেগম জিয়ার আইনজীবীরা মামলার রায়ের সত্যায়িত কপিই জোগাড় করতে পারেননি। কিন্ত সেটা মূল বিষয় নয়। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে ৩৪টি মামলা।

বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘মামলা চালাতেই সারাজীবন চলে যাবে।’ মামলাগুলোর চূড়ান্ত রায় আর গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জালে কারাগারে বেগম জিয়াকে হয়তো দীর্ঘদিন থাকতে হবে। তখন কি বেগম জিয়া আর রাজনীতি করার মানসিক শক্তি পাবেন? তাই অনেকের ধারণা কারাজীবনের মধ্যে দিয়ে হয়তো বেগম জিয়ার রাজনেতিক জীবনের মৃত্যু হলো।

বাংলা ইনসাইডার

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin