al_photo

জোট প্রার্থীদের সম্ভাবনা যাচাই করছে আওয়ামী লীগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র চার মাস। এ নির্বাচন ঘিরে দুই ধরনের প্রস্তুতি চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে মহাজোট আর না নিলে ১৪-দলীয় জোটগতভাবেই অংশ নেবে ক্ষমতাসীন দলটি। এজন্য এখন থেকে চলছে জোট-মহাজোটের প্রার্থীর সম্ভাব্যতা যাচাই। জাতীয় পার্টিসহ ১৪-দলীয় শরিক দলের নেতারা তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি খসড়া তালিকা জোটের প্রধান দলের কাছে জমা দিয়েছেন।

জোটের প্রধান দলের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের সাড়া পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, অক্টোবরের শেষ নাগাদ এ বিষয়ে দফারফা করা হবে। এদিকে ইসলামী দলগুলোও এখন আওয়ামী লীগের জোটে ভিড়ে ক্ষমতার ভাগীদার হতে তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা সরাসরি আওয়ামী লীগে যোগ না দিলেও প্রধান মিত্র জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে এরশাদকে ‘ইমামতির’ দায়িত্ব দিয়েছেন।

২০০৮ সালের মতো এবারও মহাজোটেই ভোটযুদ্ধে নামবে আওয়ামী লীগ। সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এজন্য দলের পক্ষ থেকে তৎপরতাও চালানো হচ্ছে। দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইতিমধ্যে জোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দল সিপিবি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, এলডিপি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাসদসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে এক বা একাধিকবার বৈঠক ও ফোনে কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে।

তবে জোট গঠনের ব্যাপারে সিপিবি আওয়ামী লীগকে জানিয়েছে, তারা আলাদাভাবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো জোটে না এলেও এবার নির্বাচনে অংশ নেবে— এমনটাই জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে যে ভুল করেছিল এবার তা করবে না।

যে কোনো ফরমেটে এবার তারা অংশ নেবে। সে কারণে এবারের নির্বাচন হবে আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জিং। সে কারণে ২০০৮ সালের মতো এবারও মহাজোটগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মহাজোটে থেকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ১৪-দলীয় জোটের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ (আম্বিয়া), তরিকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ, জাতীয় পার্টি-জেপিসহ জোটের অধিকাংশ দলই তালিকা তৈরি করে আওয়ামী লীগের কাছে জমা দিয়েছে।

আবার কিছু দল সেপ্টেম্বর মাসে জমা দেবে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ শরিকদের প্রস্তাব সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গেই বিবেচনায় রাখছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন  ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা মহাজোটগতভাবেই অংশ নেব। ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঘোষণা দিয়েছেন তারা আমাদের সঙ্গে থেকেই নির্বাচনে যাবেন।’

তিনি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এক থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করে দেশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব। এজন্য আমাদের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।’ আসন ভাগাভাগি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি নিয়ে আমরা এখনো ফাইনাল কোনো ডিসিশন নিইনি। তবে আমাদের দলের ও জোটের প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। যেখানে যাকে দিয়ে জয়লাভ সম্ভব সেখানে তাকেই প্রার্থী করা হবে। অর্থাৎ আমরা উইনএবল প্রার্থী দেব।’

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে এক রকম আর না করলে আরেক রকম নির্বাচনী কৌশল অবলম্বন করবে জাতীয় পার্টি। আমাদের দল বিগত সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি শক্তিশালী ও জনপ্রিয়। আগামী নির্বাচনের জন্য ক্লিন ইমেজের  একটি সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ইতিমধ্যে পার্টি চেয়ারম্যান তৈরি করেছেন। মহাজোট নির্বাচন করলে আমরা অনেক আসনেই ছাড় পাব বলে আশাবাদী— বললেন বাবলু।

এ ব্যাপারে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের মনোনয়ন বোর্ড একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর পলিটব্যুরোর বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জোটগত ও এককভাবে নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের সম্ভাব্যতা খুঁজে দেখছি।’ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (আম্বিয়া) সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দলের যেসব এলাকায় শক্তিশালী সাংগঠনিক শক্তি আছে, সেসব এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা জোট প্রধান আওয়ামী লীগের কাছে জমা দিয়েছি।

আওয়ামী লীগ থেকে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি। আশা করি আগামী সেপ্টেম্বরে ফয়সালা হবে।’  তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউর হক চাঁদপুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের ৩০ জন প্রার্থী এবার জোটগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ তালিকা আমরা জমা দিয়েছি। আমরা জোটে আছি, জোটেই নির্বাচনে অংশ নেব।’ গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ডা. সহিদুল্লাহ শিকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে অটুট রাখতে হলে ১৪-দলীয় জোটের ঐক্যের বিকল্প নেই।

আমরা ঐক্য ছিলাম, আছি-আগামীতেও ঐক্যবদ্ধ থেকে জোটগতভাবে নির্বাচন করে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিকে নির্বাচনে পরাজিত করে মুুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে এগিয়ে নেব। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৫ জন প্রার্থীর তালিকা তৈরি করেছি। জোটের কাছে কমপক্ষে ১০টি আসন চাই।’

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin