khaleda_zia

জেল নাকি খালাস?

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসেই এ মামলার শুনানি শেষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে খালেদা জিয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চেয়েছে।

খালেদা জিয়ার পক্ষে তার দুই আইনজীবীর যুক্তি উপস্থাপনের পর তৃতীয় আইনজীবী আদালতে বক্তব্য দিচ্ছেন। যেভাবে মামলার যুক্তিতর্কের তারিখ নির্ধারণ হচ্ছে ও শুনানি চলছে, আদালতপাড়ায় এখন একটাই প্রশ্ন— খালেদা জিয়ার জেল হবে কবে?

তবে আইনজ্ঞরা বলছেন, শুনানি শেষে কী রায় হবে এবং কবে হবে তা একমাত্র আদালতই ভালো জানে। উল্লেখ্য, মাত্র এক কর্মদিবসে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করার পর পাঁচ কর্মদিবসে খালেদা জিয়ার দুই আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন করেছেন।

বর্তমানে আরেকজন আইনজীবী বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছেন। আরও দুই আইনজীবী খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করবেন বলে জানা গেছে। আজ ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এ মামলার শুনানির জন্য ধার্য করছে আদালত। এভাবে শুনানি অব্যাহত থাকলে জানুয়ারির মাঝামাঝিতেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা শেষ হলেই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হবে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার।

এ দুটি মামলার রায় একসঙ্গে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি অনুমান আইন বিশেষজ্ঞদের। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ১৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শেষ করার পরদিন থেকে আসামি খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন করছেন। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেওয়া খালেদা জিয়ার লিখিত বক্তব্য ২১ ডিসেম্বর আদালতে দাখিল করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আমরা আমাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছি। বর্তমানে আসামিপক্ষ তাদের যুক্তি তুলে ধরছে। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলেই রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করবে আদালত।

তিনি বলেন, যেভাবে মামলার কার্যক্রম চলছে তাতে মনে হচ্ছে খুব শিগগিরই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হবে। কাজল বলেন, এ মামলায় আসামিপক্ষ পর্যাপ্ত সময় নিয়েছে। আমরা চাই তারা অযথা সময় নষ্ট না করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করবে।

কবে নাগাদ রায় হতে পারে— এমন প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী কাজল বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম প্রায় শেষ। তবে রায় কবে হবে তা একমাত্র আদালতই জানে। রায় কী হতে পারে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রায় কী হবে তাও আদালতের একান্ত বিষয়।

তবে আমরা যেভাবে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছি, তাতে আমরা মনে করি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। তাই সব আসামিরই সর্বোচ্চ সাজা হবে বলেই আশা করি। এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খালেদা জিয়া তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী সপ্তাহে দু-তিন দিন আদালতে গিয়ে হাজিরা দেন। প্রতি সপ্তাহে যেভাবে তাকে (খালেদা জিয়া) আদালতে গিয়ে হাজিরা দিতে হচ্ছে এতে তার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। খালেদা জিয়া বর্তমান সরকার ও দুদকের হয়রানির শিকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মামলার রায় কী আশা করেন— এমন প্রশ্নের জবাবে খোকন বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) কোনো দুর্নীতি করেননি। সরকার যদি মামলা প্রভাবিত না করে তাহলে খালেদা জিয়া খালাস পাবেন। আর জোর করে কোনো রায় দিলে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।

খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইমতিয়াজ আহমেদ কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রথম দিকে খালেদা জিয়ার মামলা দুটি ধীরগতিতে চললেও শেষের দিকে গতি বেড়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ খালেদা জিয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চেয়েছে। রায় কী হবে তা একমাত্র আদালতই বলতে পারবে।

তবে মামলার কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে খালেদা জিয়ার সাজাই হবে। খালেদা জিয়ার মামলার রায় ও রায়ে জেল কবে হচ্ছে? এমন প্রশ্ন করেন এই আইনজীবী। খালেদা জিয়ার পক্ষে ইতিমধ্যে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান ও খন্দকার মাহবুব হোসেন।

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী বর্তমানে তার যুক্তি তুলে ধরছেন। এ ছাড়া ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও খালেদা জিয়ার পক্ষে তাদের যুক্তি তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে।

এর আগে ১৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল তার যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড চেয়েছেন।

এ ছাড়া অন্য আসামিদের সাত বছরের কারাদণ্ডের আবেদন জানান আইনজীবী কাজল। এতিমদের জন্য জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি করে দুদক।

উৎসঃ   বিডি-প্রতিদিন

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin