জেরুজালেম ইস্যু; বাংলাদেশের শীর্ষ আলেম ও রাজনীতিবিদরা যা বললেন

জেরুজালেমকে ইসরাইলেরে রাজধানী ঘোষণা করার প্রতিবাদে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশের শীর্ষ আলেম ও ইসলামিক নেতৃবৃন্দ।

তারা এ সিদ্ধান্তকে অন্যায় হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানান।

অধিকাংশা ইসলামি দলই আজ ও আগামীকাল এ অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মিছিলসহ বিক্ষোভ কর্মসূচির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।

ইসলামি দলের নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, এতে ইসরাইলের বৈধতা প্রমাণিত হবে না বরং পৃথিবীব্যাপী মুসলিম উম্মাহ আবারও ইন্তিফাদা আন্দোলনের সূচনা করবে এবং ইসরাইল আরও বেশি কোণঠাসা হবে।

সারা বিশ্বের মতামত ও হুমকি উপেক্ষা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘোষণা দেয়ায় ফিলিস্তিনের চেয়ে ইসরাইল রাজনৈতিকভাব বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

ইসলামি দলগুলো এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের স্পষ্ট বক্তব্যও দাবি করেছে। তাদের মতে বাংলাদেশসহ মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রগুলোকে জেরুজালেমে মুসলিম জনগণের অধিকারের ব্যাপারে অনেক বেশি সোচ্চার হতে হবে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি আল্লামা আব্দুল মোমিন শায়খে ইমামবাড়ী বলেন, মুসলমানদের প্রথম ক্বেবলা পবিত্র মসজিদুল আকসাকে ঘিরে গড়ে ওঠা জেরুসালেম নগরী ফিলিস্তিনীদেরই ভূমি। মার্কিন প্রেসেডিন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন, এটা অবৈধ এবং অন্যায়।

তিনি আরও বলেন, এই সিদ্ধান্তে শুধু মুসলিমরাই হতাশ হয়নি, বরং বিশ্ব বিশ্বের শান্তিকামী সকলেই আঘাত পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই অন্যায় ঘোষণায় বিশ্বের দেশে দেশে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

শায়খ আবদুল মোমেন দাবি করেন, মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা করেই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিশ্বের মুসলিম জনগণ এ সিদ্ধান্ত মেনে নিবে না।’

তিনি মনে করেন বাংলার ধর্মপ্রাণ মুসলমান এ ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তার অপকর্মের জন্য নিজ দেশে ইতিমধ্যে ঘৃণিত ও ধিক্কৃত। তার সিদ্ধান্তের কারণে এখন সারা বিশ্বের মানুষ তাকে ধিক্বার জানাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। মুসলমানের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে এ অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া হবে না।’

মুফতি রেজাউল করিম মনে করেন, ‘মুসলিম বিশ্বের অনৈক্য ও আরব শাসকদের ব্যর্থতার কারণেই আজকের এ দুঃসাহস দেখানোর সুযোগ পেয়েছে ইসরাইল। আর মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ হলেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।’

জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার প্রতিবাদে আজ বিকেলে প্রতিবাদ মিছিল করবে ইসলামী ঐক্যজোট।

দলের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, ‘ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও জাতিসংঘের ঘোষণার পরিপন্থী। আন্তর্জাতিক মহল এ সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরাও তা প্রত্যাখান করছি।’

এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও ফিলিস্তিনি মুসলমানের অধিকার প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত ইসলামী ঐক্যজোট তার প্রতিবাদ ও আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।

খেলাফত মজলিসের আমির ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ট্রাম্পের এ ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা এ সিদ্ধান্ত মানি না, ও মানবো না। কোনো মুসলমান এ সিদ্ধান্ত মানতে পারে না। খেলাফত মজলিস পক্ষ থেকে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।’

বায়তুল মুকাদ্দাসে মুসলমানের অধিকার ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী জেরুজালেম মুসলমানের। রক্তের বিনিময়ে হলেও মুসলমান তাদের অধিকার রক্ষা করবে। খেলাফত আন্দোলন এ ব্যাপারে রাজপথে প্রতিবাদ জানাবে বলে জানান প্রবীণ এ নেতা।

খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ বিন হাফেজ্জি নিজের অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমার হার্টে সার্জারি হয়েছে। আমি খুব অসুস্থ। তবুও আমি সিদ্ধান্ত প্রতিবাদ করছি। আমি আমার দলের নেতৃত্বকে ডেকেছি।

তিনি বলেন, আমরা রাজপথে প্রতিবাদ জানাবো এবং প্রয়োজন হলে আমি নিজে রাজপথে নামবো। কিন্তু জেরুলামের উপর মুসলমানের অধিকার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

উৎসঃ   ourislam24

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin