জামাতের না

তারেক জিয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরা। যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরা জানিয়ে দিলো, বেগম জিয়া দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত হলে, তাঁরা আন্দোলন তো দূরের কথা কোনো বিবৃতিও দেবে না।

শুক্রবার লন্ডনে তারেক জিয়া বৈঠক করেছেন তিন যুদ্ধাপরাধীর সন্তানের সঙ্গে। যুদ্ধাপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত এবং কারাগারে মৃত গোলাম আযমের সন্তান, যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত মতিউর রহমান নিজামীর এবং আলী আহসান মুজাহিদের সন্তানদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই তিনজনই মূলত: বাংলাদেশের জামাত পরিচালনা করেন। এরাই জামাতের থিংক ট্যাংক।

এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি রায় নিয়ে ২০ দলের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বেগম জিয়া। সে সময় জামাত নেতৃবৃন্দ বলেছিল, ‘দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’ এরপর লন্ডেনে তারেক জামাতের থিংক ট্যাংকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিন যুদ্ধাপরাধীর সন্তানই বলেছেন, ‘আমাদের পিতাকে যখন সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছিল, তখন বিএনপি কোথায় ছিল? একটা বিবৃতির জন্য আমরা তো আপনাদের পা পর্যন্ত ধরেছিলাম। কিন্তু আপনারা আমাদের হরতালে সমর্থন দেন নি। একটু সহানুভূতিও জানাননি। এখন কেন চাইছেন?’ বেগম জিয়ার রায় নিয়ে আন্দেলনে তাই আপাতত: জামাত থাকছে না।

বাংলা ইনসাইডার/

হাত তুলে ওয়াদা করিয়েও ডুবন্ত নৌকা ভাসানো যাবে না: খালেদা জিয়া

বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ বলছে নির্বাচন হবে ডিসেম্বরে। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে এত আগে প্রচারের কারণ কী? নৌকা এমন ডোবা ডুবছে, যে তোলার জন্য এত আগে ভোট চাইতে হচ্ছে? হাত তুলে ওয়াদা করাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, হাত তুলে ওয়াদা করিয়েও ডুবন্ত নৌকা ভাসানো যাবে না।’

শনিবার দুপুরে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উদ্বোধনী পর্বে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘বিএনপির কোনো ভয় নেই। বিএনপির সঙ্গে প্রশাসন আছে, পুলিশ আছে, সশস্ত্র বাহিনী আছে। এ দেশের জনগণ আছে। দেশের বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁরা আছেন। কাজেই বিএনপির কোনো ভয় নেই, ভয়টা আওয়ামী লীগের।’

এসময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারের তীব্র সমালোচনা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

এর আগে ১১টা ৩৮ মিনিটে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ধারণকৃত একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়।

জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় খালেদা জিয়া বলেন, সরকার প্রশাসনকে দলীয় নেতাকর্মীদের মতো ব্যবহার করছে। তারা মনে করে, প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়া যায়। কিন্তু প্রশাসন যদি একটু সুযোগ পায়, তাহলে তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। কেননা, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তিনি আরও বলেন, পুলিশকে বাধ্য করা হচ্ছে অন্যায় ও দলীয় কাজ করতে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘গুম, খুনের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ জেগে উঠবে, ২০ দল জেগে উঠবে। সকল রাজনৈতিক দলকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানাই। আজ দেশের এই অবস্থায় জাতীয় ঐক্য অনেক বেশি প্রয়োজন। আমরা কে কী পেলাম, সেটা বড় কথা নয়। আমাদের পাওয়া ওটাই হবে, যদি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে দেশটাকে রক্ষা করতে পারি, তবে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় পাওয়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ দেশ জাগবে, জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠবে। সকলেই আমরা দেশ গড়ে তুলব। দেশ গড়ার জন্য অনেক লোকের প্রয়োজন হবে। সেখানে আজ যারা জুলুম-অত্যাচার করছে, তাদের সবাইকে মাফ করে দিয়েছি। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না, তাদেরও সঙ্গে নিতে আমরা কোনো দ্বিধা করব না।’

খালেদা জিয়া নেতা-কর্মীদের বলেন, ‘সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। বহু সংকট আসবে, ষড়যন্ত্র হবে এবং নানা রকমভাবে ভয়ভীতি দেখাবার চেষ্টা করবে, কিন্তু আমরা ভয়ে ভিতু নই।’

বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘যারা সকল আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল, যারা কাজ করেছে, যারা দলের সঙ্গে বেইমানি করেনি, দলে তাদের ভালো ভালো জায়গায় অবস্থান দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়, তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অবশ্যই তারা মূল্যায়ন পাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু যারা বেইমানি করবে, এক পা এদিকে, আরেক পা ওদিকে রাখবে, তাদের কোনো মূল্যায়নের জায়গা নেই।’

আগে ক্ষমা করার উদাহরণ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তারপরও আমরা কিন্তু ক্ষমা করেছি। ক্ষমা একবার হয়, বারবার হয় না। তাই আমি বলতে চাই, বিপদ আসলে আসুন সকলে একসঙ্গে বিপদ মোকাবিলা করব। আর সুদিন আসলে একসঙ্গে সুন্দর করে দেশ গড়ব।’

খালদো জিয়া বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিকাল চলছে। আমরা এখানে সভা করতে চাইনি। ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, সোহরাওয়ার্দী ছিল, কিন্তু কেন সভা করতে দেওয়া হলো না। বিএনপি সবচেয়ে বড় দল। তারপরও বলবেন দেশে গণতন্ত্র আছে?’ তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল আইনের নামে নতুন কালাকানুন করা হচ্ছে। সাংবাদিকেরা সত্য কথা বলেন। সেই কথাগুলো যখন মানুষ শোনে, তখন জনগণের অধিকার হরণ করতে নতুন আইন করা হচ্ছে।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত বলছেন নিম্ন আদালত সরকারের কবজায়। পত্রিকায় যা দেখছি, তাতে বোঝা যাচ্ছে, সঠিক রায় দেওয়ার সুযোগ নেই। সঠিক রায় দিলে কী পরিণতি হয়, তা তো দেখেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারেক রহমানের রায় দেওয়ার পর বিচারককে দেশ ছাড়তে হয়েছে। অপরাধ নেই। সেখানে কীসের বিচার হবে। কিন্তু তারা জোর করে বিচার করতে চায়।’

খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সময় মিলনায়তনে উপস্থিত নির্বাহী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার নামে স্লোগান দেন। নেতারা স্লোগানে বলেন, ‘আমার নেত্রী আমার মা, বন্দী হতে দেব না।’ ‘আমার নেত্রী আমার মা, জেলে যেতে দেব না।’

বক্তব্যের শেষে এসে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না কেন, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আমাকে কোনো ভয়ভীতি দেখিয়ে দমাতে পারেনি, পারবেও না। আমি দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আছি, দেশের মানুষের সঙ্গে আছি । খালেদা জিয়া বলেন, ‘সাহস সঞ্চার করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আসুন, সবাই এই দেশটাকে রক্ষা করি, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনি।’

উদ্বোধনী পর্বে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া দলের পক্ষ থেকে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন যুগ্ম মহাসচিব মাহাবুব উদ্দিন খোকন। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় প্রয়াত নেতাদের পাশাপাশি শিক্ষাবিদ-শিল্পী-সাহিত্যিকসহ বিশিষ্টজনদের স্মরণ করে দেওয়া শোকপ্রস্তাবটি গৃহীত হয়।

Check Also

জাতীয় সরকার নিয়ে হঠাৎ আলোচনা কেন?

প্রথমে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Share
Pin